× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মানুষ মরছে বেশুমার

অনলাইন

মতিউর রহমান চৌধুরী
(৪ বছর আগে) মার্চ ২৯, ২০২০, রবিবার, ১:২৬ পূর্বাহ্ন

হিংসা নেই। বিদ্বেষ নেই। হানাহানিও নেই। বারুদের গন্ধও নেই। কামানের গোলার শব্দও নেই। নেই বোমারু বিমানের অ্যাকশন। তবুও মানুষ মরছে বেশুমার। ঘুম নেই কারও চোখে।
সবাই এখন ক্ষমতাহীন। যাদের ইশারা-ইঙ্গিতে দুনিয়া কাঁপতো তারাও এখন ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি করছেন। সবাই বাঁচার তাগিদে। এক অদৃশ্য ভাইরাস দুনিয়াকে বদলে দিয়েছে। কারফিউ’র জায়গা দখল করেছে লকডাউন। নাড়িয়ে দিয়েছে ক্ষমতার মসনদকে। ধনী গরীবকে নিয়ে গেছে এক কাতারে। মানুষকে ভালবাসতে শিখিয়েছে। শত্রুর সঙ্গে হাত মেলাতে বাধ্য করেছে। মানুষ মারার যন্ত্রগুলোকেও স্তব্ধ করে দিয়েছে। চারদিকে শুধু এক আওয়াজ, বাঁচতে চাই, বাঁচাতে হবে। এক সময় মানবতা বিপন্ন হতো শক্তির লড়াইয়ে। আর এখন মানবতা বিপন্ন ভাইরাসে। পৃথিবী এখন জ্বলছে অদৃশ্য শক্তিতে। রিমোর্টটা আসলে কার হাতে? কেউ জানে না। বন্দুকের যেমন কোন দিক নেই, তেমনি এই ভাইরাসেরও নেই কোন দিক। পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সব দিকই তার নিশানা। বিজ্ঞানীরা ব্যর্থ। গবেষকরা কুল-কিনারা পাচ্ছেন না। প্রতিদিনই খবর আসে এই বুঝি ভ্যাকসিন এসে গেলো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই খবর বাসি। দাবি করছেন অন্যকেউ। আখেরে কিছুই হয়নি। বাঁচার তাগিদে মানুষ স্বেচ্ছাবন্দি। ঘরে খাবার নেই। তবুও কেউ বের হচ্ছে না খাবারের সন্ধানে। বোমার মধ্যেও মানবতার ডাকে মানুষ হাজির হয় খাবার নিয়ে। এই ভাইরাস মানবতাকে বিপন্ন করে দিয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে। কাউকে দোষারোপ করে বলছি না। কোথায় যেন ভুল হচ্ছে। এই ভাইরাস কারও সৃষ্টি নয়। তাই মনে হয় সত্যটা বলতে হবে। মানুষ যদি বাস্তব অবস্থা না জানতে পারে তখন বিপদ হবে আরও বেশি। সত্য গোপনের পরিণতি ভাল হয় না। বগুড়ায় একজন মানুষের দাফন নিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হল তা বোধ করি খোলাসা করে বলার দরকার নেই। মানুষ এখানে অসহায়। সরকার কি সবকিছু করতে পারবে? সরকার সময়ে সঠিক দিক নির্দেশনা দেবে এটিই মানুষের চাওয়া। এই মুহুর্তে খালি চোখে বড় সঙ্কট না দেখলেও বড় সঙ্কট কিন্তু সামনে। দেশে দেশে অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। আমরা এর বাইরে নই। ঝড়ো হাওয়া আসেনি। দমকা হাওয়ায় অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ছে। এই সময়ে ভুল কৌশল পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলতে পারে।
মানবিকতা দেখাতে গিয়ে  বিদেশ ফেরৎ বাংলাদেশীদের আমরা পর্যবেক্ষণেই রাখিনি। কেউ বলবে না ওদের আসতে দেবো না। নিজ মাতৃভূমিতে তারা আসবে। কিন্তু ‘স্বেচ্ছাবন্দি’ থাকতে আমরা শুরুর দিকে পরামর্শও দেইনি। বরং ভাইরাসমুক্ত সার্টিফিকেট দিয়েছি। এটা ছিল ভুল। এই ভুলের মাসুল যেন আমাদের আর দিতে না হয়।
বলা হচ্ছে সত্য বললে নাকি মানুষ আতঙ্কিত হবে। অঘোষিত লকডাউনে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ঢাকা ছেড়েছেন। ফেরি ঘাটে লাখো মানুষের ভিড় আর আকুতির ছবি আমরা দেখেছি। লকডাউন মানে লকডাউন করতে হবে। হোটেল রেস্তোঁরা খোলা রেখে লকডাউন পৃথিবীর কোথায় আছে? পশ্চিমা দুনিয়ায় মদের দোকানও বন্ধ। যারা খাদ্যের চেয়ে মদকে ভালবাসে বেশি। তাছাড়া হোটেল রেস্তোঁরাগুলো কি করোনা মুক্ত?

অতি মানবিকতা আমাদের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া রিপোর্টে ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশকে এখান থেকে বার্তা নিতে হবে। জাতিসংঘের অনুমান কতোটা সত্য জানি না। মনে-প্রাণে চাই এটা যেন মিথ্যে হয়। বিদেশি কূটনীতিকদের দলে দলে ঢাকা ছাড়ার খবরে চিন্তার ভাঁজ কপালে। ৪৮ জন আক্রান্তের দেশ ছেড়ে তারা কেন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর দেশে ফিরছেন তা বুঝতে পারি না।

শেষ কথা-নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বিখ্যাত উক্তি-‘দুর্ভিক্ষ থামাতে পারে গণতন্ত্র আর মুক্ত  সংবাদ মাধ্যম’। দেশে দেশে তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর