হত্যাকান্ডের ১১ মাস পর লাশের সন্ধান পেলো পুলিশ। তারপর মাটি খুড়ে মাথার খুলি মিললো বগুড়ার কৃষক রফিকুলের। রহস্যও উদঘাটন হয়। নিজের স্ত্রী এবং সন্তানের হাতেই তিনি খুন হন। কারণ স্ত্রীর পরকীয়ায় বাঁধা।
হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মহিদুল এবং শাকিল নামের দু’জনকে আটক করার পর তাদের দেয়ার তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার মৃতের মাথার খুলি এবং গলিত দেহ উত্তোলন করে বগুড়া জেলা পুলিশের টিম। ওই হত্যার সাথে জড়িত আরো দু’জনকে আটক করা হয়। পরকীয়া প্রেমের বাধা সরাতেই কৃষক রফিকুলকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞাঁর উপস্থিতিতে পানির মধ্য থেকে কৃষক রফিকুলের গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জুলাই সোনাতলা সদর ইউনিয়নের রানিরপাড়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম (৪৭) নিখোঁজ জানিয়ে তার পরিবার সোনাতলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। জুন মাসের ১৫ তারিখ থেকে রফিকুল নিখোঁজ বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর ১১ মাসেও কৃষক রফিকুলের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। এর মাঝে গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার তেকানিচুকাই নগরের শাকিল (২২) নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মহিদুলকে আটক করা হয়। পরে নিখোঁজ রফিকুলের স্ত্রী রেহানা এবং ছেলে জসিমকে আটক করা হয়। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে কৃষক রফিকুলের স্ত্রীর গোপন প্রেমের ঘটনা বেরিয়ে আসে। পরে পুলিশের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে মুহিদুল, রফিকুলের বউ রেহানা, ছেলে জসিম এবং রেহানারা বোনের ছেলে শাকিল মিলে রফিকুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। এরপর তারা রফিকুলের লাশ বস্তায় ভরে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে বগুড়া সোনাতলা রেলাইনের পাশে প্রায় তিনফুট গর্ত করে পুঁতে রাখে। পরকীয়া প্রেমের বাঁধা সরাতেই রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে জানায় রেহানা এবং মুহিদুল। বাবাকে হত্যা করতে ছেলেকে মা রেহানা বাবার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ভুল বুঝিয়ে তাদের দলে সামিল করে। এরপর ঘটনার দিন রফিকুলকে রাতে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করার পর তার গলাটিপে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে তারা চারজনই সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। এরপর শাকিল, মুহিদুল এবং জসিম লাশ ঘাড়ে করে রেললাইনের পাশে নিয়ে পুঁতে রাখে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ ও সোনাতলা সার্কেল এএসপি কুদরত ই খুদা শুভ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা প্রথমে মহিদুল এবং শাকিলকে আটক করি। এরপর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহতের স্ত্রী রেহানা এবং ছেলে জসিমকে আটক করা হয়। নিহতের ছেলে জসিমকে তার মা রেহানা অর্থের লোভ দেখিয়ে হত্যাকান্ডে সামিল করে। বেলা সাড়ে ১১টায় মহিদুল এবং শাকিল দেয়া তথ্যে সোনাতলা রেলাইনের পাশের জমি থেকে নিহত রফিকুলের লাশ উত্তোলন করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের সোনাতলা থানা হাজতে রাখা হয়েছে।