× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

লকডাউন কেড়ে নিয়েছে রুবিনার কানের দুল

অনলাইন

রুদ্র মিজান
(৪ বছর আগে) এপ্রিল ৩, ২০২০, শুক্রবার, ৫:১৫ পূর্বাহ্ন

বৃষ্টি, জোসনা, মনোয়ারা।  হাতিরঝিলে একটি বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছেন তিন জন। অন্যান্য দিনের মতো মুখে কসমেটিকসের প্রভাব নেই। সাজগোজ নেই। সাদামাটাভাবেই বসে কথা বলছিলেন। দু’জনের মুখে মাস্ক থাকলেও জোসনার মাস্ক নেই। মুখে বিষণ্নতার ছাপ স্পষ্ট। ক্ষাণিকটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। মগবাজারে একই বাসায় থাকেন তারা।
মরণঘাতি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাসায় না থেকে বাইরে কেন, জানতে চাইলে তারা জানান, দু’ দিন যাবত বাসায় খাবার নেই। পরিচিত এক বাড়িওয়ালা খাবার দিয়েছেন। তাও শেষ হয়ে গেছে। সকাল থেকে না খেয়ে আছেন। বাধ্য হয়েই বাইরে বের হয়েছেন।

জীবন বাঁচানোর এই লকডাউন কেড়ে নিয়েছে রুবিনার কানের দুল। মান্ডা এলাকায় থাকেন রুবিনা। লকডাউনের পর থেকে রাস্তায় বের হতে পারেন না। দু’-একবার বের হয়েও ফায়দা হয়নি। দোকানগুলো বন্ধ। তেমন পথচারীও নেই। কেউ টাকা-পয়সা, খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেনি। একই বাসায় চার জন থাকেন তারা। খাবারের জন্য কানের দুলটি বিক্রি করে দিয়েছেন রুবিনা। শুধু রুবিনা নয়, হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রায় সকলের অভিন্ন অবস্থা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের এই দিনে খাবার সঙ্কটে পড়েছেন তারা। তৃতীয় লিঙ্গের এই জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা থেকেও।

দুলটি বিক্রির পর বাসায় বসে নিরবে কেঁদেছেন রুবিনা । কানে স্বর্ণের দুল পড়ার স্বপ্ন ছিলো ছোটবেলা থেকেই। শৈশবে দেখেছেন, বড় বোনেরা কানে দুল পড়তো। তখন তারও খুব ইচ্ছে হতো। ছোটবেলা থেকেই সাজগোছ করতেন তিনি। তখনও শারীরিকভাবে তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়টি সেভাবে প্রকাশ পায়নি। ছেলে হয়ে মেয়েদের মতো সাজগোছ করতে গেলেই মা-বাবা এতে রাগ করতেন। মারধরও করতেন। এরমধ্যেই বোনের জামা ও দুল পড়েছিলেন তিনি। তারপর বেদম মারধরের শিকার হন। সেই থেকে বাসা ছেড়ে আসেন ঢাকায়। আশ্রয় নেন গুরুমার কাছে।

হাটে-রাস্তায়, নেচে-গেয়ে সাহায্য তোলে যে টাকা পান তা তোলে দেন গুরুমার হাতে। রুবিনার অতীতের গল্প জানতেন গুরুমা। প্রায় পাঁচ বছর আগে সেই গুরুমা তাকে কানের দুল উপহার দেন। শখের দুলটি পেয়ে কী যে খুশি হন রুবিনা। সেই দুলটি পেটের খাবার জুটাতে আজ বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।  

হিজড়ারা সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে জানান এনজিও কর্মকর্তা মো. সারোয়ার জাহান রুপম। বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র কেয়ার এন্ড সাপোর্ট বিষয়ক এই কর্মকর্তা জানান, অনেক হিজড়াদের পরিচয়পত্র নেই। তারা সরকারি সাহায্যতো এমনিতেই পাবে না। তাছাড়া হিজড়ারা লাইনে দাঁড়ালে তাড়িয়ে দেয়া হয়। বাড়ির গেইটের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয় না।

বুধবারের একটি ঘটনা। ধানমন্ডিতে এক বিত্তশালী ত্রাণ দিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে সেখানে যান ঝিলিক, রুনা ও ময়ূরী। তারা লালবাগের বেড়িবাঁধ এলাকায় থাকেন। হিজড়া দেখেই দারোয়ান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। কিছুতেই ভেতরে যেতে দিবেন না। ঝিলিক, রুনা ও ময়ূরী অনুনয় করেন। বারবার চেষ্টা করেন। ভেতরে দরিদ্র অনেক মানুষ ঢুকলেও তাদের যেতে দেয়া হচ্ছিলো না। এক পর্যায়ে তারা ভেতরে ঢুকতে জোর করেন। ঠিক তখনই লাঠি দিয়ে আঘাত করেন দারোয়ান। ময়ূরী বলেন, শেষ পর্যন্ত ত্রাণ জুটেনি, মার জুটেছে আমাদের কপালে।

রাজধানীর মান্ডা, মুগদা, গোপীবাগ, ডেমরা. নারিন্দা, মানিকনগর বালুল মাঠ, বাসাবো, শাহজাহানপুর এলাকায় বিপুল সংখ্যক হিজড়াদের বসবাস। হিজড়াদের নেত্রী দিপালী বলেন, হিজড়াদের আয়ের মাধ্যম হচ্ছে রাস্তায় রাস্তায় সাহায্য আদায়, বাসা বাড়িতে নাচ গান করে উপহার গ্রহণ। এসব আয় থেকেই হিজড়ারা জীভন যাপন করে। বর্তমানে সেই সুযোগগুলো একদম বন্ধ। এই অবস্থায় সরকার এগিয়ে না আসলে  দিন-দিন অসহায় এই জনগোষ্ঠীকে আরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

হিজড়া নেতৃবৃন্দ জানান, ঢাকা শহরে প্রায় ৩০ হাজার হিজড়া রয়েছে। সারা দেশে এই সংখ্যা অনেক বেশি। যদিও সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রায় অর্ধযুগ আগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১০ হাজার হিজড়া রয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর