× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চাকরি হারিয়ে দিশেহারা আলেয়ারা

অনলাইন

রুদ্র মিজান
(৪ বছর আগে) এপ্রিল ৬, ২০২০, সোমবার, ৭:৪০ পূর্বাহ্ন
প্রতীকী ছবি

স্বামী, দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আলেয়া। থাকতেন আশুলিয়ায়। কাজ করতেন একটি গার্মেন্টে। স্বামী নির্মাণ শ্রমিক। সুখেই চলছিলো সংসার। এরমধ্যেই মরণঘাতি করোনার সংক্রমন বাড়ছে। বন্ধ হয়ে যায় স্বামীর কাজ। আলেয়ার আয়েই চলছিলো সংসার।
হঠাৎ করেই অন্ধকার নেমে আসে। চাকরি চলে যায় আলেয়ার। মালিকপক্ষ জানান, এখন মন্দা সময়। ব্যবসা ভালো না। এতো শ্রমিককে বেতন দেয়া সম্ভব না। ব্যস, এক কথাতেই চাকরি নাই। আলেয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। কিন্তু সিদ্ধান্ত অটল মালিকপক্ষ। আলেয়াসহ অনেকের চাকরি চলে যায় এভাবেই। এই ছাটাইয়ের প্রতিবাদে ১৯ শে মার্চ আন্দোলন করে শ্রমিকরা। এবার মালিকপক্ষের টার্গেটে পড়েন আন্দোলকারীরা।

রোববার শুধু ওই গার্মেন্ট থেকেই ১০৩ জনের চাকরি চলে গেছে। মরণঘাতি করোনা আতঙ্ক যখন সর্বত্র তখন এই ঘটনাটি ঘটেছে আশুলিয়ার জামগড়ার দিয়াখালী এলাকার দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড নামে গার্মেন্টসে। একইভাবে সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া এলাকার দি ক্লথ অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেডের ৭০ জন, আশুলিয়ায় অবস্থিত ইসকেই ক্লথিং লিমিটেড কারখানা থেকে ১০৩ জন, আশুলিয়ার জামগড়ার ফ্যাশন ফোরাম লিমিটেড কারখানার ১৮৯ জন শ্রমিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এভাবে গত কয়েক দিনে চাকরি হারিয়েছেন শত শত শ্রমিক। এই দুঃসময়ে মরার ওপর খারার ঘা’র শিকার হচ্ছেন শ্রমিকরা। এরআগে চাকরি হারিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন আলেয়ার মতো শ্রমিকরা। এবার চাকরি হারিয়ে মাথাভরা দুশ্চিন্তা নিয়ে ঢাকাতেই খেয়ে না খেয়ে রয়েছেন তারা।

সাভারের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক মনোয়ারা জানান, ময়মনসিংহ থেকে পায়ে হেঁটে চাকরি রক্ষা করতেই ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। রোববার কারখানায় গিয়ে জানতে পারেন তার চাকরি নেই। মালিকপক্ষ জানিয়েছে, কাজ নেই। ব্যবসা খারাপ। তাই শ্রমিক কমাতে হবে। সবাইকে বেতন দেয়া সম্ভব না। একটি টিনশেড ঘরে আরও দুই নারী সহকর্মীর সঙ্গে থাকেন মনোয়ারা। চাকরি হারানোর পর দিশেহারা তিনি। জমানো টাকা বাড়িতে মাকে দিয়ে এসেছেন। এখন লকডাউন। সবকিছু বন্ধ। কোথায় চাকরি পাবেন। কি খাবেন, কিভাবে থাকবেন। বাড়িতে মা ও ছোট বোনকে কোত্থেকে টাকা পাঠাবেন? এরকম নানা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মনোয়ারার মতো অনেকেই।

শ্রমিকরা জানান, অনেক কারখানায় বেতন না দিয়ে শ্রমিকদের ছাটাই করা হয়েছে। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। দি রোজ ড্রেসেসের শ্রমিক দেলোয়ারাকে চার মাসের বেসিক বেতন দিয়ে ছাটাই করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই দুঃসময়ে এভাবে চাকরি হারিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই নারী। দেলোয়ারা জানান, তিনি অন্তঃস্বত্ত্বা। এরমধ্যে সামনে রমজান, ইদ। কৌশলে মালিকপক্ষ তার আগেই চাকরি থেকে ছাটাই করেছে। অন্তঃস্বত্ত্বা হিসেবে তার ছুটি পাওনা ছিলো। সামনে ইদের বোনাস পাওয়া কথা ছিলো। দেলোয়ারা বলেন, চাকরি হারিয়ে এখন কি করবো। কিভাবে চলবো। অমানবিকভাবে ওরা চাকরি খেয়েছে।

তিনি জানান, সহকর্মীদের ছাটাইয়ে প্রতিবাদ করার কারণে অনেকের চাকরি গেছে। কিন্তু তিনি কোনো আন্দোলনে অংশ নেননি। তারপরও তাকে চাকরি হারাতে হয়েছে। আশুলিয়ার জমাগড়ার বটতলায় আট বছর বয়সী মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে থাকেন দেলোয়ারা।

লকডাউনের সময়ে চাকরি থেকে অব্যাহতির বিষয়টি অমানবিক বলেই মনে করছেন শ্রমিক নেতারা।  গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মিন্টু বলেন, অন্য সব মানুষের মতোই শ্রমিকরা করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে রয়েছেন। এই সময়ে শ্রমিক ছাটাই করছেন কিছু অসাধু গার্মেন্ট মালিক। অনেকে আবার কারখানা খোলা রেখে ঝুঁকিপূর্ণভাবে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাতে বাধ্য করছেন। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর