× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মৌলভীবাজারে অন্যরকম দৃশ্যপট

অনলাইন

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
(৪ বছর আগে) মার্চ ২৯, ২০২০, রবিবার, ১:৩৮ পূর্বাহ্ন

জেলার ৭টি উপজেলায় ৫টি পৌরসভা। ৬৭ টি ইউনিয়ন আর ২০১৫ টি গ্রাম। সবখানেই ভয়ার্ত মানুষের চরম দুর্দশা। বিরাজমান ভীতিকর পরিবেশে যেন কবরের নিরবতা। এজেলায় হঠাৎ এমন অকল্পনীয় পরিবর্তন। এখানকার রাজপথ কিংবা জমির আইল। গ্রাম আর শহর। সবস্থানেই এখন দৃশ্যপট এক।
জমদূত করোনা সংক্রমণের চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠা। বলা চলে কার্যত সবখানেই লকডাউন। অফিস,দোকানপাট আর নিজের শরীর। সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সব অনুষ্ঠানাদির কর্মসূচীতেও টানা হয়েছে ইতি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক ধর্মীয় উপসনালয়ও অঘোষিত অচল। সবখানে সবস্থানে ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। আর সচেনতার নানা প্রদক্ষেপ। যে যার মত করে পালন করছেন নিজ ধর্মীয় নানা রেওয়াজ। আর স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা জমদূত করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার। এযেন দ্রুত পবিরর্তন চিরচেনা দৃশ্যপটের। চলতি মাসে করোনা নিয়ে অজানা শঙ্কায় জবুথবু পুরো দেশ।

প্রবাসী ও পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারের সর্বত্রই এখন অন্যরকম দৃশ্যপট। আর সবার মুখে নানা আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা। চায়ের রাজধানী খ্যাত এজেলার মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট আর হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট সবই এখন জনমানব শূন্য। জটলা আর জমসমাগমের সকল কার্যক্রম থেকে নিজেকে নিজেই গুটিয়ে নিয়েছে মানুষ। একঘরে হয়ে পড়েছে সামাজিক রীতি নীতি ও মেল বন্ধন। পরিবর্তন এসেছে দেখা সাক্ষাতের আচার ও রেওয়াজেও। জেলা জুড়ে মানুষ নিজ থেকেই হয়ে পড়েছে গৃহবন্দি। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্তক দৃষ্টি। অপ্রয়োজনে কেউ ঘর থেকে বের হলেই দিতে হচ্ছে কৈফিয়ত। প্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন তারাও ঘর থেকে বের হলে নানা প্রটেকশন নিচ্ছেন। প্রবীণ ও বয়স্ক জনরা বলছেন তাদের জীবদশায় ৭১ সালের যুদ্ধ বা দুর্ভিক্ষের সময়ও দেশ ও বিশ্বজুড়ে এমন ভয়ার্ত ও ভয়াবহ পরিস্থিতি ও পরিবেশ দেখেননি। প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা জুড়ে এমনটিই এখন চোখে পড়ছে।

দেশ দুনিয়ার অন্যান্যদের মত এখানকার বাসিন্দাদেরও চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় কাটছে রাত দিন। প্রাণ হন্তারক করোনা ভাইরাসের কারনেই বদলে গেছে এজেলার চিরচেনা দৃশ্যপট। কোথাও নেই কোলাহল আর হৈ চৈ। জনসমাগমের স্থানগুলো পোড়াবাড়ির মত। জীবন রক্ষায় সব মানুষই স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি। প্রয়োজন ছাড়া নিজ বসত বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। দুনিয়া জুড়ে জমদূত আর মহামারিতে যে মৃত্যু খেলা চলমান গ্রাম থেকে শহর এখন সর্বত্রই একই দৃশ্যপট। গ্রামীণ জনপদের হাট বাজারের ছোট দোকান থেকে জেলা ও উপজেলা শহরের বড় মার্কেট ও শপিংমল সবই রয়েছে বন্ধ। সবস্থানেই সুনসান নীরবতা। গ্রামের কৃষকদের দল বেঁধে ক্ষেতের জমি পরিচর্যার দৃশ্য এখন আর নেই বললেই চলে। কৃষকরা জানালেন পরিচর্যাহীনতায় ক্ষেতের অনেক ফসলই আশানুরুপ হচ্ছে না। ভয়ে মানুষ ফসলের মাঠে শ্রম দিচ্ছেনা।

বলা চলে অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যবস্থা। বেকার হয়ে পড়ছেন কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর আয় রোজগার বন্ধ হওয়ায় এখন তারা অসহায়। পড়েছেন দুর্দশায়। পরিবার পরিজনের জীবন জীবিকা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায়। প্রতিটি গ্রামেই এখন এমন দৃশ্যই প্রতীয়মান। আর শহরের নিন্ম আয়ের মানুষজনও এখন জীবন যুদ্ধে চরম অসহায়। কার্যত লকডাউন থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে তাদের প্রতিদিনকার আয় রোজগার।  জানাযায় ২৭৯৯ বর্গ কি.মি আয়তনের  এ জেলায় রয়েছে ৬৭ টি ইউনিয়ন। রয়েছে ২০১৫ টি গ্রাম। সব মিলিয়ে এখানকার অধিবাসী প্রায় ২১ লক্ষাধিক। কিন্তু গ্রাম থেকে শহরের প্রতিটি রাস্তায় বের হলে এমনটি মনেই হয় না। জনমানব শূন্য রাস্তাঘাট ও জনসমাগমস্থল। এমন দৃশ্যেই জানান দেয় এজেলার করোনার করুণ পরিস্থিতি। তবে এমন দুর্দিনেও  গ্রাম ও শহরে করোনা নিয়ে একশ্রেণির হীনমন্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্ঠায় লিপ্ত রয়েছে। 

এদিকে জেলায় এপর্যন্ত ৬২১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের সিংহভাগই বিদেশ ফেরত। এছাড়া কয়েকজন এদের নিকট আত্মীয়ও রয়েছেন যারা উনাদের সংস্পর্শে ছিলেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন অফিস। প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও সতর্কতায় রবিবার পর্যন্ত বিদেশ ফেরত ৬২১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী, রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর ,কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ইতালি,আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে এপর্যন্ত ৬২১ জন প্রবাসী দেশে এসেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসির। এর মধ্যে কুলাউড়ায় ৭৯ জন, বড়লেখায় ৬৮ জন, কমলগঞ্জে ১০৮ জন, সদরে ৬৯ জন, জুড়ীতে ৭৭ জন, রাজনগরে ৯৬ জন এবং শ্রীঙ্গলে ১২৪ জন। তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি।

যেহেতু তারা করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন তাই বাড়তি সর্তকতার জন্য তাদের নিজ বাসা-বাড়িতে ১৪ দিন সেলফ কোয়ারেন্টিনে মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলায়  হোম কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৩৩৭ জন মুক্ত ভাবে চলা ফেরার অনুমতি পেয়েছেন। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ বলেন আমরা মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছি। আমরা জনসাধারণকে  বলতে চাই, কাজ ছাড়া বাইরে বের হবেন না, ভীড় এড়িয়ে চলুন। করোনা প্রতিরোধ সরকারী নির্দেশনা মেনে চলুন। কারন একজনের কারনে অন্য সবার ক্ষতি হউক এমনটি হতে পারেনা। গুজবে কান না দিতেও পরামর্শ দেন সিভিল সার্জন। তিনি বলেন ‘আমাদের সকলের সচেতনতা ও সতর্কতাই পারে করোনামুক্ত রাখতে। উল্লেখ্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১১৬টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় করোনা আক্রান্ত পাওয়া গেলে চিকিৎসা দেয়া হবে।তবে এখনো জেলায় কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর