করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসার ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন হুয়াওয়ের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এরিক জু। মঙ্গলবার চীনের সেনঝেন শহরে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা অংশ নেন। হুয়াওয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯ এর যাবতীয় অর্থনৈতিক বিবৃতি নিরীক্ষণ করেছে কেপিএমজি, যেটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বড় চারটি অ্যাকাউন্টিং ফার্মের একটি।
সংবাদ সম্মেলনে হুয়াওয়ের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইরক জু বলেন, ২০১৯ সালটি হুয়াওয়ের জন্য অসাধারণ একটি বছর ছিল। বাইরের নানা চাপ থাকা সত্ত্বেও হুয়াওয়ের কর্মীরা কেবল গ্রাহকদের জন্য ভালো মানের নতুন পণ্য ও সেবা তৈরির প্রতি অধিক মনোযোগ দিয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, জরুরি পরিস্থিতিতে প্রযুক্তি ও অনলাইন নির্ভর জীবনযাত্রার বিষয়টিও আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে এখন। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার উপরই নির্ভর করবে চলতি বছরে ব্যবসার পরিণতি।
তবে হুয়াওয়ে ডিজিটাল সেবার সম্প্রসারণে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী কোম্পানিটির বিক্রয় আয়ের পরিমাণ প্রায় ৮৫৮.৮ বিলিয়ন চীনা ইউয়ান বা ১২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অন্যান্য বছরের চেয়ে যা প্রায় ১৯.১ ভাগ বেশি। গত বছর হুয়াওয়ের মোট লাভের পরিমাণ প্রায় ৬২.৭ বিলিয়ন ইউয়ান (৮.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছুঁয়েছে। এছাড়া পরিচালন কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ লেনদেনের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৯১.৪ বিলিয়ন ইউয়ানে (১২.৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পৌঁছেছে, অন্যান্য বছরের চেয়ে যা প্রায় ২২.৪ ভাগ বেশি।
প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও গবেষণার লক্ষ্যে চলমান কর্মকা-ের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, ২০১৯ সালে অর্জিত রাজস্বের প্রায় ১৫.৩ ভাগ হুয়াওয়ে বিনিয়োগ করেছে গবেষণা ও উন্নয়নখাতে, টাকার অঙ্কে যা প্রায় ১৩১.৭ বিলিয়ন ইউয়ান (১৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সমান। এই নিয়ে গত এক দশকে গবেষণা ও উন্নয়নখাতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় করা মোট অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়ালো। ২০১৯ সালে হুয়াওয়ের ক্যারিয়ার ব্যবসা ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিয়েছে। ৫ জি’র অধিকতর বাণিজ্যিক গ্রহণ এবং এর অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে নতুন উদ্ভাবন বাড়াতে কোম্পানিটি বিশ্বের অন্যান্য ক্যারিয়ারগুলোর সঙ্গে মিলে সম্মিলিতভাবে ৫জি উদ্ভাবন কেন্দ্র স্থাপন করেছে।
হুয়াওয়ের রুরালস্টার বেজ স্টেশন সমাধানগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেটওয়ার্ক সমস্যারও কার্যকর সমাধান করতে পারে। এই সমাধানগুলো বর্তমানে ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত সারাবিশ্বের চার কোটিরও বেশি মানুষের কাছে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিয়েছে। ২০১৯ সালে হুয়াওয়ের ক্যারিয়ার ব্যবসার বিক্রয় আয়ের পরিমাণ প্রায় ২৯৬.৭ বিলিয়ন ইউয়ানে (৪২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পৌঁছেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় যা প্রায় ৩.৮ ভাগ বেশি। ডিজিটাল বিশ্বের ভিত্তি স্থাপনে সহায়তা করার লক্ষ্যে হুয়াওয়ের এন্টারপ্রাইজ ব্যবসা শিল্পখাতগুলোর ডিজিটাল রূপান্তরে গ্রাহকদেরকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে চলেছে। বিশ্বব্যাপী ৭০০টিরও বেশি শহর এবং ২২৮ ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ কোম্পানি হুয়াওয়েকে তাদের ডিজিটাল রূপান্তরের অংশীদার হিসাবে বেছে নিয়েছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্বের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র প্রস্তুত করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে নিজস্ব কম্পিউটিং কৌশল ঘোষণা করেছে হুয়াওয়ে। এই কৌশলের অংশ হিসাবে, কোম্পানিটি বিশ্বেও দ্রুততম এআই প্রসেসর ‘অ্যাসেন্ড ৯১০’ এবং এআই প্রশিক্ষণ ক্লাস্টার ‘অ্যাটলাস ৯০০’ চালু করে। ২০১৯ সালে হুয়াওয়ের এন্টারপ্রাইজ ব্যবসা থেকে বিক্রয় আয় প্রায় ৮৯.৭ বিলিয়ন ইউয়ান (১২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছুঁয়েছে, অন্যান্য বছরের চেয়ে যা প্রায় ৮.৬ ভাগ বেশি। গ্রাহক ব্যবসায় বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রেখেছে হুয়াওয়ে । প্রতিষ্ঠানটি বছরব্যাপী মোট প্রায় ২৪ কোটি স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। এছাড়া ব্যক্তিগত কম্পিউটার, ট্যাবলেট, পরিধানযোগ্য যন্ত্র, স্মার্ট স্ক্রিন সহ সব ধরনের যন্ত্রে নির্বিঘ্ন এআই জীবন পরিম-ল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অধিকতর অগ্রগতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালে হুয়াওয়ের গ্রাহক ব্যবসা থেকে বিক্রয় আয় চীনা ইয়েনের হিসেবে প্রায় ৪৬৭.৩ বিলিয়ন ইউয়ান বা ৬৬.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, অন্যান্য বছরের চেয়ে যা প্রায় ৩৪ ভাগ বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অঞ্চলভিত্তিক আয়ের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালে হুয়াওয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে চীনে। দেশটির বাজার থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৭২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অন্য বছরের চেয়ে যা প্রায় ৩৬.২ ভাগ বেশি। এর পরেই রয়েছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চল। এ অঞ্চল থেকে আয় হয়েছে ২৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা অন্য বছরের তুলনায় ০.৭ ভাগ বেশি। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে গতবছর আয় হয়েছে ১০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্য বছরের তুলনায় এটি ১৩.৯ ভাগ বেশি, বছরভিত্তিক আয় বৃদ্ধির হারে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (চীন প্রথম)। এছাড়া গতবছর আমেরিকা অঞ্চল থেকে আয় হয়েছে ৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর্থিক হিসেবে যা অন্য বছরের চেয়ে ৯.৬ ভাগ বেশি।