× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনা পরবর্তী নতুন পৃথিবীর খোঁজে

অনলাইন

মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান
(৪ বছর আগে) এপ্রিল ৯, ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৭:২৪ পূর্বাহ্ন

২০২০ সালের প্রথম দিনটিকে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই হয়তো ধারণা করা সম্ভব হয় নি, নতুন বছর তাদের জন্য কী নিয়ে আসছে। অনেকেই নতুন বছরের রেজিলিউশন তৈরি করেছেন। সারা বছরের পরিকল্পনাকে ভাগ করে নিয়েছেন। কিন্তু পৃথিবীর সময় যেন এক ব্ল্যাকহোলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। অথবা এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের সেই আয়নার সামনে। চোখের পলকেই যেন কোভিড-১৯ নামের করোনা ভাইরাসটি আমাদের পরিচিত পৃথিবীটাকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে। গত ১০০ দিনে পৃথিবীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় থেকে শুরু করে একেবারে ব্যক্তিজীবনেও পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের কেউ নিজে অসুস্থ হয়ে হসপিটালে আছেন, কেউ তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে, কেউ নিজের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াচ্ছেন।
চায়নার মতো ক্ষমতাধর দেশের পাশাপাশি জি-এইট নামের ধনী দেশগুলোর প্রভাবশালী সংঘের অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্র শুরুতেই সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় পড়ে গিয়েছে। করোনা ভাইরাস কোনো ধনী গরিব চেনে না। শক্তিমান দুর্বল চেনে না। সে যাকে যেখানে পাচ্ছে সেখানেই ধরছে। তার কাছে নিউ ইয়র্ক থেকে নিউ মার্কেট, ম্যানিলা থেকে মালিটোলা, জেনিভা থেকে জেনিভা ক্যাম্প কোনোটাই আলাদা কিছু না। পৃথিবীর সবচেয়ে ট্রেইনড ও দুর্ধর্ষ সামরিক বাহিনী এই অদৃশ্য শত্রুর বিরদ্ধে প্রাণরক্ষায় আর্তি জানিয়েছে।

পৃথিবীতে নানা কারণেই প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যান কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু যেন কিছুক্ষণের জন্য হলেও মৃত্যুকে বা মৃত্যুর চিন্তাকে আমাদের মনে স্পর্শ করতে পেরেছে। জীবন আমাদের অনেকগুলো প্রশ্নের সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে।

আমাদের প্রতিদিনের ইঁদুর দৌড় কিংবা ২৪ঢ৭ ব্যস্ততায় কেমন ভাটা পড়ে গিয়েছে। প্রতিদিনের ঢাকা শহরের জ্যাম নিয়ে কাউকে এখন শাপ-শাপান্ত করতে হয় না। উইকএন্ডে নেই ভ্যাকেশন নিয়ে কোনো বুকিং দেয়ার চিন্তা, রাষ্ট্রীয় পলিটিক্স থেকে শুরু করে অফিস পলিটিক্স সব কিছুতেই কিছুটা বিরতি। তবে এতো কিছুর পরও খাদ্যহীনতা, চাকরিহীনতা, চিকিৎসাহীনতার এই মহামারীতেও পূর্ণিমার বিশাল চাঁদ আকাশে উপস্থিতিতে বিরতি দেয় নি। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর শিক্ষার্থীদের প্রায়ই একটি কথা বলেন, ‘রাত যতো গভীর হয়, অন্ধকারের তীব্রতা ততো বৃদ্ধি পায়। এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি সত্য হলো রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে প্রভাতের আলো ফোটার সময়টিও এগিয়ে আসে।’

করোনার এই হামলা কি আমাদের পৃথিবীর নতুন ভোরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পূর্বাবস্থা?
আমাদের ঘৃণা, হিংসা, অহংকার, ঈর্ষার লাগামহীন প্রতিযোগিতা নিজেদের কেবল ক্লান্তই করে তুলেছে। সেই ক্লান্তিকেই আমরা বিজয় বলে ধরে নিয়েছি। অস্কার ওয়াইল্ডের দি পিকচার অফ ডোরিয়েন গ্রে উপন্যাসের মতো আমাদের পোরট্রেইটগুলো এতো বেশি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে যে আমরা তাতে তাকাতে ভয় পাই। পৃথিবী আমাদের থমকে দিয়েছে।

আমরা কি আকাশের চাঁদের মতো কিছু পরিবর্তন এখন সমাজে দেখতে পাচ্ছি না?
এক সময় যে পুলিশ কর্মকর্তার দেখা পেতে থানায় গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে, সেই কর্মকর্তা এখন নিজ হাতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে বাড়িতে এসে কড়া নাড়ছেন। যে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো, তিনিই হয়তো এখন সব ফেলে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করছেন। ব্যারাকে থাকা সেনা সদস্যরা নিজের হাতে  সাধারণ মানুষের মুখে মাস্ক পরিয়ে নিরাপদে থাকার কথা বলছেন।

যা দেখে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম না, তাই এখন দেখছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, অতি সহজে প্রিয়জনের সঙ্গে সাধাসিধে ভাবে যে জীবনকে আনন্দময় করা যায় সে ভাবনটিও অনেকের মনে কাজ করছে। বদলে যাওয়া পৃথিবীর ভালো বিষয়গুলো কি আমরা গ্রহণ ও লালন করতে পারি না? একটি মানবিক পৃথিবী কি গড়ে তোলা সম্ভব নয় সেখানে আমরা সবাই মিলে ভালো থাকতে পারি?
আমরা কি আবার নতুন করে পৃথিবীকে সাজাতে পারি না?
এখন ঘর যেমন শান্তিময় হয়ে উঠেছে, চলুন সবাই মিলে পৃথিবী নামের ঘরটিকেও একই ভাবে শান্তিময় করে তুলি।
লেখক: সাংবাদিক
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর