কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল বুরুজের পাড় গ্রামের মৃত নুরুজ্জামানের মেয়ে ফাহিমা। মেধাবী ভদ্র একটি সাদামাটা মেয়ে। এলাকার সকলের চোখে ছিল একজন ভালো মেয়ে এবং শিক্ষকদেরও কাছে একজন ভালো মেধাবী ছাত্রী। ভালো ফলাফল নিয়ে ১৯৯৮ সালে দাখিল পাস করেছিল কাঁচকোল সখিনা দাখিল মাদ্রাসা থেকে। উচ্চ শিক্ষার লাভের জন্য ভর্তি হয়েছিল রাজারভিটা মাদ্রাসায়। কিন্তু অভাবের সংসার বারবার নদী ভাঙনের শিকার এর ওপর আকস্কিকভাবে বাবা নুরুজ্জামান পার্যালাইসিস আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই পরিবারের হাল ধরতে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান ফাহিমা চট্টগ্রামে। তিনি কাজ করে পরিবারকে সাহায্য করার পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যান। অংশ নেন আলিম পরীক্ষায়।
পরীক্ষায় তাকে বহিষ্কার করা হয়, এ সময় সে ভেঙে পড়ে। আবারো চলে যান কাজের সন্ধানে কিন্তু একদিন কাউকে কিছু না বলে চলে আসেন বাড়িতে এবং গভীর রাতে চিৎকার করে ওঠেন। চিকিৎসা শুরু হয় কিন্তু ভালোর লক্ষণ না থাকায় এক পর্যায়ে আশা ছেড়ে দেয় পরিবার। এর মধ্যে বাবা চলে যান না ফেরার দেশে। অভাব আরো চেপে ধরে। ধীরে ধীরে অনেক বেশি অসহায় হয়ে পড়ে প্রতিবন্ধী মেয়ে ফাহিমাকে নিয়ে তার মা ও বোনেরা। যদিও মায়ের বিধবা ভাতা আর ফাহিমার প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে চলছে টানাটানি সংসার। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকেও ফিরে আনেন ফাহিমাকে তার মা। কোনো উপায় না পেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে যেন কারো ক্ষতি করতে না পারে তাই বাড়ির উঠানে শিকল দিয়ে সব সময় বেঁধে রাখতেন ফাহিমাকে। খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ছুটে যান চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এডব্লিউএম রায়হান শাহ্ খবর নেন ফাহিমার সর্ম্পকে সঙ্গে সঙ্গে শিকল মুক্ত করেন প্রতিবন্ধী ফাহিমাকে। সুন্দরভাবে কথা বলেন তার সঙ্গে তার সমস্যার কথা সব শোনের পরিবারের কাছে। তার সমস্যা সমাধানসহ চিকিৎসা করার প্রতিশ্রুতি দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তার শিকল মুক্ত ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে ফাহিমার মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠে এবং প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান এলাকাবাসী। এডব্লিউএম রায়হান শাহ্ বলেন, তার চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হবে এবং সে যেন সুস্থ হয় আমাদের পক্ষ থেকে সকল চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন প্রয়োজনে মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলল।