করোনা ভাইরাসের কারণে সাময়িক ভাবে ওমরাহ হজ বন্ধ। সামনে কি হবে তা মহান আল্লাহই জানেন। করোনা ভাইরাস পৃথিবীর সব কিছু উলট পালট করে দিয়েছে। ওমরাহ হজ যেহেতু আপাতত বন্ধ সেহেতু আপনারা আত্মমানবতার সেবায় অসহায়ের পাশে দাড়ান।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে লা-ইলাহা ইল্লালাহু, সালাত, রোজা হলো দৈহিক উপাসনা। হজ এবং যাকাত অর্থনৈতিক উপাসনা। তবে হজের ক্ষেত্রে মুমিনদের দেহের পাপাত্মাসমূহ পরিস্কার হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, মানুষ গোসল করলে যেমন শরীরের ময়লা আবর্জনা সমুহ দূর হয়ে যায় তেমনি হজ করলে মানবজাতির পাপাচার সমূহ মুছে যায়। আর যাকাত শুধু ধন-সম্পদের পবিত্রতার খাজনা। পাপ মানুষকে জাহান্নামের উপযুক্ত করে তোলে।
কিন্তু হজ মানবজাতির অতীতের সকল পাপসমূহকে মুছে দেয়। তাই হজে মাবরুর (মাক্ববুল হজ) শেষে সকল হাজীদের ইহজগতের সকল দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বায়তুল্লাহ তাওয়াফের কারনে আল্লাহপাক হাজীদেরকে রহমতের চাঁদরে পরিবেষ্টিত করে দেন। হজের দ্বারা বান্দা আল্লাহর নিকট জান এবং মাল দিয়ে সাদা কাপড় পরে আত্মসমর্পন করে। মহান রবের মেহমান হওয়ার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ লাভ করে। আল্লাহর ঘর এবং রাসুল (সাঃ) এর রওজা মোবারক তাওয়াফ শেষে বান্দা দুনিয়া বিমুখ হয়ে যায়। পৃথিবীর সকল ঝামেলা মুক্ত হয়ে হজব্রত পালন করা চাই। কেননা হজের আনুষ্ঠানিকতা বান্দার মাঝে বিশাল আমানতের জিম্মাদারী তৈরি করে ঈমানকে মজুবত করে ফেলে। ফলে হাজীরা হজ পূর্ব অবস্থার চেয়ে প্রকৃত মুমিন হিসেবে পরহেজগারী নিয়ে চলতে সক্ষম হয়। এ কারনে অনেকে জীবন ভাটির সন্ধিক্ষণে হজ করতে চান। যাতে করে তিনি হজ থেকে ফিরে এসে জগত-সংসার অর্থাৎ দুনিয়া বিমুখ হয়ে যেতে পারেন।
হজে যাবার আগে একজন হজযাত্রী রাফাছ অর্থাৎ অশ্লীলতা, ফুছুক অর্থাৎ পাপাচার এবং জিদাল অর্থাৎ ফিৎনা, ফ্যাসাদ থেকে মুক্ত থেকে তাকওয়া অর্জনের অনুশীলন করবে। হজে মাকরুর কবুল হজের জন্য যেমন তাকওয়া বা খোদাভীতি অপরিহার্য, তেমনি একজন সফল ও স্বার্থক হাজীর-হজ-পরবর্তী আগামী জীবন যাত্রা সম্পূর্ণ ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক চলা-অপরিহার্য! হাজী উপাধি নিয়ে আল-কোরআন এবং সুন্নত বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার কোন সুযোগ নেই! (বাকারাহ আয়াত,২০৩-২০৬)। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন যে, হজ শেষে হাজীরা নিস্পাপ মাছুম শিশুর মত হয়ে যান। সিবগাতাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রঙে রঙিন হয়ে যান। