দ্যাশে কি করোনা আইলো। মানুষ নাকি মইরা যায়। সরকার সব কিছু বন্ধ কইরা দিছে। আমি ও ৪ দিন দোকান বন্ধ কইরা ঘরে ছিলাম। এহন ভাতের চাউল নাই। তাই দোকান খুইল্লা বইছি । ঘরে থাকলে আমারে ভাত খাওয়াবে কে? জীবন বাঁচান লাগবো ত। ভাত না খাইলেও মরণ আবার অসুখ হইলেও মরণ।
কথা গুলো ৫০ বছর বয়সী জুলেখা বিবি'র। রোববার সন্ধ্যায় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, অভাব অনটনের কারণে দেশের এমন পরিস্থিতির মধ্যে দোকান খুলতে হয়েছে। ঘরে চাল নাই। আগে যা ছিল সব শেষ। না পেরে আজ রাস্তায় নামছি। জীবন বাঁচাতে কাজ তো করতেই হবে। বৃদ্ধ স্বামীর কাজে সহযোগিতা করতে তিনি বেঁচাকেনা করেন। পরিবারে আয় করার মতো কেউ নেই। তাই ফুটপাত ও সড়কের অলিগলিতে বসে তার ভ্রাম্যমাণ শুটকির দোকান। দৈনিক আয়ের টাকা দিয়েই চলে তার ছোট সংসার। করোনায় কোন সাহায্য সহযোগিতাসপায়নি জুলেখা বিবি।
জুলেখা বিবির মতো দিন আনে দিন খায় এমন হাজারো মানুষের কষ্টের শেষ নেই। আয় নেই, তাই ঘরে চাল কিনে নেয়ার সামর্থ্য নেই অসংখ্য পরিবারের। একজনের খাবার ভাগ করে খাচ্ছেন অনেকে। ঘাতক করোনা ভাইরাসের থাবায় কাঁপছে বিশ্ব। গৃহবন্দি দেশের মানুষ। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘর থেকে বাইরে না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। বন্ধ অফিস আদালত।
করোনা পরিস্থিতির কারণে বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। কয়েকদিন কাজকর্ম বন্ধ থাকায় মানুষদের মাঝে খাবারের জন্য শুরু হয়েছে হাহাকার।
আনন্দ বাজারে ফুটপাতে পিঠা বিক্রেতা ছালেহা বেগম জানান, সন্তান পেটে থাকতে স্বামী মারা গেছেন। বৃদ্ধ শশুর- শাশুড়ি আ র সন্তান নিয়েই বস্তিতে থাকেন। তার আয় দিয়েই চলে সংসার। বছরের বেশি ভাগ সময় পিঠা বিক্রি করেন। অন্য সময় বাসা বাড়িতে কাজ করেন। এখন করোনা ভাইরাসের কারণে পিঠাও বিক্রি করতে পারেন না। করোনার ভয়ে বাসা বাড়িতেও কেউ কাজে নেয় না। এমন ভাবে চলতে থাকলে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। শুনেছি চাউল, ডাল দেয়। আমরা তো পেলাম না।
চা বিক্রেতা হালিম জানান, দিনে যা রোজগার হয় তা দিনেই শেষ হয়ে যায় । যেটা জমানো হয় সেটা দিয়ে বাসা ভাড়া দেই। করোনাভাইরাসের কথা শুনেছি। সরকার যদি আমাদের সহযোগীতা করেন। বাড়ি ভাড়া ১/২ মাস ফ্রি করে দিতেন তাহলে আমরা বাড়িতে থাকতে পারতাম। এখন পেটের জ্বালা আর থাকার জন্য ঝুঁকি নিয়ে চা বিক্রি করি। কাষ্টমার ও এখন অনেক কম। ভয়ে কেউ চা খেতে চান না।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আমাদের বিপদের সময় এগিয়ে আসলে কষ্ট কিছুটা হলেও কমে যেত।