× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনায় মৃতব্যক্তির লাশ নিয়ে আসেন শুধু চালক /‘চার ভাই মি‌লে নে‌মে প‌ড়েন অ‌চেনা ব্য‌ক্তির লাশ দাফ‌নে '

অনলাইন

মোহাম্মদ ওমর ফারুক
(৪ বছর আগে) এপ্রিল ১, ২০২০, বুধবার, ১২:০২ অপরাহ্ন

বিকেল চারটা। খিলগাঁও তালতলা কবরস্থান। চারপাশ সুনসান নিরবতা। সব নিরবতা ভেঙ্গে  সাইরেন বাজিয়ে ঢুকলো একটি অ্যাম্বুলেস। অ্যাম্বু‌লেন্স থে‌কে নাম‌লেন সাদা পি‌পিই  পড়া চালক ।সাথে নেই পরিবারের কোনো সদস্য । কবর খুঁড়া ব্যাক্তিও আতঙ্কে পালিয়েছে অনেক আগেই। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুলেন্স চালকও পড়েছেন মহাবিপদে। এই যেন হরর মুভির দৃশ্য।
উৎসুক জনতা বাসা থেকেই দেখছেন এমন দৃশ্য। কিন্তু কি হবে এখন? বিকেল চারটার দিকে লাশ নিয়ে আসলেও রাত আট’টা বেজে গেলো কিন্তু এই লাশ দাফনের কোনো সুরাহা হচ্ছিলো না।  কে সুরাহা করবে এই লাশের? দাফনবিহীন থাকবে লাশ!

ঘটনা ২৫ মার্চ বুধবার। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসলো খিলগাঁও মডেল কলেজের অর্নাস পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। কিন্তু এই আতঙ্কে তার বড় ভাই তাকে যেতে দিচ্ছেলো না। কারণ করোনা ভাইরাস আতঙ্কে পুরো বিশ্ব। তাছাড়া ক’দিন আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত  লাশ দাফন নিয়ে এলাকাবাসী ছিলো আতঙ্কে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাকে খিলগাঁওয়ের তালতলা কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু শুরুতে এই কবরস্থানে দাফন করতে বাঁধা দিচ্ছেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছেন এলাকাবাসী।

 এ‌দি‌কে কে চায়‌  নি‌জের ছোট ভাই‌কে এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে ফেল‌তে। তাই অর্নাস পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের আগ্রহ দেখে নিজেও ছুটে আসলেন মৃতদেহ দাফনে। এরপর একেক করে একই পরিবারের চারজন রাজি হয়েছেন স্বেচ্ছায়। এই চার যুবকই খিলগাঁও কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা। তারা হাসপাতাল থেকে দেয়া চারটি পিপিই পরে নেমে পড়েন লাশ দাফনে। সেই গল্পই শুনবো তাদের একজনের কাছ থেকে। তিনি একটি রিয়েল অ্যাস্টেট কোম্পানির অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। পরিবারের বড় সন্তান। তিনি, তার অর্নাস পড়ুয়া মেজো ভাই, কলেজে পড়ুয়া ছোট ভাই ও মামাতো ভাই মিলে পুরো লাশ দাফনের কাজটি করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, কেউ  লাশ‌টি  ধর‌তে রা‌জি হয়‌নি। মানবতার দিক থেকে চিন্তা করে লাশ দাফনের কাজটা করেছি আমরা। শুধু আমরা নই আশেপাশে কয়েকজন লোক ছিলো। তারাও সহযোগিতা করেছে আমাদের। কিন্তু তারা ছিলো অনেক দূরে। আমি আমার মেজো ভাই, আমার ছোট দুই ভাই , আমার মামাতো ভাই মূল কাজটি করেছি। সঙ্গে এলাকাবাসীও ছিলো।

প্রথমে আমি নিজেও খুব আতঙ্কিত ছিলাম। সেখানে কাউন্সিলরও ছিলো। কিন্তু লাশের সাথে আসছে মাত্র একজন লোক । অ্যাম্বুলেন্স চালক। পরিবারের কেউই ছিলো না সঙ্গে। কিন্তু লাশটা তো দাফন করতে হবে। তাছাড়া এই লাশটি দেখে আমার মায়াও হয়েছিলো। এমন চিন্তা করেই  এগিয়ে গেলাম। অ্যাম্বুলেন্সটিতে হাসপাতালে থেকে ৫টি পিপিই দেয়া ছিলো এর মধ্যে ড্রাইভার একটা পরা ছিলো, বাকি চারটা আমরা চার ভাই পরেছি। পরে কবরে গিয়ে দেখলাম ভালো করে খুঁড়া ছিলো না, তাই কবরটাকে ভালো করে খুঁড়ে নিলাম। আমার ছোট তিন ভাই লাশ ধরে কবরে নামিয়েছে।তারপর মাটি দিয়েছি।

তিনি বলেন, লাশটি ছিলো কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের। লাশটি একা পাঠিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কেউ ছিলো না। সবাই প্রথমে ভেবেছিলেন সংশ্লিষ্টরা মনে হয় একটু পরেই আসবে। এভাবে করতে করতে পুরো সন্ধ্যা হয়ে যায়।যার কারণে এই ঝুঁকিটা নিতে হয়েছে আমাদের। আমরা লাশ‌টি দাফন না কর‌লে এভা‌বেই পড়ে থাক‌তো । কারণ মানুষ ক‌রোনা নি‌য়ে আত‌ঙ্কিত। এই  লাশ দাফ‌নের আরেকটা বার্তা হ‌চ্ছে,মানুষ যে‌নো আত‌ঙ্কিত না হন। দে‌খেন একটা লাশের সা‌থে প‌রিবারের কেউ  আসে‌নি। অথচ এই  প‌রিবারটা গড়‌তে হয়‌তো কত কষ্ট কর‌তে হ‌য়ে‌ছে তা‌কে। কিন্তু জানাজায় অংশ নি‌তে পার‌লো না প‌রিবা‌রের কেউ। কি প‌রি‌স্থি‌তি, কি হতভাগ্য!

ক‌রোনা ভাইরা‌সে আক্রান্ত কো‌নো মৃত  ব্য‌ক্তি‌কে এই কবরস্থানে দাফ‌নের ঘটনা এটাই  প্রথম । সেই লাশ দাফনের সময় সংশ্লিষ্ট  প্রশাসনের কেউ ছিলো না।  এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে ভুললেন না এই যুবক। ত্রিশ বছর বয়সী এই যুবক বলেন ,এমন পরিস্থিতিতে একটা লাশ একা পাঠানো যায়? কাউন্সিলর ও আমরা না থাকলে এই লাশটির কি হতো?

তিনি বলেন, যারা কবর খুঁড়তে এসেছিলেন তারাও শাবল -কোদাল রেখে পালিয়ে যান।আমাকে কবরও খুঁড়তে হয়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স চালকও লাশ দাফনে সহযোগিতা করেছিলেন। আমাদের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর চালকে অনুরোধ করলে তিনি বিষয়টি শুনেন। য‌দিও এখন কাউ‌কে দাফন কর‌লে প্রশাসন থে‌কে লোক পাঠা‌নো হ‌চ্ছে।
দাফন করা ব্য‌ক্তি‌কে চি‌নেন কিনা এমন প্র‌শ্নে তি‌নি ব‌লেন, বা‌ড়ির পা‌শে কবরস্থান । এখা‌নে অ‌নেক লাশ দাফন হয়। সবাই‌কে চেনা সম্ভব না। তা‌কেও না। ওই  লা‌শের প‌রিবা‌রের কা‌রো সঙ্গেও কথা হয়‌নি। শুধু মাত্র মান‌বিকতা বোধ থে‌কে এই  কাজ‌টি আমরা ক‌রে‌ছি। এখা‌নে অ‌নেক লাশ আসে ব্য‌ক্তিগতভা‌বে আমি সুযোগ পে‌লে জানাজায় অংশ নিই।
জানা যায়, মৃত ব্যক্তিকে মাদারীপুরে দাফন করার কথা ছিলো। পরে তাকে আর সেখানে নেয়া সম্ভব হয়নি। ঢাকা উত্তর সিটি ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাখাওয়াত হোসেন সওকত  পুরো বিষয়টি নিজে থেকে তদারকি করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর