× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নারীর ক্ষমতায়নে বড় বাধা দুর্নীতি

ষোলো আনা


৮ মার্চ ২০২০, রবিবার
ছবি: জীবন আহমেদ

সিমোন দ্য ব্যুভেয়ারের দ্য সেকেন্ড সেক্স (১৯৪৯) বইয়ের বিখ্যাত উক্তি, ‘নারী হয়ে কেউ জন্মায় না, সমাজই তাকে নারীতে পরিণত করে’- অর্থাৎ মানবশিশু মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেও প্রাকৃতিক কিছু নির্দিষ্ট প্রত্যঙ্গ আর সমাজ আরোপিত নানা আচরণ ও ক্রিয়া নির্ধারণের মধ্য দিয়েই নারী-পুরুষের লিঙ্গ বিভাজন করা হয়। আর নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে নারী প্রান্তিক হয়ে ওঠে।
সর্বপ্রথম নারীদের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ দেখেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কবাসী। শিল্পবিপ্লবের প্রাক্কালে ১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নিউ ইয়র্কের সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা পুরুষের তুলনায় তাদের মজুরি বৈষম্য বাতিলে, কর্মঘণ্টা ও কাজের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রবল বিদ্রোহে রাস্তায় নেমে এসেছিল।

অভূতপূর্ব এই নারী আন্দোলন সমাজ কাঠামোতে নাড়া দিয়ে যায়। ১৯০৯ সালে সেই নিউ ইয়র্ক সিটিতেই একটি নারী সংগঠনের উদ্যোগে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে সুতা শ্রমিকদের ঐতিহাসিক সেই বিদ্রোহ স্মরণ করে প্রতিবছর ৮ই মার্চ নারী দিবস পালনের প্রস্তাব দেন ক্লারা জেটকিন। এরও বহু বছর পর জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে নারীদের সমঅধিকার আদায়ে ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন শুরু হয়।


১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নারীদের প্রতি সমস্ত ধরনের বৈষম্য নিরসনে আন্তর্জাতিক সনদ- সিডও (The Convention on the Elimination of all forms of Discrimination Against Women- CEDAW) গৃহীত হয় এবং বাংলাদেশসহ বিশে^র অধিকাংশ দেশ তাতে স্বাক্ষর করে। ২০১০ সালে জাতিসংঘ জেন্ডার সমতা ও নারী ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে ইউএন উইম্যান প্রতিষ্ঠা করে। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ ৫-এ জেন্ডার সমতা তথা নারীদের সমঅধিকার এবং নারী ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার কথা পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়।

১৯৯৫ সালে জাতিসংঘের নেতৃত্বে চতুর্থ অফিসিয়াল বিশ্বনারী সম্মেলনে  বিশ্বের  ১৮৯টি দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নারীদের সমতা নিশ্চিতে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা তথা নারীদের এগিয়ে নেয়ার সর্বসম্মত ঘোষণা (Beijing Declaration) দেয়া হয় এবং এই ঘোষণার কার্যকারিতা ও বাস্তবায়নে কর্মপন্থা (The Platform for Action) নির্ধারণ হয়। প্রতি বছর ঘটা করে নারী দিবস পালন করা হলেও বেইজিং ঘোষণার ২৫ বছর পূর্তিতে সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন ও নারী বৈষম্য হ্রাসে বাংলাদেশের কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা মূল্যায়নের সময় এসেছে।

এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতিসংঘ নির্ধারিত প্রতিপাদ্য- I am Generation Equality: Reali“ing WomenÕs Rights (আমি সমতার প্রজন্ম: চাই নারীর অধিকার বাস্তবায়ন)। আর বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’। কিন্তু জেন্ডারভেদে বৈষম্য রোধে আদৌ কি নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা গেছে?

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত বৈশ্বিক  লিঙ্গ বিভাজন সূচক-২০২০ (গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স) অনুযায়ী ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম।

তবে, শুধু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ধর্ষণের পর ৭৬ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা ও যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনে ৩১৪ জন নারী খুন হয়েছেন। এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন আদালতে এখনও প্রায় দেড় লক্ষাধিক নারী নির্যাতন মামলা ঝুলে আছে।

জেন্ডার অসমতার সঙ্গে দুর্নীতির সম্পর্ক সুগভীর। জেন্ডার অসমতা সুশাসন ও টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণে নারীর ক্ষমতায়ন ব্যাহত হয়। টিআইবি’র জাতীয় খানা জরিপ ২০১৭- তে দেখা গেছে, সেবা গ্রহণকারী হিসেবে ৩১.৮ শতাংশ নারী দুর্নীতির শিকার হয়েছে। টিআইবি’র ওই জরিপের ভিত্তিতে বলা যায়, বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণে নারীর ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হয় এবং টেকসই উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়ে। এমন বাস্তবতায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে দুর্নীতির কার্যকর প্রতিরোধ অত্যাবশ্যক। অন্যথায় টেকসই উন্নয়ন যেমন অর্জন সম্ভব হবে না তেমনি দেশের অর্থনীতিও সাফল্য পাবে না।

লেখক: জাফর সাদিক; উন্নয়নকর্মী, সংগঠক ও সংবাদ উপস্থাপক।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর