× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এমনটাও দেখতে হচ্ছে?

মত-মতান্তর

শামীমুল হক
১০ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার
ফাইল ফটো

মায়া, মহব্বত গিলে খেয়েছে আগেই। ভালোবাসাকে আঁচড়ে মেরছে। হৃদয়কে করেছে পাষান। এখন নির্মম, নির্দয় আর কঠোরতার চরম শিখরে অবস্থান করছে এই করোনা। মরণব্যাধি বিশ্ব মহামারী করোনা নিজেই ভায়নক নয় শুধু, মানবজাতীকেও ভয়ানক বানিয়ে ছেড়েছে। খবর বেরিয়েছে, রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে দলে দলে লোকজন পটুয়াখালীর গলাচিপার নিজ বাড়িতে যাচ্ছে। সেখান থেকে তরমুজ বোঝাই করে আসা ট্রলারে ফিরে যাচ্ছে তারা। আবার গাড়ি করে দলে দলে লোকজন সুনামগঞ্জে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা এ থেকে রক্ষায় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। নিষ্ঠুর, নির্দয় তথ্য হলো- গলাচিপার চরকাজল ও চরবিশ্বাসের লোকজন গতকাল গভীর রাতে লাঠি নিয়ে নদীর পাড়ে পাহারা বসিয়েছে। কোন ট্রলার যাতে পাড়ে ভিড়তে না পারে। এর আগে অবশ্য এলাকার লোকজন প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছে। আবু নাঈম নামে এক কলেজ ছাত্র প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন-৷ চরকাজল ও চরবিশ্বাস থেকে তরমুজ নিয়ে ছেড়ে যাওয়া ট্রলারগুলো ঢাকা থেকে ফেরার পথে অতিরিক্ত ভাড়ায় লোক নিয়ে আসছে গ্রামে। বর্তমান সময়ে ঢাকা থেকে আসা লোকজন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মানুষগুলো। তরমুজের ট্রলার মালিকদের সহায়তায় তারা এলাকায় আসতে পারছে। এসব ট্রলার মালিকদের কয়েক ধাপে সতর্ক করা হয়ছে। তারা কোন নিয়মের তোয়াক্কা করছেনা। এতে গ্রামের মানুষগুলোর ঝুঁকি বাড়ছে। বেপরোয়া ট্রলার মালিকদের থামান। কঠোর ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে তাদের জিজ্ঞেস করুন কেন তারা আসছে? আমরা আপনাদের সহায়তা করবো। আগত সবার হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করুন। প্রশাসনের সহায়তা না পেয়ে গ্রামবাসী নিজেরাই নেমেছে পাহারা দিতে। একসময় রাত জেগে মানুষ নিজেদের চোর ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে এমন পাহারা দিতো। এখন মানুষ পাহারা দিচ্ছে আরেক মানুষ যেন তার এলাকায় ঢুকতে না পারে। এসব মানুষ কিন্তু যারা পাহারা দিচ্ছে তাদেরই স্বজন, গ্রামের ভাই। কতটুকু নির্দয় হলে এটা সম্ভব? আসলে করোনা তাদের নিষ্ঠুর আর নির্দয় হতে বাধ্য করছে। নিজেদের করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে হাতে লাঠি তুলে নিয়েছে। রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছে। গতরাতে প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে আবু নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন নিজেরা এটা করছেন? তার উত্তর - প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে পাইনি। পটুয়াখালী জেলার চরকাজল ও চরবিশ্বাস দুটি ইউনিয়ন হলে দ্বীপ। আশি হাজারের বেশি লোকের বসবাস এখানে। নিজেদের এলাকা ভাল রাখতে এর চেয়ে বিকল্প দেখছিনা। কিছুক্ষন আগে বাড়ির দারোয়ান এসে বলে গেলেন মহল্লার কোন এক মসজিদের ইমাম সাহেবের করোনা উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এর পরপরই একটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা- প্রিয় এলাকাবাসী আজ মসজিদে জুমার নামাজ হবেনা। আপনারা যার যার ঘরে যোহরের নামাজ আদায় করে নেবেন। সত্যিই নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। গতকালই একজন চাঁদপুরে শশুর বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আশপাশের লোকজন প্রশাসনকে জানিয়ে দেয়। তাকে নেয়া হয় কোয়ারেন্টিনে। অন্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়। আরেকটি ঘটনা হৃদয়কে নাড়া দেয়। পিতার লাশ সন্তানরা কাঁদে করে নিয়ে যাচ্ছে গোরস্থানে। গ্রামের লোকজন খাটিয়া না দেয়ায় সন্তানরা নিজেরাই একাজ করতে বাধ্য হন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ছবি ভাইরাল হয়েছে। করোনা ভাইরাস মানষকে কত পাষান করেছে, নির্দয় বানিয়েছে, নিষ্ঠুর করে তুলেছে এই একটি ঘটনাই তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া দুদকের উপ পরিচালকের একমাত্র সন্তানের ফেসবুক স্ট্যাটাসও মানষকে কাঁদিয়েছে। এসব ঘটনায় কাউকে কি দোষ দেয়া যাবে? না। কাউকে দোষ দেয়া যাবেনা। প্রত্যেকেই করোনা থেকে আত্মরক্ষায় ব্যবস্থা নিচ্ছে। করোনা এ যে এক অদৃশ্য বালা- মসিবত। এটা কোথায় আছে কেউ জানেনা। ডানে, বামে, সামনে নাকি পেছনে কেউ বলতে পারেনা। এ কারণেই এতো ভয়। এতো ডর। আর এ ভয় আর ডর মানুষকে করে তুলেছে নিষ্ঠুর, পাষান আর নির্দয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর