করোনা আপডেট
করোনা ঠেকাতে হার্ডলাইনে সিঙ্গাপুর, বিদেশ ফেরতরা নজরদারীতে!
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২০২০-০৩-১৯
সিঙ্গাপুরে আচমকা করোনা রোগী সংখ্যা বাড়ছে! দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তারা অভ্যন্তরীণভাবে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সফল হয়েছেন। কিন্তু এখন ইউরোপ, আমেরিকা এবং আসিয়ান দেশ ভ্রমণ করে ফেরা ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। গত ক’দিনের পরিসংখ্যা অন্তত তা-ই বলছে। ওই ভ্রমণকারীরা স্থানীয়দের সংস্পর্শে আসার কারণে বেশ ক’জন আক্রান্ত হয়েছেন বলেও বৃহস্পতিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনা আপডেট সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। ব্রিফিংয়ে এ সংক্রান্ত একটি পরিসংখ্যানও শেয়ার করা হয়। বলা হয়- ১৯শে মার্চ নতুন করে ৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ২৪ জনই করোনা আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ দেশ ভ্রমণ করে সদ্য ফিরেছেন। আমদানীকৃত বা ইম্পোর্টেড ২৪ কেসসহ সিঙ্গাপুরে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৩৪৫ এ পৌঁছায় বলে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিদেশ ফেরত ২৪ জন নীরবে অন্য দেশ ভ্রমণকালে আক্রান্ত হয়েছেন। সিঙ্গাপুর ফেরার পর তাদের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে এবং রোগটি শনাক্ত হয়েছে। বাকীদের মধ্যে ২ জনের পূর্বে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে যাওয়ার তথ্য মিলেছে। অন্য ৬ জন কিভাবে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বয়ান বা হিস্ট্রি দেখে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সিঙ্গাপুরে থাকা প্রবাসী সাংবাদিক আবদুর রহিম জানিয়েছেন- সিঙ্গাপুরে করোনা আক্রান্তের তালিকা দিনে দিনে দীর্ঘায়িত হলেও তাতে নতুন করে কোন বাংলাদেশির নাম ওঠেনি। আগে ৫ আজন আক্রান্ত এবং শনাক্ত হয়েছেন। চিকিৎসা শেষে ৪ জন হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। বাংলাদেশি আব্দুর রহিম বলেন, আশার দিক হচ্ছে সিঙ্গাপুরে এখনও করোনায় কেউ মারা যায়নি। বৃহস্পতিবার ৭ জন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এই নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৪-এ। মিস্টার রহিম জানান, বিদেশে ফেরতদের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকার আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত মতে, ২০ই মার্চ শুক্রবার রাত ১২ টার পর থেকে বিদেশ ভ্রমণে থাকা সিঙ্গাপুরিয়ান এবং অন্যদের জন্য সর্বোচ্চ মাত্রার কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। নির্ধারিত টাইমলাইনের পর দেশটির ওয়ার্ক পাস হোল্ডার, ডিপেন্ডেন্ট পাশ হোল্ডাদের সিঙ্গাপুরে প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ থাকবে। ওই সময়ে কেউ ঢুকতে চাইলে তাকে অবশ্যই দেশটির জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। যারা প্রবেশের যৌক্তিক কারণ দেখতে পারবেন তাদের হয়ত অনুমতি মিলবে, কিন্তু প্রত্যেককে বাধ্য বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কোয়ারেন্টাইন সরকার নির্ধারিত স্থানে হবে। এটি বাসায়ও হতে পারে। যারা বাসায় থাকার সূযোগ পাবেন তাদেরকে কোন অবস্থাতেই ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। এমনকি খাবার কিনতেও না। হোম ডেলিভারি কিংবা কারও সহায়তায় নিয়ে তাদের বাসায় খাবার পৌছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই ভবনে থাকা লোকজনের সঙ্গেও দেখা-সাক্ষাৎ বা আড্ডা দেয়া যাবে না। অনিচ্ছাকৃত বা আচমকা পরিবারের (ক্লোজ কন্ট্রাক) কারও সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে তা অবশ্য রেকর্ড রাখতে হবে, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টকে জানাতে হবে। বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের দৈনিক দু’বার শরীরের তাপমাত্রা চেক করতে হবে এবং করোনা ভাইরাসের লক্ষণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সিঙ্গাপুর সরকারের জারি করা নির্দেশনা মতে, কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় কেউ ওই এটি অমান্য করলে তাদের বড় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। কঠোর আইনের শাসনে বিশ্বাসী সিঙ্গাপুর প্রশাসনের জারি করা নোটিশে বলা হয়েছেÑ প্রথমবার কেউ নিয়ম অমান্য করলে তাকে ১০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হবে, অন্যথায় ৬ মাসের জেল হবে। নিয়ম অমান্যকারী সিঙ্গাপুরের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট বা পিআর কিংবা লং-টার্ম পাস হোল্ডার হলে দেশটিতে পরবর্তীতে তাদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হবে। সাধারণ কর্মী হলে তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হবে আর নিয়োগদাতার নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ হবে। ১৯ শে মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে প্রকাশিত তথ্য মতে, করোনা আক্রান্ত ২২১ জন এখনও দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছন। তার মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। তাদের আইসিইউতে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
বিমানের ফ্লাইট বন্ধ: এদিকে রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহেরা খন্দকার মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিঙ্গাপুর সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে আগামী ২১ শে মার্চ থেকে ৩রা এপ্রিল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর রুটে বিমানের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
বিমানের ফ্লাইট বন্ধ: এদিকে রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহেরা খন্দকার মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিঙ্গাপুর সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে আগামী ২১ শে মার্চ থেকে ৩রা এপ্রিল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর রুটে বিমানের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।