× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিয়ানীবাজার হাসপাতালে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ

বাংলারজমিন

মিলাদ জয়নুল, বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার

 হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘ সাত বছর থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাবার সরবরাহের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০বার সময় বর্ধিত করে একাই খাবার সরবরাহ করছেন সঞ্জিব কর নামের জনৈক ব্যক্তি। সর্বশেষ গত বছরের ১৭ই জুন পুনরায় আরো এক বছরের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন তিনি। চলতি বছরের জুনে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হতে পারে।
আর এই সুযোগে কোন তদারকি না থাকায় রোগীদের মাঝে তিনি নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারীভাবে সরবরাহ করা সকালের নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার এতোই নিম্নমানের যে এগুলো খেয়ে রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাছাড়া রোগীদের খাবার যে রান্নাঘরে তৈরি করা হয় তার অবস্থাও চরম অস্বাস্থ্যকর। গত কয়েক বছর থেকে এ অবস্থা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্টদের তাতে কোন গরজ নেই।
জানা যায়, ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশির ভাগ আবাসিক রোগী মহিলা ও শিশু।
সিলেট জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি ভালো মানের সেবা দেয়ায় এখানে রোগীর সংখ্যা বেশি। একাধিকবার হাসপাতালটি জাতীয় পুরস্কারও লাভ করেছে। বিশেষ করে সিজারিয়ান অপারেশনে সফলতার কারণে দেশব্যাপী সাড়া ফেলেছে এ প্রতিষ্ঠান। সেবার মান নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারো বড় ধরনের কোন অভিযোগ নেই। শুধুমাত্র খাবার সরবরাহ নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। এখানে বোয়াল মাছের বদলে রোগীদের দেয়া হয় পাঙ্গাস মাছ, এমন বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যান্য যেসব খাবার সরবরাহ করা হয় সেগুলোও অস্বাস্থ্যকর। হাসপাতালের প্রধান সহকারী রফিক উদ্দিন বলেন, কে.বি সাইন নামক একটি প্রতিষ্ঠান গত কয়েক বছর থেকে এখানে খাবার সরবরাহ করছে। ২০১৩ সালে খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলে সংক্ষুব্দ হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সঞ্জিব কর একই বছরে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তিনিই এখনো পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করছেন।  খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোগীদের সপ্তাহে তিনদিন মাংস ও চারদিন মাছ সরবরাহ করার কথা থাকলেও ১০ দিনেও একদিন মাংস সরবরাহ করা হয়না। বাকি দিন রুই, কাতল ও মৃগেল মাছের বদলে দেয়া হয় পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ। মাছের মাথা ও লেজ বাদ দিয়ে রোগীদের দেয়ার নিয়ম থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না। চিকন চালের বদলে রোগীদের খাওয়ানো হয় মোটা ও নিম্নমানের চাল। রোগীরা সাধারণত ওই খাবার খেতে চান না। এখানে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ও নার্সিং সুপার ভাইজারের উপস্থিতিতে সরবরাহকৃত মালামাল রান্নার জন্য প্রস্তুতির কথা বলা হলেও তা করা হয় না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তার ইচ্ছামাফিক পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। রোগীদের খাসির মাংসের বদলে ব্রয়লার ও রুই মাছের বদলে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ দেয়া হলেও সরকারি নিয়মে খাসি ও রুই মাছের বিল উত্তোলন করছেন ঠিকাদার। অনুসন্ধানে জানা যায়, কে.বি সাইনের স্বত্বাধিকারী সঞ্জিব কর দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে খাবার ও মনোহারী দ্রব্য সরবরাহ এবং ধোলাই’র টেন্ডারে অংশ নেন এবং নিয়মিত তিনি টেন্ডার পানও বটে। শুধুমাত্র ২০১৩ সালে এর কিছুটা ব্যতিক্রম হওয়ায় তিনি বাদী হয়ে উচ্চ আদালতে রিট করায় আদালত তার পক্ষেই রায় দেন। এ প্রসঙ্গে সঞ্জিব করের মোবাইল  ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ দিয়েও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।  
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান বলেন, নিম্নমানের খাবার সরবরাহের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো। রোগীদের স্বাস্থ্য নিয়ে কারো ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবেনা বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে আপীল করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেন তাহলে তাদের কিছু করার নেই বলেও তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর