লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় মাদারীপুর সদর মডেল থানায় একটি এবং রাজৈর থানায় ২টি মামলা দায়ের করেছে নিহতদের পরিবার। ৩টি মামলায় ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। মামলার এজাহার ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশি হত্যা করে মানবপাচারকারীরা। এদের মধ্যে অধিকাংশই মাদারীপুরের বাসিন্দা। এ ঘটনায় লিবিয়ায় নিহত ও মানবপাচারের শিকার মাদারীপুর সদর উপজেলার দুধখালি ইউনিয়নের দক্ষিণ দুধখালি গ্রামের মো. শামীম হাওলাদারের বাবা হালিম হাওলাদার বাদী হয়ে রোববার বিকেলে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় ৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। এই মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে দালাল নজরুল মোল্লার স্ত্রী দিনা বেগমকে। দালাল নজরুল মোল্লা এখন লিবিয়াতে রয়েছেন।
এই ঘটনায় রোববার রাতেই মামলার প্রধান আসামি দিনা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অপরদিকে একই ঘটনায় মাদারীপুরের রাজৈরে লিবিয়ায় নিহত জুয়েলের বাবা রাজ্জাক হাওলাদার বাদী হয়ে দালাল জুলহাস সরদারসহ ৪ জনের নামে মানবপাচার আইনে মামলা করেছে রাজৈর থানায়। এছাড়াও রাজৈর থানার বদরপাশা ইউনিয়নের নিহত রহিম খালাসীর ভাই আবু খায়ের খালাসী বাদী হয়ে রাজৈর থানায় আরো একটি মামলা দায়ের করেছে। এই মামলা জুলহাস সরদারসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের নিহত মানিক হাওলাদারের পিতা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, আমার ছেলে মানিককে লিবিয়া নেওয়ার কথা বলে দালাল জুলহাস আমার কাছ থেকে প্রথমে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। পরে ছেলেকে বেনগাজী আটকে রেখে ভয়েজ রেকর্ডের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আমি আমার ছেলেকে আনতে জুলহাসের বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে আসি।
একই গ্রামের নিহত জুয়েল হাওলাদারের পিতা রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, আমার ছেলেসহ রাজৈরের বেশ কয়েকজনকে দালাল চক্র লিবিয়া নেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা চুক্তি করে নিয়ে যায় ৩/৪ মাস আগে। তারপর লিবিয়ার ত্রিপোলী না নিয়ে বেনগাজীতে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে। এরপর ভয়েজ রেকর্ডে নির্যাতনের শব্দ পাঠিয়ে আরো ১০ লাখ টাকা দাবী করে। আমরা হোসেনপুর জুলহাস সরদার নামের ওই দালালের বাড়িতে গিয়ে ১০ লাখ টাকা দিয়ে আসি।
রাজৈর থানার ওসি খন্দকার শওকত জাহান বলেন, মানবপাচারের ঘটনায় রাজৈর থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছে নিহতের পরিবার। দালাল জুলহাস দুটি মামলারই আসামি। একটি মামলায় ৭ জন ও অপর মামলায় ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে জুলহাস করোনা পজেটিভ হওয়ায় পুলিশি হেফাজতে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি রয়েছে। মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. কামরুল ইসলাম মিয়া জানান, মানব পাচারের ঘটনায় মাদারীপুর সদর মডেল থানায় ৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে নিহত শামীমের বাবা হালিম হাওলাদার। এই মামলার প্রধান আসামি দিনা বেগমকে আমরা রাতে গ্রেপ্তার করেছি। এখন আদালতে প্রেরণ করা হবে।