ফেসবুক লাইভে একজন ডাক্তার। সামনে গোটা দশেক মাস্ক। দিলেন নানা তথ্য। তার কথায় উঠে এসেছে মাস্ক নিয়ে কারসাজির চিত্র। অবশ্য তিনি বিনয়ের সাথে বললেন, একজন চিকিৎসক হিসেবে সঠিক তথ্যটা জানানো দরকার। শুরুটা করলেন এভাবে- আমার সামনে অনেকগুলো মাস্ক। দেখলে মনে হবে দোকান নিয়ে বসেছি। আসলে তেমনটা নয়।
রাস্তায় যখন বের হচ্ছি একজন চিকিৎসক হিসেবে ভাল লাগছে মানুষ মাস্ক পড়ছে। হাতে গ্লাব পড়ছে। আবার দুঃখ লাগছে, খারাপ লাগছে, মাঝে মাঝে হাসি পাচ্ছে এ কারণে- যে সমস্ত মাস্ক পড়তে দেখছি তার বেশিরভাগই কাজের নয়। আপনাদের সচেতন করার জন্য একজন চিকিৎসকের দায়বদ্ধতা থেকে মাস্কগুলো নিজে কিনে আপনাদের সামনে রেখেছি। একটি মাস্ক হাতে নিয়ে বললেন, এটি কাপড়ের তৈরি। এটি পড়লে করোনা হউক কিংবা যে কোন ভাইরাস হউক কোন লাভ হবেনা। শুধুমাত্র ধুলোবালু থেকে কিছুটা রক্ষা করবে। আরেকটি মাস্ক দেখিয়ে বললেন, এটি অনকেই ব্যবহার করেন। এটিতে ফিল্টারও আছে। এটি পড়েও কোন লাভ নেই। আরেকটি মাস্ক হাতে নিয়ে জানালেন এটি বাজারের ব্যাগ থেকে বানানে। এটিতেও একটি ফিল্টার দেয়ার চেস্টা করা হয়েছে। দেখতেও সুন্দর। আসলে এটি কাজের না। ভাইরাস কোনভাবেই এটি ঠেকাবেনা। শুধুমাত্র কিছু ব্যাকটেরিয়া, ধুলোবালি থেকে রক্ষা করবে। করোনার ক্ষেত্রে কোন উপকারে আসবেনা। আরেকটি মাস্ক দেখিয়ে বলেন, এটি কাপড়ের তৈরি। দেখতে অনেকটা ভাল লাগে। একদম গেন্জির কাপড়। এটাতেও কোন লাভ নেই। শুধু মনের সান্তনা। বাকিগুলো যা দেখছেন সব একই। সবগুলোই বাজারের ব্যাগ দিয়ে বানানো। তবে ভেতরে লেয়ার দিয়ে উন্নত করার চেষ্টা করা হয়েছে। বেসিকেলি এগুলো কোন কাজে দেবেনা। করোনা ভাইরাসের সাথে এগুলোর কোন রিলেসন নেই। যারা এগুলো পড়ে রাস্তাঘাটে বেরুচ্ছেন শুধু মনের সান্তনা। কোন লাভ হবেনা। একজন হাচি দিল, কাশি দিল- এতে যে ভাইরাসটা আছে তা অনায়াসে মাস্কের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করবে। একজন এতো কস্ট করে রাস্তাঘাটে পড়ে বেড়াচ্ছেন ভাল লাগছে। অাসলে মানুষগুলো ভাল থাকতে চায়। সুস্থ থাকতে চায়। সচেতন থাকতে চায়। অথচ যে উপাদান দিয়ে সচেতন হচ্ছে সেগুলো কোন কাজেরই না। সেক্ষেত্রে উপায়টা কি? উপায়টা হচ্ছে করোনা ভাইরাসকে ৯৫% থেকে ৯৯% ঠেকাতে হলে প্রয়োজন এন- ৯৫ মাস্ক। এটা মুখে দিলে একেবারে টাইট হয়ে যায়। এটিকে রেসফিডারও বলা হয়। কথা হলো এই এন- ৯৫ মাস্ক চাইলেই কি সম্ভব? এর দাম ৯০০ টাকা। তাও পাওয়া যায়না। তারপরও একদিনের বেশি ব্যাবহার করার কথা না। নস্ট না করলে, ভেতরে টাচ না করলে ২/৩ দিন ব্যবহার করা যায়। কিভাবে সম্ভব বাংলাদেশের মানুষের? এছাড়া এটা এতোটা টাইট এটা পড়লে চশমা ঘোলা হয়ে যায়। বাইরে গরমে গেলে ঠিকমতো শ্বাস নেয়া যায়না। এসির মধ্যে এটি ভালভাবে ব্যবহার করা যায়। সো, এটি ভাল হলেও এটির দিকে তাকানোর সুযোগ নেই। আমি সাজেস্ট করছিনা এটার প্রয়োজন নেই। যারা একান্ত শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত রোগীর সামনে যাবেন তারা এন-৯৫ মাস্ক পড়বেন। সাধারণ মানুষের এটার কোন প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে অন্য অপশন কি? সার্জিক্যাল মাস্ক। দিস ইজ দ্যা বেস্ট অপশন। আরেকট আছপ এর সামনের দিকে নীল। পেছনে সাদা। নীল দিকটা সবসময় বাইরের দিকে পড়বেন। মাস্ক পড়ে মাঝে মাঝে নাক বের করে শ্বাস নেবেন? কোন লাভ নেই। এমনও দেখেছি রাস্তাঘাটে হাচি দিলে কেউ কেউ এটা খুলে হাচি দিচ্ছে। কোন লাভ নেই। একজন চিকিৎসক হিসেবে বলবো মাস্ক পড়া উচিৎ। রোগীকেতো অবশ্যই পড়তে হবে। শেষ দিকে এসে ওই ডাক্তার বলেন, একটা বিষয় দুঃখ লেগেছে। ডাক্তাররা পলিথিন দিয়ে, এক্সট্রা ফিল্ম মুখে বেধে, বেডসিটের কাপড় দিয়ে পিপিই বানিয়ে রোগীকি দেখছেন। অথচ কিছু পিপিই দেখলাম সরকারি কর্মকর্তা কিংবা যারা ডাক্তার না তাদের কাছে। আপনি সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংকার আপনি সাধারণ মানুষ। আপনার পিপিইর কোন প্রয়োজন নেই। যিনি একজন রোগীর কাছে যাবেন তিনিই পিপিই পড়বেন। ধরেন আপনি ক্ষমতাবান। পিপিই নিয়েছেন। কোন লাভ হবে আপনার? একটা পিপিইতো ওয়ানটাইম ইউজ। হাচি কাশি যারা দিচ্ছেন তারা কি আপনাকে টাচ করবে? আপনি কি ইনজেকশন দেবেন? আপনি কি রোগীর নাকের ভেতর নল ঢুকাবেন? না। যদি সচেতন হোন তাহলে একটি সার্জিকেল মাস্ক ও হাতে গ্লাবসই এনাফ। কিছুক্ষণ পরপর সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করুন। এটাই যথেষ্ট। বিশেষ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আপনি ঘরে থাকুন। যত বেশি ঘরে থাকবেন ততবেশি নিরাপদ থাকবেন।