× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মন্তব্য প্রতিবেদন /জাতীয় ক্রাইসিস কমিটি গঠন করুন

মত-মতান্তর

পলাশ চৌধুরী
১২ এপ্রিল ২০২০, রবিবার

জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার এখনই উপযুক্ত সময়। দেশের রাজনীতি এখন বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাজনীতি ঘুম ভাঙবে অথবা রাজনীতি স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসবে; কোন একদিন। সে আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। পরিষ্কার ভাষায় একটি কথা বলি; করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য হোক, একটি জাতীয় ক্রাইসিস কমিটির মধ্য দিয়ে।
করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে একটু ব্যতিক্রমীভাবে হানা দিচ্ছে বা দিয়েছে। তবে ইউরোপের মত অবিকল রূপে নয়। এটা নিশ্চিত প্রায়।
এই করোনা ভাইরাস বহু রাজাকে ভিখারি আর ভিখারি কে রাজা বানিয়ে দেশান্তরী হবে! যেন কুদরতি করোনা ভাইরাস জানে, স্থান-কাল পাত্র ভেদে কোথায় কিভাবে হানা দিতে হবে! যাই হোক;খুব সহজেই আমরা লক্ষ্য করছি, জীবন-মৃত্যুর শূন্য রেখায় দাঁড়িয়েও থেমে নেই; ত্রাণের চাল চুরি, শিশু ধর্ষণ, চিকিৎসকদের চিকিৎসা ভীতি, চিকিৎসা দিতে অনীহা, ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, হানাহানি রাহাজানি। যদিও এই ধরনের অস্থিরতা; অবক্ষয়ের সাথেই আমাদের নিত্য বাস।
এছাড়া আরো লক্ষ্য করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন দিক নির্দেশনা কার্যকর করতে বা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে! সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এতেই স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে দুর্ভিক্ষ এবং চরম বিশৃঙ্খলতা আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। আমরা রোগে নয় শোকে, হাতে নয় ভাতে মরবো! নিকট ভবিষ্যতে এমন আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
সাধারণ স্বাভাবিক নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে মৃত্যুবরণ করছে। সেই হিসাব এখন আর কেউ রাখছেন না। এখন মৃত্যু মানেই করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু!
দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তি মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে গত ১ মাস বা ১৫ দিন থেকে জ্বর কাশি সর্দি এক কথায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার নাম লিপিবদ্ধ হচ্ছে করোনা আক্রান্ত হিসেবে।
আবার এমনও দেখা যায়; কোন এক প্রতিবেশী বিদেশ থেকে এসেছেন ২ মাস পূর্বে এবং তিনি দিব্যি ভালোও আছেন। কিন্তু তার অন্য আরেক প্রতিবেশী স্বাভাবিক কোন রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন। সাথে সাথে পুরো সমাজ জুড়ে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে পড়ছে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এক ভয়াবহ অবস্থা। নির্মমতা; নিষ্ঠুরতা। কেউ ঘটনার গভীরে যাচ্ছে না শীর্ষ থেকে বিন্দু! কেউ না। ফলে, অনেক মৃত ব্যক্তির জানাজা থেকে দাফন পর্যন্ত কোন কিছুই স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না।
ইমাম মোয়াজ্জিম থেকে শুরু করে সাধারণ মুসল্লী পাড়া-প্রতিবেশী সবার ভেতরে এক ধরনের ভয় কাজ করছে। কেউ ভয়েকে জয় করতে এগিয়ে আসছে না। প্রসঙ্গত: গতকাল শুক্রবার সারারাত ৪৮ বছর বয়সী আব্দুস সামাদ মন্ডল নামের এক ব্যক্তি ফরিদপুর খুলনা মহাসড়কের পাশে পড়েছিলেন। জ্বরে কাতরাচ্ছিলেন। পেশায় তিনি দিনমজুর। অনেকে যাতায়াত করার সময় তাকে দেখেছেন কিন্তু করোনা সন্দেহে কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। আজ শনিবার সকালে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার পূর্বেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তার লাশ হাসপাতলে পড়ে আছে অথচ স্বজনরাও আসছে না লাশ নিতে! ঘটনাটি বললাম ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার।
নারায়ণগঞ্জের আরেকটি ঘটনা: গত ২ দিন আগে একজন ব্যক্তি মারা যান। তিনি গিটারিস্ট। দুই বছর থেকে অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু গত ১০ বা ১৫ দিনে তার অসুস্থতা বেড়েছে। যার কারণে প্রথমে স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতলে তাকে ভর্তি করাতে নিয়ে যান। রোগীকে ভর্তি না করিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক চিকিৎসাপত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। বাড়িতে ঘরোয়া চিকিৎসা চলল!
হঠাৎ অসুস্থতা বেড়ে গেলো। অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলো। অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার যখন শুনলেন, রোগীর শ্বাসকষ্ট আর জ্বরের তখনই তিনি পালিয়ে গেলেন অ্যাম্বুলেন্স রেখেই। রোগীটিকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠানো সম্ভব হলো না। কিছুক্ষণ পর তিনি মারা গেলেন। তারপর তার লাশ পুরো রাত বাড়ির সামনে পড়ে ছিল। কাপড় মোড়ানো। কেউ দেখতে, ধরতে এগিয়ে আসেনি। এমনকি স্বজনরাও। এমন ঘটনা আমাদের দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কিন্তু আমার ভাবনা; সবাই কিভাবে নিশ্চিত হলেন, উল্লেখিত দুই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত ছিলেন? তাহলে বুঝুন! আমাদের সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে কোথায় যাচ্ছে? এবং এর ভয়াবহ পরিণতি কি?
এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনাহারী মানুষের সংখ্যা। স্বজনদের জন্য টাকা পাঠাতে পারছেন না প্রবাসীরা। কারণ ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা বিশ্ব করোনা তা-বে ছিন্নভিন্ন। বেকারত্বের সংখ্যা দ্বিগুণ-তিনগুণ ছাড়িয়ে গেছে। সত্যি কি প্রিয় বাংলাদেশ একটি ‘ভিন্ন রকম অন্ধকার’ গুহার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?
করোনা ভাইরাস কিভাবে ভিন্নরুপে, ভিন্ন আঙ্গিকে আমাদের দেশে হানা দিয়েছে প্লিজ! একটু ভাবুন!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার ব্যক্তিগত একটি প্রস্তাব আপনার সানুগ্রহ বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করছি। উল্লেখিত পরিস্থিতিতে আপনি একটি জাতীয় ক্রাইসিস কমিটি গঠন করুন। যার উদ্যোক্তা হবেন আপনি।
জাতীয় ক্রাইসিস কমিটির চেয়ারম্যান করুন বিএনপি'র চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। আপনি প্রধান উপদেষ্টা থাকুন।
তারপর ,রাষ্ট্রের, সমাজের গুণীজন এবং রাজনীতিবিদদের এই কমিটিতে অভিজ্ঞতার আলোকে সদস্য করুন। ১০১ সদস্য বিশিষ্ট হতে পারে কমিটি। প্রস্তাবিত জাতীয় ক্রাইসিস কমিটির হাতে ন্যস্ত করুন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম ক্রাইসিস কমিটিকে তদারকি করতে দিন। একইসাথে ক্রাইসিস কমিটি এখন এবং সংকট পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করুক। দেশের নির্বাহী প্রধান হিসাবে আপনি সেটা বাস্তবায়ন করুন। জানি বিষয়টি কঠিন এবং জটিল। তবে অসম্ভব বা অবাস্তব নয়।
প্লিজ! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি একা কেন সবকিছুর দায় নেবেন? দেশটা সবার।
তাই দয়া করে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে এই মুহূর্তে সংকট মোকাবেলা করুন। এটি করলে ইতিহাস হয়ে থাকবে।
জীবন মরণ আল্লাহর হাতে। ভাইরাসের ছোবলে আমরা বাঁচবো কি মরবো তা নির্ধারণ করবেন একমাত্র আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা। তবে আমরা সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মসমর্পণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করি। তওবা করি। বারবার।
একই সাথে আমার প্রস্তাবিত কমিটি গঠন করা হলে; জাতি একটু স্বস্তি ফিরে পাবে, সাহস ফিরে পাবে। সামাজিক মূল্যবোধ শৃঙ্খলা কিছুটা হলেও সচল থাকবে। যা এই মুহূর্তে আমাদের খুবই প্রয়োজন।

লেখক: চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক
পলাশ চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেড।
সদস্য: ডিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিটিএমইএ এবং আটাব।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর