তৃতীয় রোজার দিন আজ। এই রমজান মাসকে বলা হয় আত্মসংযমের মাস। আমাদের প্রথমেই জানতে হবে- আত্মসংযম কি এবং কেন? যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে রােজা তাকে সম্বােধন করে বলে , আল্লাহ পাক রোজায় সারা দিনের জন্য তােমার উপর খানাপিনা হারাম করেছেন। এসময়ে হালাল উপার্জিত খাদ্য এবং পানীয় তােমার জন্য জায়েজ নয়। রােজা আরো বলে, আজ তােমার মালিক তােমার যৌন ক্ষুধার উপর বিধি নিষেধ আরােপ করেছেন। অতএব এ সময়ের মধ্যে তােমার স্ত্রীর সাথে মিলনকেও হারাম ঘােষণা করেছেন।
রােজা আরাে বলে যে, সারা দিনের দুঃসহ ক্ষুধা আর পিপাসার পর যখন তুমি ইফতার করবে তখন তুমি আরাম করার পরিবর্তে বছরের অন্যান্য দিনের চাইতেও বেশি বেশি ইবাদত কর। রােজা আমাদের এটাও শিক্ষা দেয় যে, দীর্ঘস্থায়ী নামাজ আদায়ের পর যখন বিশ্রাম করতে যাবে তখন সকাল পর্যন্ত বেহুশ হয়ে ঘুমিয়ে থাকবে না। শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নামায আদায় কর।
সুবহে সাদিকের পূর্বে সেহরি খেয়ে দেহকে শক্তিশালী কর। আরেকটি পূর্ণ দিবসে দাসত্ব করার ট্রেনিং তােমাকে গ্রহণ করতে হবে। এভাবে পুরাে একমাস ক্রমাগত নফসের তিনটি সবচেয়ে বড় এবং সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দাবী ও লােভ লালসাকে একটি কঠিন নিয়মের বাধনে আবদ্ধ করে রাখা হয়। এর ফলে ব্যক্তিসত্তার মধ্যে এক বিরাট শক্তি যুক্ত হয়। যা আল্লাহর মর্জি অনুসারে নফস ও দেহের উপর শাসন ক্ষমতা চালাতে সক্ষম হয় মানুষ। জীবনে শুধু একবারের জন্য এ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। বালক হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিবছর এক মাস এ কাজে ব্যয় হয়। কুপ্রবৃত্তির উপর আপন ব্যক্তিত্বের বাধন বছরে বছরে নবায়িত হয়। ফলে আল্লাহর নির্ধারিত প্রতিটি কাজে মানুষ তাঁর যাবতীয় শক্তি নিযুক্ত করতে পারে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয় এমন সব ভাল কাজের চেষ্টা করতে পারে। আল্লাহর নিষিদ্ধ প্রত্যেকটি পাপ কর্ম রুখে দাড়াতে পারে এবং যাবতীয় লােভ লালসা, আবেগ উচ্ছাসকে আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখতে পারে।
বস্তুত মানুষের মধ্যে এ শক্তি সৃষ্টি করা রােজার মূল উদ্দেশ্য। তা অর্জিত না হলে নবী করীম (সা:) বলেছেন , শুধু খানাপিনা পরিত্যাগের মধ্যে আল্লাহর কোন আবশ্যকতা নেই। আর এজন্যই বলা হয়েছে
রােজা আত্মসংযমের মাস। আর এ আত্মসংযম অর্জনের অনিবার্য ফলশ্রুতি হচ্ছে বেহেশত। আর এ জন্য রােজাদারের উপর আল্লাহ পাক এত খুশি হয়ে থাকেন যে রােজাদারের মুখের দুর্গন্ধ তাঁর নিকট মৃগনাভির সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।