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিণত হন। যা মৃত্যুকাল পর্যন্ত কখনো মুছে যায় না। হজের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, আরাফাতে অবস্থান, তাওয়াফে জিয়ারাহ সহ রাসূল (সাঃ) -এর স্মৃতি বিজড়িত পূত-পবিত্রস্থান সমূহ প্রত্যক্ষ করার ফলে হাজীদের চিন্তা-চেতনা, চরিত্র ও কর্ম এবং জীবন বৈশিষ্ট ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন হয়ে যায়। শয়তান কে পাথর মারার পর হাজীর অন্তরে তাবৎ শয়তানি শক্তি দুর হয়। কালো কাপড় হলো শোকের প্রতিক, দু:খের প্রতিক। আর সাদা কাপড় হলো পবিত্রতার প্রতিক। মানুষ মারা গেলে সাদা কাপড়ে কবরে যায়। আর হজে গেলে হাজিরা ইহরাম নামক সাদা কাপড় পড়ে আল্লাহর সানিধ্য লাভের আশায়। আমি যখন সাদা কাপড় পড়ে আল্লাহকে বললাম, হে আল্লাহ-আমাকে ক্ষমা করে দাও। তাহলেতো আর পাপাচার করার প্রশ্নই আসে না।
রাসুল (সাঃ) কে জনৈক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূল্লালাহ (সাঃ) গোনাহ বা পাপের রং কি রকম? রাসূল (সাঃ) উত্তরে বললেন গোনাহ বা পাপের রং হলো কালো। কেননা হাজরে আসওয়াদ কালো পাথরটি ভিত্তিপ্রস্থর কালীন সময়ে হাজরে আবইয়াজ (সাদা পাথর) ছিলো। ঐ পাথরে মানবজাতি চুমু এবং চুম্মন খেতে খেতে পাথরটি মানুষের গোনাহ সমুহ চুম্বকের মত চুষতে চুষতে পাথরটি কালো হয়ে যায়। এবং মানবজাতি গোনাহ মুক্ত হয়ে আল্লাহর জমিনে প্রত্যাবর্তন করে। হজ পরবর্তী সময়ে সকল হাজীদের তাকওয়া ভিত্তিক জীবন একমাত্র পাথেয়। অনেকে হজ থেকে ফিরে এসে হালাল-হারাম যাচাই বাছাই না করে সেই অতীতের জীবনে ফিরে যায়। হজ পরবর্তী দুনিয়া বিমুখ হাজিদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক কঠিন পরীক্ষারও সম্মুখীন হতে হয়। মুসলিম জাতির আদি পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) -এর জন্য কঠিনতম পরীক্ষা, শিশুপুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) আর হাজেরা (আঃ) কে শুস্ক মরুপ্রান্তরে ক্ষুধার জ্বালা, প্রাণনাশের আশঙ্কাসহ অনেক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। সাফা-মারওয়াতে ‘ছায়ী’ প্রত্যেক হাজী ও ওমরাহ পালনকারীকে পবিত্র কোরআনুল কারীমের সুরায়ে বাক্বারাহ এর ১৫১-১৫৭ আয়াতে বর্ণিত সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষায় টিকে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিশ্চয় সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্তর্ভুক্ত (বাকারাহ ১৫৮)। অন্যত্র আল্লাহপাক বলেছেন, আর যারা আল্লাহকে স্মরণ করবে, আল্লাহপাকও তাদের স্মরণ করবেন (বাক্বারাহ আয়াত ১৫১)। মহান রাব্বুল আলামিন কে শুধু জিকির এর সাথে স্মরণ এবং তাঁর সাথে সকল ইসলাম বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে।
আল্লাহর রাস্তায় কার্যক্রম থাকা অবস্থায় বাকীদের পরীক্ষা করা হবে ভয় ভীতি, ক্ষুধা, অনাহার, জানমাল, ও ফসলাদির ক্ষতি সাধন করে (বাক্বারাহ আয়াত ১৫৫)। আর সত্যিকারের মুমিনরা বিপদে পতিত হলেও তাঁহারা কোন ভয়ভীতি না করে বরং তাঁহারা বলবে আমরা তো আল্লাহর জন্য, আর নিশ্চিত আমরা আল্লাহর নিকট ফিরে যাবো (বাক্বারাহ আয়াত ১৫৬)।