× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দায়টা আসলে কে নেবে?

অনলাইন

ডক্টর তুহিন মালিক
(৪ বছর আগে) এপ্রিল ৫, ২০২০, রবিবার, ১২:০৩ অপরাহ্ন

সবাই যখন বউ বাচ্চা নিয়ে নিরাপদ ঘরে। তাদের খাবার যোগানের দায় তখন ৪০ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিক নামের নব্য ক্রীতদাসের! যে ক্রীতদাসরা এতটা দিন ধরে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার যোগান দিয়েছে। অথচ আজ সেকেন্ড হোম আর বেগমপাড়ার প্রাসাদের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সেই ক্রীতদাসের জীবনকে নির্বিচারে বলি দেয়া হচ্ছে।

পোষাক শিল্প অবশ্যই বাঁচাতে হবে। কিন্তু তা কোনভাবেই শ্রমিকের জীবনের বিনিময়ে নয়। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর ভিতরে পুড়ে মরে নয়। রানা প্লাজার মত বিল্ডিং ধ্বসে শ্রমিকের প্রাণ দিয়ে নয়। করোনা মৃত্যুর মুখে শ্রমিকদের জীবনকে ঠেলে দিয়ে নয়। রাষ্ট্রের অর্থনীতি কিংবা মালিকের মুনাফার সামনে শ্রমিক নামের ক্রীতদাসের জীবনটা যে কতটা মূল্যহীন, তা প্রমানের জন্য আজকের ঘটনাই কি যথেস্ট নয়? সংবিধানে প্রতিটা নাগরিকের জীবনের মূল্য সমান হলেও, আজ কোথায় সেই সাংবিধানিক নিশ্চয়তা?

মালিকরা বলছে, তাদের অর্ডার বাতিল হয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলারের।
অথচ বছরে মোট পোশাক রপ্তানি হয় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের। তারমানে ৯০% অর্ডার এখনও বহাল আছে। যা থেকে নিশ্চিতভাবে মুনাফা থাকবে। সাথে  শ্রমিকদের বেতন বাবদ সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মালিকরা কি এতটাই নিঃস্ব সর্বশান্ত হয়ে গেলেন যে, শ্রমিকের বেতনের জন্য তাদের কাছে কোন টাকাই নাই? তাহলে শ্রমিকদের বেতন বাবদ সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ কার জন্য দিলো?

সরকারের আগাগোড়াই ব্যবসায়ী দিয়ে গড়া। বানিজ্য মন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী এমপিরা সব বড় বড় গার্মেন্টস ওয়ালা। কি সুন্দর চালাকি! সরকার পরিস্কার বলে দিচ্ছে, এই দায় তারা নিবে না! সিদ্ধান্ত নিবে বিজিএমইএ। অন্যদিকে বিজিএমইএ আর বিকেএমইএ বলে দিলো, এই দায় তাদেরও না। সিদ্ধান্ত নিবে মালিকরা। গার্মেন্টস মালিক চাইলে গার্মেন্টস খোলা বা বন্ধ রাখতে পারবে! আর এদিকে এইসব দায়হীনতার সুযোগে মালিকরা দেখলো, ক্রীতদাসের মৃত্যুতে কারোই যখন কোন দায় নেই। তাহলে হোক না আরেকটা রানা প্লাজা! চাকরী হারানোর ভয়ে দাসরা তো দাসত্ব করবেই।

দেশের সবকিছু বন্ধ। গণপরিবহনও বন্ধ। অথচ দলে দলে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ঢাকার পথে ছুটছে পায়ে হেঁটেই। এদের জন্য নেই কোন সামাজিক দুরত্বের থিওরী! নেই কোন কোয়ারেন্টাইনের সবক। মানুষ হলে না এটা প্রযোজ্য হবে। এরা সব আধুনিক ক্রীতদাস। মরলে মরুক। মুনাফা যে হতেই হবে! শিল্পের চাকা চলতে হবেই। রেমিটেন্সের দরজা কোনভাবেই বন্ধ করা যাবে না। প্রবৃত্তির সূচক উর্ধে রাখতেই হবে। জীবনের আগে মুনাফার জয় হতেই হবে। মুনাফাখোররা যাতে না ভুলে যে, যাদেরকে আজ আপনারা জোড় করে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিচ্ছেন। কালকে এই ক্রীতদাসের সংক্রামন আপনাদের রাজপ্রাসাদে হানা দিবেই।

ডক্টর তুহিন মালিক
আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর