× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনাকাল-৫ /অভিন্ন চিন্তা, অন্যরকম আয়োজন

মন ভালো করা খবর

শামীমুল হক
২৭ এপ্রিল ২০২০, সোমবার

করোনার থাবা সরাসরি গিয়ে পড়েছে দিনমজুরের ঘরে। দুস্থ,অসহায় তো রয়েছেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে বহু নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার। ঘরে যাদের খাবার নেই। চারদিকে ত্রাণের জন্য ছুটাছুটি। মধ্যবিত্ত অনেক পরিবার নীরবে চোখের জল ফেলছে। দীর্ঘ ছুটি অনেকের আয়, রোজগার বন্ধ করে দিয়েছে। তারা হয়ে পড়েছে অসহায়।
এরই মধ্যে এসেছে রমজান। যারা ঠিকমতো খাবারই জোগাড় করতে পারেনা এই রমজানে তাদের আবার ইফতার কি? এ মুহুর্তে তারা অবশ্য ইফতার নিয়ে চিন্তাও করছেনা। কিন্তু তাদের জন্য চিন্তা করেছে কিছু মানুষ। তাদের কথা হলো- ইফতার খাব, সবাইকে নিয়ে খাব। ঘরের ইফতার নিয়ে অন্যরকম আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে ওরা কজন। কদমতলী থানার জনতাবাগ গ্যাস রোডের মজুমদার কমপ্লেক্সের বাসিন্দা ওরা। তারা ওই কমপ্লেক্সের প্রতিটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা করেন। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ঘরের ইফতার অসহায়দের হাতে তুলে দেয়া হবে। নিজেরা যা খাবে দুস্থ, অসহায়রাও তা খাবে ইফতারে। আর মধ্যবিত্ত পরিবারে গোপনে পৌঁছে দেয়া হবে এ ইফতার। যেই কথা সেই কাজ। রোজার প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় তাদের পথচলা। আসরের পর থেকে প্রতিটি ফ্ল্যাটের একজন একজন করে ভবনের নিচে নেমে আসেন। প্রত্যেকের হাতে তাদের ঘরে বানানো ইফতারি। কারো হাতে থালা, কারো হাতে টিফিন ক্যারিয়ার । নিয়ে এসেছেন ইফতারি। মজুমদার কমপ্লেক্সের নিচে বিভিন্ন আইটেমের ইফতার জমা হয়। এরপর কর্মী বাহিনী নেমে পড়ে প্যাকেট করার কাজে। কিছু ছোলা, আলু চপ, পিঁয়াজু ,খেজুর আর কিছু ফল দিয়ে প্রস্তুত করা হয় একেকটি প্যাকেট। সঙ্গে আছে মুড়ি। আর এই কাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করছেন মজুমদার কমপ্লেক্সের বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, রাজিব হোসেন, মনসুর আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন এবং মাহিম। তাদেরকে দেখে উৎসাহী হয়ে পার্শ্ববর্তী ভবনের বাসিন্দা শাহীন ও রায়হানও এগিয়ে এসেছেন। তারাও তাদের ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে ইফতার এনে দিচ্ছেন মজুমদার কমপ্লেক্সে। গতকাল ২য় রমজানে অর্ধ শতাধিক অসহায় মানুষের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে এ ইফতার। প্রথম দিন থেকে শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম । সেদিন ৩৫ জনের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল ইফতার। আর প্রথম দিনের এই আয়োজন দেখে আশপাশের আরো ভবনের লোকজন দ্বীতিয় দিনেই ইফতার দিয়ে শরিক হয়েছেন। ইফতারের আগেই মধ্যবিত্ত পরিবারে পৌঁছে দেয়া হয় ইফতারি। অত্যন্ত গোপনে তাদের বাসায় তা পৌঁছানো হয়। আশপাশের লোকজন জানিয়েছেন, মজুমদার কমপ্লেক্সের বাসিন্দাদের এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এই কাজের সমন্বয়ক মনসুর আহমেদ বলেন, এবারের রমজান অন্যরকম এক রমজান । মানুষজন ঘরে বন্দি । কাজ বন্ধ। আয় নেই। মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছে না । তাই আমরা এ কমপ্লেক্সের ৪০ পরিবার উদ্যোগ নিয়েছি আমাদের প্রতিবেশী যারা ইফতার করতে পারে না তাদের মাঝে ইফতার পৌঁছে দেবো। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা এই কাজ করছি। আমি সামর্থবান সবার প্রতি আহ্বান জানাই আপনার আশে পাশে অসহায় দরিদ্র যারা আছেন তাদের হাতে ইফতার তুলে দিন।

প্যাকেট করার পর শুরু হয় বিতরণ। এখানে একে একে ইফতার নিতে আসেন জনতাবাগের বাসিন্দা শরিফা, লাকি, হযরত আলী, জসিমসহ আরো অনেকে। শরিফা বলেন, তারা রোজা রেখেছেন । বাসায় ইফতারি বানানোর আয়োজন করতে পারেননি। এখানে ইফতারি দেয়া হয় শুনে এসেছেন । এই ইফতার দিয়ে পরিবারের সবাই রোজা ভাঙব। জসিম বলেন, ঘরে বসে চিন্তা করছিলাম এক গ্লাস পানি খেয়ে রোজা ভাঙব। এরই মধ্যে খবর পেলাম মজুমদার কমপ্লেক্সে অসহায়দের ইফতার দেয়া হবে। ইফতার হাতে নিয়ে বলেন, এখন ঘরে গিয়ে সন্তানদের সামনে ইফতার দিতে পারব।

আরেক সমন্বয়কারী রাজিবুর রহমান বলেন, রমজান মাস সওয়াব অর্জনের মাস। ইফতার করানো সওয়াবের কাজ। আমরা ঘরে ইফতার করব। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ ইফতার করবেনা এটা হয়না। তাই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি আমাদের আশেপাশে যারা দরিদ্র তারা যেনো ইফতার করতে পারে । সেই জন্য আমরা আমাদের কমপ্লেক্সের প্রতিটি পরিবার থেকে ইফতার সংগ্রহ করে অসহায় দরিদ্রদের মাঝে ইফতার দিচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে রমজানের শেষ দিন পর্যন্ত। এই উদ্যোগের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের এই ক্রান্তিকালে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি আশেপাশের দরিদ্রদের মাঝে ইফতার তুলে দিতে ।আমরা ইনশাআল্লাহ এই কাজ করে যাব। অসহায় মানুষের হাতে ইফতার তুলে দিতে পেরে আমার অনেক আনন্দ লাগছে। অসহায় মানষগুলো যখন ইফতার নেন তখন তাদের মুখে দেখা দেয় হাসির ঝিলিক। তা দেখে মনটা ভরে যায়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর