নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী প্যাকেট করে রাখা হয়েছে একটি ঘরে। চাল, ডাল, তেল, নুন সবই আছে। চুপিসারে সেসব প্যাকেট মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন একদল যুবক। অভাবী মানুষেরা যেন লোক লজ্জা এড়িয়ে সাহায্য নিতে পারেন সেজন্যই এমন উদ্যোগ তাদের। তারা কোনো ব্যানার কোনো সংগঠনের হয়ে কাজ করছেন না। একান্তই ব্যক্তিগত উদ্যোগ। এই কঠিন সময়ে গ্রামের দুস্থ-অসহায়দের মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দেয়াই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
এমন মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের ছয়চির গ্রামের কিছু বাসিন্দা। যাদের একটা অংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী।
এ কাজে তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান, গ্রামের প্রবাসী ও সচ্ছল মানুষেরা । উল্লেখ্য, ইউপি চেয়ারম্যান ছয়চির গ্রামেরই বাসিন্দা। তিনি সরকারি অনুদানের বাইরে নিজের পকেট থেকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন।
সাহায্যকারী যুবকদের একজন মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাইনি এসব প্রচার হোক। সুখিয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের তিন গ্রাম- ছয়চির, আলগা ছয়চির ও অমরপুরে এই সহযোগিতায় দিয়েছি আমরা। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০-৪৫টি পরিবারকে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। তবে কারোর নাম প্রকাশ করা হবে না। বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা একেবারে গরীব যারা তাদেরকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।’
গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হিমেল আহমেদ বলেন, `আমরা সিদ্ধান্ত নেই কিছু অসহায় মানুষকে সহায়তা দেব। ৪২টি পরিবারের জন্য কিছু খাদ্যের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের ছয়চির গ্রামের প্রবাসী ভাইদের অনেক ধন্যবাদ। মহতী এই কাজে সাহায্য করার করেছেন তারা। যাদের সাহায্য করেছি তাদের কোনো ছবি তুলিনি। ছবি তুললে তাদেরকে ছোট করা হয়। সন্ধ্যার পর অনেকের বাড়িতে দিয়ে এসেছি প্যাকেট। যাতে রয়েছে ১০ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি ছোলাবুট, ২ কেজি পিয়াজ, ২ কেজি চিনি, ১ কেজি তেল ও হাফকেজি লবণ।’
হিমেল আরো জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির যদি আরো অবনতি ঘটে তবে আরো সাহায্য দিতে প্রস্তুত তারা। তিনি বলেন, ‘সামনে রমজান মাস। প্রয়োজন হলে আমরা আরো সহায়তা দেবো। গ্রামের অন্যান্য সচ্ছল মানুষদের কাছে সাহায্য চাইবো।’
১০ নং সুখিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হামিদ টিটু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে সরকারিভাবে ২২০টি পরিবারকে সহযোগিতা দেয়া হবে। এর বাইরে আমার গ্রামের ছেলেরা ছোট্ট পরিসরে ৫ নং ওয়ার্ডে কিছু সহযোগিতায় করেছে।’
৫ নং ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ন্যুনতম একজন করে প্রবাসী রয়েছেন। সেখানকার করোনা পরিস্থিতি কেমন কিংবা গ্রামের মানুষ কতটা সচেতন এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের গ্রামের মানুষ যথেষ্ট সচেতন। সন্ধ্যার মধ্যেই বাজারশূন্য হয়ে পড়ে। গণজামায়েত পরিহার করে চলছেন সবাই। নামাজ কালাম ঘরে পড়ছেন। প্রতিটি মসজিদে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে আগেই।’