ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৫০ মিনিট। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের ভেতরে-সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে রোগী। অন্যদের মতো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মিরের খিল গ্রামের গৃহবধূ মাহেরা গাজী (৩০) ও তার শাশুড়ি কুসুম আক্তার (৫৩)। এ সময় চেয়ারে দায়িত্বরত চিকিৎসক উপস্থিত নেই বলে জানান পাশের অন্য একটি চেয়ারে বসে থাকা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) রাজীব বড়ুয়া। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জিজ্ঞাসা চিকিৎসক নেই, আমাদের চিকিৎসা কে করবে? তখনই স্যাকমো তাদের উদ্দেশ্য বলেন, আমি আপনাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করব। এমনটা শুনে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হতভম্ব ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। যদিও সেদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে ডাক্তার সুহানা কর্তব্যরত ছিলেন বলে জানা গেছে। গতকাল এমনই চিত্র দেখা গেল হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে।
এ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে দিনে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসকদের দেখা মিললেও রাতের বেলায় চিকিৎসকের আসন দখল করে বসেন স্যাকমোরা। ফলে মিলছে না কাংখিত স্বাস্থ্য সেবা। অথচ সরকারি চিকিৎসাসেবার এ প্রতিষ্ঠান উপজেলার লাখ লাখ বাসিন্দার চিকিৎসাসেবা গ্রহণের অন্যতম ভরসাস্থল। ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে ওই দিনের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাক্তার সুহানা জানান, ‘আমি সেদিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছি। সে (স্যাকমো) টোকেন দিয়ে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় বিশ্রামাগারে আমার কাছে রোগী পাঠিয়েছে। তবে কেন যে ওই রোগীগুলোকে আমার কাছে পাঠায়নি তা আমার বোধগম্য নয়।’ এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও স্যাকমোদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়, এমনটা দাবি করে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন মো. সোলায়মান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোনো সময়ই জরুরি বিভাগে চিকিৎসক পাওয়া যায় না। তবে রাতের বেলায় পরিস্থিতি হয় সবচেয়ে ভয়াবহ। জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক সন্ধ্যা হলে চলে যান হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় বিশ্রামাগারে। তখন দায়িত্বে থাকা স্যাকমোরা হয়ে যান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তারা (স্যাকমো) শুধু পরিচিতদের চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। কিন্তু চিকিৎসকের সাক্ষাতের বিষয় নিয়ে কথা তুললে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরমর্শ দেন। এছাড়া বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা, অবহেলার কারণে ভেঙে পড়েছে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা এমন অভিযোগ চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ভূক্তভোগীদের। ফলে একদিকে চিকিৎসা সেবা তথা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ জনগণ। অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সৈয়দ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোসাইন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।