সড়ক, মহাসড়ক যেন ভূতের গলি। গাড়ি চলছে না। নীরব নিস্তব্ধ। বিশেষ প্রয়োজনে কেউ বের হলেও দ্রুত পৌছাচ্ছে গন্ত্যব্যে। সন্ধ্যার পর তো এক ভয়ানক পরিস্থিতি। কারণ দেশজুড়ে চলছে সঙ্গরোধ কার্যক্রম। এজন্য বাড়ানো হয়েছে ছুটিও। শুধু দেশ কেন? গোটা বিশ্ব আজ এক কাতারে।
এশিয়া থেকে ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে আমেরিকা সর্বত্র এক আওয়াজ। কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গরোধের আহবান। আকুতি। করোনার সঙ্গে যুদ্ধে পরাস্ত সবাই। মৃত্যু সবার দুয়ারে। ঢাল, তলোয়ারবিহীন যুদ্ধে লিপ্ত পৃথিবী। প্রতিপক্ষ করোনা। এ যুদ্ধে মানব জাতি ছিটকে পড়ছে। যুদ্ধ থেকে বাঁচতে সঙ্গরোধই এ মূহূর্তে একমাত্র দাওয়াই। কিন্তু এ দাওয়াই গ্রহন করছেন কজন? সড়ক মহাসড়কে ভূতূড়ে পরিবেশ থাকলেও মহল্লায় মহল্লায়, গ্রামে গ্রামে অন্য পরিস্থিতি। অন্য পরিবেশ। গত সন্ধ্যায় বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে ফার্মেসিতে যেতে বের হয়েছিলাম। বাসা থেকে একটু এগিয়ে চৌরাস্তা। সেখানে মানুষ আর মানুষ। একটু পর পর জটলা। তারা আড্ডায় ব্যাস্ত। আলোচনায় ব্যাস্ত। কেউ জোরে হাসছেন। কেউ কথা বলছেন। সামনে পা না বাড়িয়ে ফিরে এলাম। যেখানে প্রত্যেককে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা। সঙ্গরোধ বসবাস করার কথা। সেখানে মানুষের এত সমাগম ! ইউরোপের দেশে দেশে এমনকি আমেরিকায় যেখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ মরছে। বাংলাদেশেও থাবা মেলেছে করোনা। আক্রান্ত অনুযায়ী মৃত্যুর হারও বেশি। এর উপর প্রতিদিন সর্দি জ্বরে মৃত্যুর সংবাদতো আছেই - সেখানে কিভাবে আমরা সঙ্গরোধ ছেড়ে সঙ্গযোগ করে আড্ডা দিচ্ছি? মনে একটুও কি ভয় নেই? একজনকে এ প্রশ্ন করতেই বললেন, কি করব ভাই? সারাদিন বাসায় থাকতে ভাল লাগে না। তাই একটু বেরিয়েছি। একটু আড্ডা দিয়েই বাসায় কোয়ারেন্টিনে ফিরে যাব। প্রশ্ন জাগে, এ কোয়ারেন্টিনে লাভ কি? শুধু ঢাকা শহরেই যে এ অবস্থা তা নয়। গ্রামে গ্রামে, জেলা, উপজেলায় সর্বত্র একই অবস্থা। মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে আড্ডা। লুডু, ক্যারাম খেলা চলছে অনবরত। আর এ লুডু ও ক্যারাম খেলা দেখতে হচ্ছে গনজমায়েত। সবার একই কথা- সময় কাটছে না। এটা সময় কাটানোর একটা ব্যাবস্থা। কিন্তু একবারও ভাবছে না তারা, এই সময় কাটানোর ব্যাবস্থা ডেকে আনতে পারে মহাবিপদ। থাবা মেলতে পারে করোনা। খুবলে খেতে পারে মহল্লার পর মহল্লা। গ্রামের পর গ্রাম। না ! কারো মুখে একটুও ভাবনা নেই। চিন্তার রেখা নেই। ছেলে বুড়ো সবাই এক লাইনে। কদিন ধরে ফেসবুক দেখলে চমকে উঠতে হয়। বহু মানুষ জড়ো হয়ে একসঙ্গে সেবা করছেন জনতার। কোন নেতা কারো মুখে মাস্ক পড়িয়ে দিচ্ছেন। কেউবা এক প্যাকেট কিংবা এক ব্যাগ খাদ্যসামগ্রী কারো হাতে তুলে দিচ্ছেন। আর ওই নেতার পিছনে মানুষের ঢল। আবার কাউকে কাউকে দেখা যাচ্ছে পিপিই বিতরন করতে। কেউ কেউ এসব পিপিই পড়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে দিচ্ছেন। মনে হয় করোনা আসেনি । তাদের জন্য নিয়ে এসেছে আনন্দ, উল্লাস। অথচ এসব দ্রব্য কিংবা পণ্যসামগ্রী নীরবে নিভৃতে অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়া সম্ভব। সেটা করলে সবাই ঝুকিমুক্ত থাকতে পারবেন। সঙ্গরোধ ও থাকতে পারবেন। সঙ্গযোগ যে কত ভয়ংকর তার মাসুল দিচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা। এ থেকে কি আমরা শিক্ষা নিতে পারি না। বাংলাদেশে ছুটির প্রথম দিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অ্যাকশন চোখে পড়েছিল। এ নিয়ে দেশজুড়ে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। বর্তমান সঙ্গযোগের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে বাঙালির জন্য সেই প্রবাদ বাক্যই ঠিক। যা হলো-ডান্ডাই ঠান্ডা। সেদিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যা করেছিল সেটা অব্যাহত থাকলে বর্তমানে এ দৃশ্য দেখতে হত না। সবাইকে ভাবতে হবে নিজে বাঁচুন অন্যকেও ঝুঁকিমুক্ত রাখুন। অন্যথায় করোনার গতিপথ পাল্টে যেতে পারে। হয়তো ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন কিংবা আমেরিকার খাতায় নাম লেখা হতে পারে বাংলাদেশেরও । এখনো সময় আছে পাশের দেশ ভারত থেকে শিক্ষা নিন। নিজেকে একেবারেই সঙ্গরোধ করে ফেলুন। সমাজকে নিরাপদ রাখুন। খেয়াল করে দেখুন চারিদিক থেকে যেসব খবর আসছে তা ভালো বার্তা দিচ্ছে না। অতএব সাবধান।