× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

স্পেনে করোনা: ‘আমি প্রতিদিন কাঁদি’

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৪ বছর আগে) মার্চ ২৯, ২০২০, রবিবার, ৩:৩১ পূর্বাহ্ন

স্পেনে করোনা ভাইরাসের মৃত্যুর সংখ্যা ইতালির থেকেও দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। চিকিৎসকরা সেখানে হাসপাতালে রোগীতে উপচেপড়া আইসিইউতে প্রাণ বাঁচাতে সর্বশক্তি নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসকরা এই অভিজ্ঞতাকে হরর সিনেমার মত ভয়াবহ বলে বর্ননা করেছেন। রাজধানী মাদ্রিদ পরিণত হয়েছে করোনা সংক্রমণের নতুন উপকেন্দ্রে। শুধুমাত্র এই এক শহরেই এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। মারা গেছে ২০০০ এর বেশি। স্পেনের অন্য কোনো অঞ্চলেই অবস্থা এত শোচনীয় হয়ে ওঠেনি। মার্চের মাঝামাঝি শহরে চলাচলে সর্বোচ্চ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
কিন্তু নাটকীয়ভাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে।

গতকাল একদিনেই দেশটিতে ৮ শতাধিক মানুষ করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। ইতালি ও চীনেও এত দ্রুত মৃতের সংখ্যা বাড়েনি। ইতিমধ্যে চীনের থেকে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন স্পেনে। একইসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যুতে নতুন সংকট শুরু হয়েছে দেশটিতে। স্প্যানিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীকে দিয়ে হাসপাতাল থেকে মৃতদের মরদেহ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। হাসপাতালগুলোতেও রোগীর সংকুলান হচ্ছে না। একটি কংগ্রেস সেন্টারকে ইতিমধ্যে হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে কয়েক হাজার রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে।

স্পেনে এর আগে ডানপন্থি দল ক্ষমতায় ছিলো। ফলে জনকল্যানমূলক খাতে অর্থ বরাদ্দ একেবারেই কমিয়ে দেয়া হয় দেশটিতে। স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কমাতে কমাতে এ খাতের অবস্থা শোচনীয় করে তোলে। বর্তমানে বাম ধারার সরকার ক্ষমতায় এসে জনকল্যানমূলক কাজে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। কিন্তু পূর্বের সেই ঘাটতি ও বর্তমানের করোনা সংকটে এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের জন্য। সরকার দ্রুততার সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। ফলে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মী।

মার্কিন গবেষণা বলছে, এখন পর্যন্ত করোনার চিকিৎসা করতে গিয়ে দশ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ইনেস লিপারহিদে নামের কর্মরত এক চিকিৎসক জানান, আমি এখানে একটি আইসিইউতে কাজ করি যেখানে ২২টি বেড রয়েছে। আমরা এ সংখ্যা আরো বাড়ানোর জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অন্য রোগীদের থেকে করোনা আক্রান্তদের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। আমাদের এখন ৪৫ বেডে করোনা রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন আর সাধারণ রোগী আছেন ১৫ জন। এমনকি অন্য বিভাগের চিকিৎসকরাও আমাদের সাহায্য করছেন। তিনি জানান, বেশিরভাগ হাসপাতাল ইতিমধ্যে ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

তাদের হাসপাতাল থেকে দ্রুত কয়েকজন সুস্থ হওয়ায় এখনো এমন সংকট হয়নি। তবে এটি এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। যে হারে স্পেনে করোনা সংক্রমিত হচ্ছে দ্রুতই একটি স্বাস্থ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশটি। চিকিৎসকরা এখন দিনে ২৪ ঘন্টা হাসপাতালে থাকছেন। ঘুমানো ছাড়া বাকি সময় তাদেরকে চিকিৎসার পেছনে দিতে হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটি বা কোনো ধরণের ছুটি তারা নিচ্ছেন না। অতিরিক্ত কাজও করছেন বিনামূল্যে ও স্বেচ্ছায়। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। রোগী ভর্তি করতে হচ্ছে দেখে দেখে।

যাকে বাচানোর সম্ভাবনা বেশি তাকেই ভর্তি করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে শেষ হয়ে গেছে মাস্ক, গ্লাস, গ্লোভস। তারপরও চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এতেই হাজার হাজার নার্স, চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্ত হয়ে পরছেন। এত ত্যাগের পরেও ভেঙ্গে পরছেন না স্পেনিশ চিকিৎসকরা। চিকিৎসক ইনেস জানান, আমি প্রতিদিন কাঁদি। আমার চোখের সামনে এত এত মানুষ মারা যাচ্ছে। এটা ভুলে যেতে পারি না। আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে দেখতে পারছি না দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। আমি চাই কেউ এখন আমাকে একটু জড়িয়ে ধরুক। আমি হাঁপিয়ে গেছি। আমরা সবাই হাঁপিয়ে গেছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর