নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘন্টায় করোন আক্রান্ত হয়ে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে চারজনে। সোমবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম।
এদিকে গত চব্বিশ ঘন্টায় ১২ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৩। করোনায় মৃতরা হলেন- দেওভোগ আখড়া মোড়ের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন ঘোষ (৫৮) এবং জামতলা হাজী ব্রাদার্স রোডের বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন (৬০) তারা দুজনই রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
চিত্ত ঘোষের ভাতিজা সঞ্জয় ঘোষ জানান, গত ২৭ মার্চ থেকে জ্বর, কাশি ছিল তার চাচার। পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শুক্রবার সারাদিন নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করলেও কোনো হাসপাতালেই তাকে ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। উপায় না দেখে রাতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।
করোনা উপসর্গ থাকায় পরদিন সকালে তার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর। শনিবার রাত ১০টায় চিত্ত ঘোষ মারা যান। নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা পজেটিভ আসে।
সঞ্জয় ঘোষ বলেন, তাদের পরিবারের কেউই বিদেশ ফেরত কিংবা প্রবাসী নন। সম্প্রতি কেউ বিদেশেও জাননি। কীভাবে তিনি সংক্রমিত হলেন তা জানেন না। তবে তিনি শহরের বর্ষণ সুপার মার্কেটের বিনিময় বস্ত্র বিতান নামে একটি দোকানে কাজ করতেন। ওই মার্কেটেরই এক ব্যবসায়ী সম্প্রতি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
এদিকে গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়ে নাসিক ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি গত ৪ এপ্রিল অসুস্থবোধ করায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে তিনি মারা যান। হাজী ব্রাদার্স রোডের একটি বহুতল ভবনের ৮টি পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাউকে ওই বাড়িতে প্রবেশ না করার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে জেলা করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নারায়ণগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪।
উল্লেখ্য গত ৩০ মার্চ বন্দর রসুলবাগ এলাকার বাসিন্দা শিউলী ওরফে পুতুল (৫০) নামে এক নারী করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রথম মারা যান। পরে আইইডিসিআর ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করলে ২ এপ্রিল করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। এ ঘটনায় রসুলবাগ এলাকা লকডাউন করে প্রশাসন। এখানে শতাধিক পরিবার রয়েছে। এছাড়াও তার সংস্পর্শে আসায় এক চিকিৎসক, নার্স ওয়ার্ডবয়, ল্যাব টেকনিকশিয়ান এবং ওই নারীর আত্মীয় সজনসহ তাকে গোসল করানো দুই নারী নিয়ে মোট ৪১ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ওয়ার্ডবয় রয়েছেন আইসোলেশনে। এছাড়া শনিবার সকালের দিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান কাশিপুর বড় আমবাগান এলাকার বাসিন্দা হাজী আবু সাঈদ (৬০)। তাকে আগের দিন মিটফোর্ড ঘুরে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হয়ে সন্ধ্যায় কুর্মিটোলায় ভর্তি করা হলে শনিবার সকাল ৯টার দিকে তিনি মারা যান। পরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় খিলগাঁও তালতলা এলাকায় নিহতের দাফন সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় বাংলাবাজার বড় আম বাগান এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন।