× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

যে সুসংবাদ আসার কথা, সে সুসংবাদ আসে না!

অনলাইন

আমীর খসরু
(৪ বছর আগে) এপ্রিল ৯, ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৬:৪৩ পূর্বাহ্ন

করোনা বা কোভিড-১৯-র মধ্যে একাকী বসবাস এবং লকডাউনে আমরা প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ জানতে চাইছি- কতোজন আক্রান্ত হলো, মৃত্যু হলো কতোজনের। অতি সামান্য জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও হয়তো একথাটি চিন্তা করবেন যে, মানুষ এখন শুধুই সংখ্যা- মানুষ নয়। যে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন, তাদের আমরা সংখ্যা দিয়ে বিচার করি সত্যি, কিন্তু যিনি বা যারা মারা গেছেন, তার বা তাদের সাথে বিদায় নিয়েছেন একেকটি জগত, হাজার হাজার জগত। এই মানুষগুলো কারো বাবা, কারো মা, সন্তান, স্ত্রী- এভাবে নানান সম্পর্কে সম্পর্কিত একেকটি মানুষ। এই হিসেবে যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে বিষয়টি বুঝতে কষ্ট হবে না যে- আমরা হাজার হাজার জগতকে হারিয়েছি, হাজার হাজার জগত এখনও মৃত্যুর সাথে লড়ছে। সাথে সাথে হাজার হাজার জগত মৃত্যুভীতিতে প্রতিনিয়ত ভীত, বিপন্ন, অসহায়, বিপর্যন্ত।
আমাদের বিশ্লেষকগণ দুটো বিষয়ে বেশ গুরুত্বের সাথে এক্ষেত্রে উল্লেখ করেন-একটি স্বাস্থ্যের অন্যটি অর্থনৈতিক। কিন্তু নিজ সমাজের এবং সাথে সাথে বিশ্ব-সমাজের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের বিষয়টি কারো মুখে তেমন একটা শুনেছি এটা মনে আসে না। আর মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ও মনোজগতের ওলট-পালটে, প্রতিনিয়ত ধাক্কা খাওয়ার বিষয়টিও খুব একটা আলোচিত নয়।
মানুষের গণ-বিষন্নতা বা মাস-ডিপ্রেশনের বিষয়টিও অনুল্লেখ্য।

খ্রীষ্টপূর্ব ৫ হাজার বছর আগে চীনে একটি অজ্ঞাত রোগ, এরপরে বিভিন্ন দেশে দফায় দফায় প্লেগ, নানা ধরনের ফ্লু-জ্বরসহ অন্যান্য বিভিন্ন বড় মহামারীর তথ্য আমরা পাই। এ সংখ্যা ২০টির কম নয়। যার সর্বশেষটি ব্যপক আকারে ছড়িয়ে ছিল মহামারী আকারে-যাকে স্প্যানিশ ফ্লু বলা হয়। এটি হয়েছিল ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালের দিকে। এতে ৫০ কোটি মানুষ আক্রান্ত এবং মারা গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ডিপ্রেশন বা মহামন্দা অর্থাৎ মানুষের অর্থনৈতিক অসহায়ত্ব ও অবনতি, জীবন-জীবিকার দুর্যোগের কালো সময় এসেছিল- যা ১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। কিন্তু তা মূলত আঘাত হেনেছিল আমেরিকায় এবং অন্য কয়েকটি দেশে। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতেও এর প্রভাব পড়েছিল বটে।
কিন্তু আগের ঘটনাগুলোর সাথে এখনকার করোনা বা কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ঘটনাবলীর পার্থক্যটি বিরাট। আর এটি বিশ্বায়নের কারণে। বিশ্বায়নের খোলাদরজা নীতি করপোরেট দুনিয়ার আধিপত্য যেমন জন্ম দিয়েছে, সাথে সাথে ‘‘উপহার’’ দিয়েছে করোনা বা কোভিড-১৯সহ নানা রোগ-বালাইয়ের। বিশ্বায়ন এখন শুধু কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইই নয়, করোনা বা কোভিড-১৯সহ নানা রোগ-বালাই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ারও একটি মাধ্যম মাত্র। ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, দূরে এবং কাছে থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শ্রমিক-কৃষক এবং চাকরিজীবীদের শোষণের বিশ্বায়নের সাথে সাথে করোনাও আমরা পেয়েছি বিশ্বায়নের দৌলতে-যা মাত্র কয়েক যুগ আগেও ছিল না।
একথাটি মনে রাখতে হবে যে, বিশ্বায়নের যুগে করোনার কারণে ২০২০-এর আগের যে সমাজটি ছিল সেই সমাজটি আর ফিরে আসবে না। ভয় হয়, ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন’ স্থায়ী রূপ পেয়েও যেতে পারে। বিশ্বায়নের অন্যতম বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এখন প্রশ্ন করার সময় এসেছে- এসব সামাজিক মাধ্যম কী আসলেই সামাজিক জীব তৈরি করছে- না অসংখ্য একাকী মানুষের জন্ম দিচ্ছে। আমার ছেলেটিকে হাসতে দেখি যখন ফেসবুকে সে অসংখ্য লাইক পায়। তার ফেসবুক ফ্রেন্ডও অনেক। কিন্তু যতোটা বুঝতে পারি, আসলে সে বন্ধুহীন, আর এ কারণে অসহায়। আমাদের যুগে এমনটা ছিল না। করোনা আবার অসংখ্য মৃত্যু, অসংখ্য আক্রান্ত মানুষের এবং লকডাউনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, তবে দু:খজনকভাবে- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, একাকী থাকুন। দুনিয়া জুড়ে জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তি, ন্যায়-ন্যায্যতা যখন অস্বীকার করা হয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সব অধিকার লুণ্ঠনের ঘটনাবলীর ব্যাপারে দূরত্ব বজায় রাখার যে নিরন্তর চেষ্টা অব্যাহত ছিল এবং আছে তা যেন বজায় থাকে। সুস্থ্য সময়েও সবাই যেন আইসোলেসনে থাকে- এসব থেকে! এসব ক্ষেত্রেও সবাই যেন একাকী চলে।
আগেই বলেছি, যে সমাজটি ফেলে এসেছি সে সমাজটি আর ফিরে আসবে না। কারণ প্রতিটি যুদ্ধ, প্রতিটি বিশাল দৈব-দুর্বিপাক সমাজকে, মানুষের মনোজগতকে বদলে ফেলে। এক্ষেত্রে লেনিনের একটি উদ্ধৃতি মনে পড়ে যায়- লেনিন বলেছিলেন, There are decades where nothing happens; and there are weeks where decades happen. অর্থাৎ ‘কখনো কখনো যুগের পর যুগেও কোন কিছুই ঘটে না, আবার কয়েক সপ্তাহেই ঘটে যায় যুগ-যুগান্তরের সব ঘটনাবলী’।
এতোসব নেতিবাচক চিন্তার মধ্যেও প্রত্যাশা থাকে, মানুষ নিরন্তর আশা করে সুসংবাদের। কিন্তু বর্তমান দেখে মনে হয়- যে সুসংবাদ আসার কথা- সে সুসংবাদ আসে না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর