দিনাজপুরের বিরলে রূপালী বাংলা জুট মিলে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের ঘটনায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে এক চা দোকানদার নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৩ পুলিশসহ আহত হয়েছেন আরো ১৩ শ্রমিক। নিহত ব্যক্তির নাম সুরত আলী (৩৭)। তিনি মিলের পাশের চা দোকানদার। হুসনা মোড়ের মোহাম্মদ আলীর ছেলে সুরত আলী।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাত ৯টায় বিরল উপজেলার রূপালী বাংলা জুট মিল চত্বরে। রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিপিএম ও পিপিএম (বার) এবং বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিনাত রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় তারা নিহত সুরত আলী’র পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন।
অপরদিকে, জুট মিলে শ্রমিক সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ ১১০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিরল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদের বাদী হয়ে থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
গতকাল সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে রূপালী বাংলা জুট মিলের আশপাশ সুনসান অবস্থায় দেখা যায়। মিলের ভেতরে ভাঙচুর ও তাণ্ডবের অনেক কিছুই চোখে পড়ে।
যে ক’জনকে আশেপাশে দেখা যায়, তাদের চোখে মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। এলাকার লোকজন জানায়, বুধবার বিকালে কোনো নোটিশ ছাড়াই রূপালী বাংলা জুট মিল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে শ্রমিকরা। তারা বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে সন্ধ্যার পর থেকে মিল গেটে সমবেত হতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর রাত সাড়ে ৮টায় রূপালী বাংলা জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিরল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম. আব্দুল লতিফ ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন চেয়ে স্লোগান দিতে থাকে। কিন্তু, শ্রমিকদের দাবি না মেনে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ঘটনাস্থলে পুলিশের গুলিতে সুরত আলী (৩৭) নামে এক চা দোকানদার নিহত হন। আহত হন ৩ পুলিশসহ আরো ১৩ শ্রমিক। এ হতাহত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন, বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাসিম হাবিব।
তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১২ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩ পুলিশ সদস্য। জুট মিলের রাজ কুমার (২৪)কে আশংকাজনক অবস্থায় দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রায়হান (১৯) ও ইব্রাহিম (৫৫)সহ অন্যদের স্থানীয় বিরল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সুরত আলীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।