ঈদ শেষে করাচির হাসপাতাল উপচে পড়ছে করোনা রোগীতে। বেডভর্তি রোগী। কোনো বেড খালি নেই। ফলে নতুন রোগী এলেই তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলেছে, বেড অথবা ভেন্টিলেটরের কোনো সঙ্কট নেই। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডো ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের (ডিইউএইচএস) ওঝা ক্যাম্পসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, অনেক রোগীকে এম্বুলেন্সের ভিতরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সবাইকে আমাদের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গল ও বুধবার আকস্মিকভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী বেড়ে গেছে। তিনি নিশ্চিত করে বলেন, অনেক রোগীকে হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ভর্তি করা হয় নি। শুধু মারাত্মক অসুস্থ যারা তাদেরকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের হাসপাতালের করিডোরে অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। ডিইউএইচএসের মুখপাত্র নাঈম তাহির এ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেন নি। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোন রোগীকে ফিরিয়ে দেয়া হয় নি।
করাচির সিভিল হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তার রুথ পফাউয়ের মতে, করাচির সিভিল হাসপাতালসহ মেট্রোপলিটনের সব বড় হাসপাতাল রোগীতে ভর্তি। স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এমন অন্য হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে জিন্নাহ পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল সেন্টার, ইন্দুস হাসপাতাল ও ডিইউএইচএস। এসব হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাই যারা বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয় নির্বাহ করতে পারেন না তারা সবাই ছুটে যাচ্ছেন এসব হাসপাতালে। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে একজন ডাক্তার বলেছেন, আমার নিজের আত্মীয়সহ কমপক্ষে ১২টি পরিবারের বিষয়ে আমার যোগাযোগ রয়েছে। তারা কোভিড-১৯ এর রোগী ভর্তি করাতে চান। কিন্তু তাদেরকে একটিমাত্র বেডও দিতে পারছি না। তিনি দাবি করেন, আগেই স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক করেছিল এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে। তাতে বলা হয়েছিল, ২০ মের পরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু সেই অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।
বুধবার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দেয়া ডাটা অনুযায়ী, করাচির সিভিল হাসপাতালের আইসিইউ বেড আছে ১২টি। তার সবটাতে রোগী ভার্তি করা আছে। এর মধ্যে দু’জনকে রাখা হয়েছে ভেন্টিলেটরে। দু’জনকে রাখা হয়েছে বাইলেভেল পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার মেশিনে। একই অবস্থা জিন্নাহ পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল সেন্টারে। সেখানে আছে ১৯টি হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট এবং ১৭টি আইসিইউ। সেখানে দু’জন রোগীকে রাখা হয়েছে ভেন্টিলেটরে। সব বেড পূর্ণ।
রোগীদের ফিরিয়ে দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন করাচির সিভিল হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেন্ডেন্ট ড. খাদিম হোসেন কুরেশি। তবে ভেন্টিলেটরের সঙ্কটের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। এখন সেখানে আর কোনো ভেন্টিলেটর খালি নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। তার দাবি, হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে এখনও সাতটি বেড খালি আছে। তিনি আশা করেন, আগামী সপ্তাহে নতুন ২৭টি ভেন্টিলেটর পাবেন। তার ভাষায়, এখন সব হাসপাতাল একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছে। কোনো রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেই তাকে যে হাসপাতালে ভেন্টিলেটর খালি আছে সেখানে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ইন্দুস হাসপাতালে আছে ১৫টি আইসিইউ বেড। আর আছে ১৩টি হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট বেড। এসব বেড রোগীতে পূর্ণ। এ তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগের। উপরন্তু এই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের ১৫টি বেডও পূর্ণ। একই অবস্থা সিন্ধু ইন্সটিটিউট অব ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশনে। সেখানে আছে ১০টি আইসিইউ বেড। আইসোলেশন ওয়ার্ডে আছে ১৬টি বেড। সবই রোগীতে পূর্ণ। তবে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে ৩০টি বেডের মধ্যে মাত্র দুটি খালি আছে।