× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বৃদ্ধাশ্রমগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে

প্রবাসীদের কথা

আইরিন পারভীন খান ইতালি থেকে
১ এপ্রিল ২০২০, বুধবার

কোভিড-১৯ সংক্রামণে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর রেকর্ড গড়ছে ইতালি। করোনা শনাক্তের প্রায় আড়াই মাস অতিক্রম হলেও এখনো পর্যন্ত কমানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল, থামছে না সংক্রমণ।ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা একলক্ষ ছাড়িয়ে ১০৫,৭৯২ জন।পাঁচ সপ্তাহের ব্যাবধানে মৃতের সংখ্যা ১ জন হতে ১২,৪২৮ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল একদিনেই মৃত্যু হয়েছে ৮৩৭ জনের। বর্তমানে রোগীর সংখ্যা ৭৭,৬৩৫জন।চিকিৎসাধিন আছেন, ২৮,১৯২ জন ইনসেন্টিভ কেয়ারে আছেন ৪০২৩জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, ১৫,৭২৯ জন। করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৫,৪২০জন। মারা গিয়েছেন ২জন বাংলাদেশী । হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সমূহ সব সময় ভিড় থাকায়, সংক্রামণের লক্ষণ আছে এমন রোগীদের বাসায় থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্চে।
এ ক্ষেত্রে পরিবারের সকলের কাজ হতে সম্পূর্ণ আলাদা রাখতে হবে। জরুরী অবস্থা ঘোষণার এক মাস পরেও উন্নতি হয়নি পরিস্থিতির। প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছে কোভিড-১৯ রোগটির সংক্রামণ সম্পূর্ণ দেশটিতে। মধ্য ইতালির গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ লম্বারদিয়া সহ বেশ কিছু অঞ্চল পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। সকল যুদ্ধের মতোই অদৃশ্য করোনার আক্রমণের প্রধান শিকার দেশটির দুর্বল জনগোষ্ঠী, লম্বারদিয়া সহ অন্যন্য অঞ্চলের বৃদ্ধাশ্রম গুলোতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকা প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ মারা যাচ্ছেন। যেই পরিমান মানুষ সারা বছরে মারা যান তার সমপর্যায়ের মানুষ মারা গিয়েছেন গত তিন সপ্তাহে বৃদ্ধাশ্রম গুলোতে। যাদের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ পুরুষ, ৩০ ভাগ নারী। বয়সের হিসেবে দেখা যায়, প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ ৭৯ বছরের বেশি বয়সী। আছে ডায়াবেটিস,হৃদরোগ, কিডনি রোগ,শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ার মত তিনটি জটিল রোগে আক্রান্ত এমন রোগীদের মৃত্যু হার ৫৩ ভাগ, দুইটি জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হার ২৫ ভাগ ২১ ভাগ রোগী একটি জটিল রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় এক হাজার নার্স, ডাক্তার, মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতাধিকের বেশি। এছাড়াও হাস্পালের ক্যান্টিন, পরিবহণ সার্ভিস সহ অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনা মহামারী মোকাবেলায় অবকাঠামোগত পর্যাপ্ত ব্যাবস্থার ঘাটতি ছিল। হাসপাতাল গুলোতে সংক্রামণ রোগের জন্য সীমাবদ্ধ ব্যাবস্থা, ইনসেনটিভ কেয়ার, ভেন্টিলেটর, করোনাভাইরাস টেস্ট কিট সহ ডাক্তারদের জন্য পর্যাপ্ত পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্টের (EEP) ঘাটতি অবস্থার জটিলতা আরও বাড়িয়ে তোলে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে যখন রোগটির প্রকোপ শুরু হয়, ইতালিতে টোটাল ইনসেন্টিভ কেয়ার এর সংখ্যা তখন ৫৩২৪ টি। যারমধ্যে সংক্রামণ রোগের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৯৭৪টি। মার্চের শেষ নাগাদ এর সংখ্যা ৮৩৭০টি আগের চেয়ে প্রায় ২৬ ভাগ বেশি। মাস্ক, গ্লভস, গগলসের যোগান মাত্র ৩০ ভাগ। এখন যা শুধু মাত্র কোভিড-১৯ এর চিকিৎসক দের আগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। অবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য কোন কোন অঞ্চলে, ডাক্তার গন নিজেরাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার টেস্ট করছেন। যাতে করে রোগটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে না পরে, সেই সাথে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সমুহে চাপ কম পরে। ইতিমধ্যে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সহ ডাক্তার নার্স পাঠিয়েছেন অনেক বন্ধু রাষ্ট্র। মাত্র দশদিনে অত্যাধুনিক কোভিড হাসপাতাল তৈরি হয়েছে মিলানোতে। জেনোয়া তে যাত্রীবাহি জাহাজ কেও রুপাতর করা হয়েছে হাসপাতালে। লম্বারদিয়ার জরুরী চিকিৎসা সেবা বাড়াতে দেশব্যাপী ৩০০ ডাক্তার কে আহবান করা হলে, ৭৮৮০ জন আবেদনে সারা দেন। মানবতার এক অপরূপ অধ্যায় গড়েন, ইতালির চিকিৎসা সেবকরা। শুরুতে হালকা ভেবে নিলেও এক সপ্তাহে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠে কোভিড-১৯। ছড়িয়ে পড়া সংক্রামণ বাড়তে থাকা মৃতের সংখ্যা সর্বোপরি নিরাময়ের কোন উপায় খুঁজে না পাওয়া আতঙ্ক বাড়িয়ে তোলে। করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের শিকার বয়স্ক মানুষ হলেও, এর ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে প্রথম সিদ্ধান্ত নেয়া হয় স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি বন্ধের। যাতে করে রোগটি নতুন প্রজন্ম কে আঘাত না করে। রেড জোন ঘোষণা করা হয় মধ্য ইতালিকে। ইতালিতে করোনাভাইরাস মহামারী বিপর্যয়ের আরেকটি বড় কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এখনো বিধস্ত অঞ্চলগুলো হতে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট না পৌঁছানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। শুধু মাত্র নির্দিষ্ট দপ্তর হতে সার্টিফিকেট দেয়ার বিলম্বের কারণে। একই সাথে গনতন্ত্র কখনো কখনো হুমকি হয়ে দাঁড়ায় মহামারীর অবস্থা মোকাবেলায়। জরুরী অবস্থা জারী করা হলেও সহজে মানুষ তা মানতে চায় না। শিল্প প্রতিস্তান বন্ধ রাখতে সরকারকে কাল ক্ষেপণ করেতে হয়েছে অনেক। এখন এক প্রকার অবরুদ্ধ সম্পূর্ণ ইতালি। আগামী ৩ই এপ্রিল পর্যন্ত ফরমান জারী হলেও আজ অফিসিয়াল ভাবে জানানো হয়, জরুরী অবস্থা চলবে আগামী ১৩ ই এপ্রিল পর্যন্ত। ইতিমধ্যে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ায়, বিরোধীদল গুলোর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার।জনগণের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে ভয় ও অনিশ্চয়তা। সামাজিক নিরাপত্তা সহ আর্থিক সুবিধা দেয়া, ছাঁটাই না করা, হোম লোণ বন্ধ করার মত ঘোষণা আসলেও, মানুষ নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। কোন কোন অঞ্চলের সুপারমার্কেট হতে অভাবি মানুষ গুলো বাজার নিয়ে যাচ্ছে পেমেন্ট না করে। ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেলা ৫০হাজার বিলিয়ন বাজেট ধার্য করেছেন করোনা মোকাবেলায় জনগণের সহায়তার জন্য। "কুরা ইতালিয়া" (cura italiya) নামে দেশব্যাপী সর্বস্তরের মানুষকে দেয়া হবে সামাজিক নিরাপত্তা। দেন দরবার চলছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথেও। ইউরোবন্ড বা করোনাবন্ড নামে আর্থিক সহায়তা মিলবে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোভুক্ত দেশগুলোর। ইতালির প্রধানমন্ত্রী, প্রোফেসর জুসেপ্পে কন্তে সহ ইতালিয়ান সরকার সাহসিকতার সাথে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন। সাধারন জনগণের খাদ্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাই এখন তাদের প্রথম লক্ষ্য।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর