× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দিল্লির মৃত্যুপুরীতে শোকের কাতারে এক হিন্দু-মুসলিম

এক্সক্লুসিভ

মানবজমিন ডেস্ক
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার

ভয়াবহ এক সপ্তাহ পার করেছে দিল্লিবাসী। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে শুরু হওয়া সংঘর্ষ রূপ নিয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের উস্কানিতে মুসলিমদের বাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, দোকানে হামলা চালিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। গতকাল পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে। দিল্লির ইতিহাসে এমন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বিরল। এতে মুসলিমরা যেমন ক্ষতির শিকার হয়েছেন, তেমনি প্রাণ হারিয়েছেন অনেক হিন্দুও। খালি হয়ে গেছে কত মায়ের বুক। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৫ জন।
আহত হয়েছেন প্রায় ২০০। কিন্তু দাঙ্গা শেষে শহরে যখন নেমে এসেছে কালো নীরবতা, তখন দুই পক্ষেই শোকের হাওয়া সমতালে বইছে। দুই পক্ষকেই সইতে হয়েছে ছেলে-ভাই-বন্ধু হারানোর বেদনা। অনেকে দিল্লির সহিংসতার সঙ্গে গত শতকের শিখ দাঙ্গার তুলনা করেছেন। কেউ টেনে এনেছেন গুজরাটে ২০০২ সালের দাঙ্গার কথা। কিন্তু দিল্লির ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ভিন্ন। এ শহরে মুসলিম জনসংখ্যা মাত্র ১২ শতাংশ। দ্য প্রিন্ট অনুসারে, সাম্প্রতিক এই দাঙ্গা মূলত রাজনৈতিক উস্কানির ফল। হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের জড়িত থাকার ভিডিও ফুটেজ, কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও অবহেলা সেদিকেই ইঙ্গিত করে। এতে ক্ষতির পরিমাণ মুসলিমদের বেশি। এমন একজন হচ্ছেন, সাদ্দার উদ্দিন। তার ৩২ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ ফুরকান দাঙ্গার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। কারদাম পুরি এলাকায় হিন্দুত্ববাদীদের হাতে খুন হয়েছে। গুরু তেজ বাহাদুর হাসপাতালে ছেলের লাশ নিতে অপেক্ষা করছিলেন সাদ্দার। তার মতো এমন আরো কয়েক ডজন মানুষ স্বজনদের লাশ নিতে বা খোঁজ নিতে অপেক্ষারত ছিলেন।

সাদ্দার তার ছেলের লাশ পান বুধবার বিকাল ৩টার দিকে। তিনি অভিযোগ করেন, তার পরিবারের হস্তশিল্পের ব্যবসা রয়েছে। পারিবারিক ব্যবসা দেখতো ফুরকান। গত সোমবার হিন্দু দাঙ্গাকারীরা বিকাল ৪টার দিকে তাকে বাড়ি থেকে অল্প দূরে গুলি করে হত্যা করে। তার পায়ে ও তলপেটে গুলি করা হয়। নিজের দুই সন্তানের জন্য খাবার আনতে গিয়ে খুন হন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সাদ্দার জানান, গুলি করার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ফুরকান। সে অবস্থায় তাকে লাঠি দিয়ে পেটায় দাঙ্গাকারীরা। প্রায় আধাঘণ্টার মতো সেখানেই পড়ে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি তাকে।

‘এই হিন্দু-মুসলিম রাজনীতিতে আমরা এক ভাই হারিয়েছি ’
রাহুল সোলাঙ্কি একটি মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। ২৬ বছর বয়সী এই যুবক পরিবারের বড় ছেলে ছিলেন। গত সোমবার কেনাকাটা করে বাড়ি যাবার সময় মুসলিম দাঙ্গাকারীদের গুলিতে মৃত্যু হয় তার। তার ছোট ভাই রোহিত সোলাঙ্কি জানান, তাকে ঘাড়ে গুলি করা হয়েছিল। রোহিত বলেন, আমার ভাই দুধ কিনতে গিয়ে মুসলিম দাঙ্গাকারীদের হাতে খুন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সোমবার বিকাল থেকেই এলাকায় পরিবেশ অশান্ত ছিল। বাবা দুপুর ২টার দিকে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে এলাকা ঘুরে দেখে যাওয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলেন। সতর্ক করেছিলেন যে, দাঙ্গা হতে পারে। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। তারা যথাসময়ে আসলে আমার ভাই হয়তো আজ বেঁচে থাকতো।

রোহিত বলেন, তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরতলী মুস্তফাবাদের বাসিন্দা। সারা জীবনে কখনোই এমন পরিস্থিতি দেখেননি তারা। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় কখনোই হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখিনি। আমরা সবসময়ই মিলেমিশে থেকেছি। এটা হলফ করে বলতে পারবো যে, দাঙ্গাকারী মুসলিমরা স্থানীয় ছিলেন না। তারা বাইরের লোক ছিল।

বুধবার রাহুলের লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বন্ধুরা নিথর ওই দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এমন এক বন্ধু ছিলেন মোহাম্মদ শাহবাজ আলম। ক্রন্দনরত অবস্থায় নিজের বন্ধুকে জড়িয়ে তিনি বলেন, আমরা কেবল সহকর্মী ছিলাম না। আমরা একটা পরিবার ছিলাম। তার অপর এক বন্ধু বিকাশ বলেন, এই হিন্দু-মুসলিম রাজনীতিতে আজ আমরা একটি ভাই হারিয়েছি। (আল জাজিরা অবলম্বনে)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর