সোমবার রাত ৯টা। পশ্চিম শেওড়াপাড়া, ওয়াসা রোড। চারদিক নীরব, নিস্তব্ধ। মাইকিং শোনা যাচ্ছে। এলাকার কাউন্সিলরের বরাতে বলা হচ্ছে, আপনারা ঘরে থাকুন। অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি করবেন না। অপ্রয়োজনে বের হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। একটু আগে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ঘরে বসে নামাজ আদায় করুন।
মিরপুর এমনিতেই করোনার হটস্পট।
ঢাকার সবচেয়ে আক্রান্ত এলাকা। রাত গভীর হতে থাকে। দুশ্চিন্তা বাড়ে।গত ৮ই মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিতই মনে হচ্ছিল। স্বল্প সংখ্যক আক্রান্তের খবর দিচ্ছিল এক ধরনের স্বস্তি। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ বলছিলেন, টেস্ট কম করানোর কারণেই কম ধরা পড়ছে। সে কথাই যেন সত্য হতে চলেছে। ৯,১৮,৩৫। গত ৩ দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। যেন ভয়ঙ্কর এক ভবিষ্যতের ইংগিতই পাওয়া যাচ্ছে।
উহানে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার বেশ ভালোই সময় পেয়েছিল বাংলাদেশ। অনেকেই বলে থাকেন, সেই সময়টা পুরো ঠিকভাবে কাজে লাগাইনি আমরা। যদিও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কথায় সমন্বয়হীনতার চিত্র স্পষ্ট। পোশাক মালিকরা শ্রমিকদের হাঁটিয়ে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। এজন্য তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি। অঘোষিত লকডাউনে অনেকে পেটের ক্ষুদায় রাস্তায় নামছেন আবার অনেকে কারণ ছাড়াও ঘোরাঘুরি করছেন। এই ঘোরাঘুরি পার্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন অনেকে। দায় শুধু রাষ্ট্রের নয়, এই অসহায় সময়ে মানুষেরও সচেতনতা প্রয়োজন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র এখন অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম। গরিবী সীমার নিচে বাস করা মানুষদের জন্য অর্থনৈতিক সাহায্যের বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা প্রয়োজন।
পরিস্থিতি হঠাৎ পাল্টে গেছে। কিন্তু এটা ধারণার বাইরে ছিল না। দেশে দেশে করোনার বিস্ফোরণ এভাবেই হচ্ছে। সামনে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে কে জানে। তবে প্রতিরোধ আর চিকিৎসার প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন সর্বাত্মক। এ্ই সংকটের সময়ে ব্যক্তি, রাষ্ট্র, দল সবারই এগিয়ে আসা প্রয়োজন। স্যালুট জানানো প্রয়োজন সেই সব চিকিৎসকদের যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। আর যারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন, তাদেরকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং অভয় দেয়া প্রয়োজন যেন তারা দায়িত্ব পালন করতে পারেন। শেষ করবো বৃটেনে কর্মরত বাংলাদেশি চিকিৎসক গোলাম রাহাত খানের কথা দিয়ে, যিনি করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকজন চিকিৎসক, নার্সের মারা যাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বিবিসিকে বলেন, আমি ওভাবে চিন্তা করি না। মারাতো একদিন সবাই যাবো। ভয় লাগলেও আপনার পেশাতো এটাই আপনি মানুষের জন্য কাজ করেন। একজন সৈনিক কি যুদ্ধে যাবার সময় বলে যে, আমি যাবো না, গুলি করবে। আপনাকে যেতেই হবে।