× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নারায়ণগঞ্জে মানবতার দৃষ্টান্ত ‘এহসান পরিবার’

মন ভালো করা খবর

বিল্লাল হোসেন রবিন, নারায়ণগঞ্জ থেকে
১১ মে ২০২০, সোমবার

করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও আতঙ্ক চলছে। মানুষ মরলেই করোনার ভয় কাজ করে। মৃতদেহটি কি করোনায় আক্রান্ত ছিলো- এমনটা ভেবে স্থানীয়দের মধ্যে কাজ করছে আতঙ্ক। সর্দি-জ্বর হয়ে মারা গেলে নমুনা টেষ্ট করাতে হয়। টেষ্ট পাঠাতে দেরি হয় না, কিন্তু লাশ দফন করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরি হয়। আর যদি করোনায় মারা যায় তাহলে তো প্রতিবেশি থেকে শুরু করে আপন ছেলে-সন্তান পর্যন্ত মৃত বাবা মায়ের লাশটি দাফন করে না। কাছে পর্যন্ত দেখতে আসে না। এমনটাই দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে।
আবার কোন কোন লাশের পরিবার এগিয়ে আসলেও অসহযোগিতার কারণে দাফন-কাফন নিয়ে মহাবিপদে পড়ে যায় সংশ্লিষ্ট পরিবার। এমন বিপর্যয়কর সময়ে লাশের গোসল, জানাযা দাফন-কাফন এগিয়ে এলেন এহসান পরিবার’ নামে একটি মানবিক সংগঠন। তারা মৃতের পরিবারকে বলেন, ‘আমাদেরকে লাশ বুঝিয়ে দিন। হোক সে করোনা রোগী বা করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত। গোসল থেকে শুরু করে জানাযা, দাফন-কাফন সব আমরা করে দেব। সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা এ পর্যন্ত ২৬টি মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করেছে। এরমধ্যে একজন হিন্দু ব্যক্তির সৎকারও করেছেন তারা। এসময় নিহতের স্বজনরা বিনিময় দিতে চাইলেও তারা নেননি। বলেছেন বিনিময় আমরা আল্লাহার কাছ থেকে নেব।
এহসান পরিবারের স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি থেকেও সংক্রমিত হতে পারেন ভয়ে ঘনিষ্ঠ স্বজনরাও পিছিয়ে যান। কিন্তু আল্লাহর রহমতে, আমরা ২৬টি লাশ দাফন-সৎকার ও অন্যান্য কাজ করলেও কেউ অসুস্থ হইনি। আমরা সবাই ভালো আছি।

ইতিমধ্যে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে “এহসান পরিবার” নামে একটি ফেসবুক পেজ জেলায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীররা করোনার প্রথম থেকেই শহরের ভাসমানদের রান্না করা খাবার বিতরণ, দুস্থ ও গরিবদের মধ্যে আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ বিনামূল্যে শিশুখাদ্য দুধ পৌছে দিয়েছে, যা এখনো চলমান। তাদের ফেসবুকে দেখা যায়, মানুষের কল্যাণে নানা স্বেচ্ছা কর্মের ভিডিওফুটেজ ও ছবি।
সংগঠনের জিম্মাদার নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আনোয়ার হোসেন জানান, নারায়ণগঞ্জে করোনা পরিস্থিতির প্রথম দিকে মার্চ মাসে ‘এহসান পরিবার”নামে একটি স্বেচ্ছসেবী সংগঠন করে আমরা প্রায় ১১ দিন ধরে জেলায় ভাসমানদের মধ্যে ৩০০ প্যাকেট করা রান্না খাবার বিতরণ করেছি। আমরা নানা সংগঠনের পেশাজীবি ও ব্যবসায়ী নিজেরাই অুনদান দিয়ে সংগঠন কার্যক্রম শুরু করি। এরই মধ্যে জেলায় করোনায় মারা গেলে মানুষ লাশ ধরতে এগিয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে কেউ করোনাসহ নানা ব্যাধিতে মারা গেলে বিনা পারিশ্রমিকে লাশের সকল কর্ম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেই। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার (৯ মে) পর্যন্ত ২৫টি মরদেহ কবরস্থ এবং একজন হিন্দুর মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আমরা এ পর্যন্ত যে লাশগুলো দাফন ও সৎকার করেছি তার তালিকা নিচে দেয়া হলো-
মরহুম মজিবুর রহমান চুন্নু, বন্দর উপজেলা, হুময়ুনের বোন, আমলাপাড়া, আজিজুল হক(৮০), আমলাপাড়া শফিউল্লাহ (৬৫) আফাজনগর, ফতুল্লা, জালালউদ্দিন (৫৫), মাসদাইর, ফতুল্লা, মফিজুর রহমান, মাসদাইর, ফতুল্লা, আয়শা আক্তার, জামতলা, বাদল চন্দ্র, আমলাপাড়া, কোহিনূর বেগম, গাইনী ডাক্তার মিনার শিকদারের মা করোনা রোগী, মোনায়ারা বেগম (৫৭), ইসদাইর, ফতুল্লা, আব্দুল মালেক (৬৫),আফাজনগর, ফতুল্লা আসাদ (৫৫) হাসেনপুর, সোনারগাঁ, সোলেমান (৬৫) খানপুর, শহর, হুময়ান আহমেদ, আমলাপাড়া, মো: শুক্কুর আলী মাতব্বর, কায়েমপুর, ফতুল্লা, মাওলানা শামসুল আলম (৮০), বন্দর, ইব্রাহীম মোল্লা, রূপগঞ্জ, মো: সেলিম, ইসদাইর, ফতুল্লা, মাওলানা মকবুল হোসেন জিহাদী, উত্তর মাসদাইর, ফতুল্লা নূরুল ইসলাম (৮৫), ইসদাইর ফতুল্লা, মামুন পাইকের মা, মাসদাইর কবরস্থান, ফতুল্লা, আক্তার হোসেন, শাসনগাও, ডাক্তার এমদাদুল হক, কেরানীগঞ্জ, আবুল হাশেম (৬৫) মাসদাইর, ফতুল্লা, অজ্ঞাত পশ্চিম মাসদাইর ও রমজান আলী, ফতুল্লা পৌষা পুকুরপাড়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর