করোনা মহামারীর কারণে বহু বৃটিশ নাগরিক আটকে পড়েছেন পৃথিবীর নানা দেশে। করোনা ভাইরাসজনিত কারণে বিমানের ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা নিজেদের বাড়ি ফিরতে পারছেন না। ভারত, পাকিস্তান থেকে শুরু করে পেরু পর্যন্ত নানা দেশেই তারা পরিবার পরিজন থেকে দূরে অসহায়ভাবে অবস্থান করছেন। বার্মিংহাম লাইভের এক সংবাদে তুলে ধরা হয়েছে এরকম কিছু আটকে পড়া নাগরিকের কথা। বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব ৩০ মার্চ ঘোষণা দিয়েছেন, নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ফ্লাইটের জন্য ৭৫ মিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হবে। সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, বিমানের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ইজিজেটের মতো বাণিজ্যিক এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কাজ করা হবে। তবে আটকে পড়া ও তাদের স্বজনরা জানতে পারছেন না কবে সে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হবে।
ওয়াজিদ মজিদ আটকে পড়াদের একজন।
লকডাউনের ঘোষনা দেয়ার পর তিনি পরিবার নিয়ে পাকিস্তানে আটকে পড়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার মনে হচ্ছেÑ বৃটিশ সরকারের কাছে আমরা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছি। কারণ আমরা কবে বাড়ি ফিরতে পারবো তার কোন সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাইনি। কবে বাড়ি ফিরতে পারবো পাকিস্তান কর্তৃপক্ষও কোন তথ্য দেয়নি। আমার আগের রিটার্ন টিকিট কাটা থাকলেও তা কাজে আসছে না।
আর বিমানের যে ওয়ানওয়ে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার পাউন্ড পড়ছে তার দাম। যা আমাদের সাধ্যের মধ্যে নেই। আমি খুবই অসহায়বোধ করছি, কারণ আমার তিনটি যুবতী মেয়ে এখন বৃটেনে অবস্থান করছে। এরকম একটি নাজুক সময়ে আমার প্রিয়জনের পাশে থাকা প্রয়োজন। মজিদ বলেন, আমি একজন করদাতা। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমার সাহায্য প্রয়োজন। আমার মতো হাজারো বৃটিশ নাগরিক হলিডে-তে গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন। বৃটিশ সরকারের উচিত চাটার্ট ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে নাগরিকদের দেশে ফিরতে সাহায্য করা।
অন্যদিকে রিজওয়ানা আরমানির পরিবার আটকে পড়েছেন পাকিস্তানে। তিনিও অসহায়বোধ করছেন। কারণ তার পরিবারের সদস্যদের ঔষুধের প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমি এখন আক্ষরিক অর্থেই মাথাহীন মুরগির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন হার্টের ও ডায়াবেটিসের রোগি রয়েছেন। যাদের নিয়মিত ইনসুলিনসহ অন্যান্য ঔষুধের প্রয়োজন। সেখানে তাদের ঔষুধ ফুরিয়ে গেছে। সেখানে তারা সহজে প্রয়োজনীয় ঔষুধ যোগাড় করতে পারবেন না। তিনি বলেন, মধ্য এপ্রিলে রমজান মাস শুরু হচ্ছে। এই সময় তাদের খাবার-দাবার, ঔষুধসহ প্রার্থনায় জরুরি সহায়তা দরকার। এছাড়া সেখানে আমাদের উপর নির্ভরশীল শিশুরা রয়েছেন।
সাটন কোল্ডফিল্ডের বাসিন্দা রবি চাহানের বয়স্ক পিতা-মাতা ভারতে আটকে পড়েছেন। তাদের দুইজনের বয়সই সত্তরোর্ধ। তার পিতা একজন হার্টের রোগি। সেখানে তারা দুইজনই উচ্চরক্তচাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি আমার বোনের পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছে, তার চার বছরের একটি শিশুও রয়েছে। এছাড়া যোগাযোগের অসুবিধার কারণে সেখানে তাদের পরিস্থিতি জানাও সহজ নয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করাও তাদের জন্য কঠিন। ফলে আমি ও আমার পরিবার খুবই উদ্বিগ্ন। রবি চাহাল জানান, তিনি স্থানীয় এমপি ও কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তারা প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের ফিরে পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।
তালিব হোসেন ও তার স্ত্রী পাকিস্তানে আটকে পড়েছেন। ২৩ তারিখ তার বৃটেন ফেরার কথা থাকলেও ২১ মার্চ পাকিস্তান সীমানা বন্ধ করায় তারা আটকা পড়েন। বর্তমানে তারা তাদের এক আত্মীয় বাড়িতে অবস্থান করছেন। তালিব হোসেন জানিয়েছেন তিনি একজন সেলিয়াক (খাদ্যনালী সংক্রান্ত) রোগি। এছাড়া তিনি যেখানে অবস্থান করছেন সেটা একটি প্রত্যন্ত গ্রাম, সেখানে সহজে প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারছেন না। তিনি তার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের মাঝে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। তারা প্রচ- দু:শ্চিন্তায় ভুগছেন। একই রকম পরিস্থিতিতে পড়েছেন জেহান জেব। তিনি বৃটেনে থাকলেও তার ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিরা পাকিস্তানে আটকে পড়েছেন।