× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আক্রান্তের চতুর্থ স্থানে সিলেট হাসপাতালেও বাড়ছে রোগী

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২ জুন ২০২০, মঙ্গলবার

সিলেটে ক্রমেই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এই সংখ্যা ইতিমধ্যে হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন। উপসর্গ নিয়ে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে রাতারাতি। করোনায় সংক্রমণ হারে সিলেট এখন দেশের চতুর্থ স্থানে। ১৫ দিন আগেও করোনা নমুনার জন্য রোগী পাওয়া যায় কম। আর এখন টেস্ট করাতেই লম্বা লাইন।
কার আগে কে নমুনা দেবে- সে নিয়েও হচ্ছে মারামারি। করোনা চিকিৎসায় হাসপাতাল সংকটও দেখা দেয়ার উপক্রম। একমাত্র সিলেটের শামসুদ্দিন হাসপাতালই হচ্ছে সিলেটের করোনা চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য স্থান। কিন্তু এই হাসপাতালও রোগীতে ভর্তি। হাসপাতালের পরিবেশ নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ। এরপরও রোগীরা নিরুপায় হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিকল্প চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। রোগী বাড়লে কী হবে পরিস্থিতি- এখনো সেটি জানেন না কেউ। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেটে যে পরিমাণ রোগী আক্রান্ত হয়েছেন তার ৪ ভাগের এক ভাগ হাসপাতালমুখি হলে সংকুলান হবে না। রোগীকে রাখতে হবে করিডোর কিংবা বাইরে। অথচ এমন পরিস্থিতি সিলেটে ১৫ দিন আগেও ছিলো না। বেশ নির্ভার ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও। কিন্তু এখন রোগী বাড়ছে সমানতালে। কেন এমন পরিস্থিতি- এ প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান- ‘সিলেটে লকডাউন মানা হয়নি। ঈদের আগে যেভাবে সিলেটে খোলামেলা মার্কেটিং হয়েছে এর খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। একদিনে রোগী বেড়েছে ৯৩ জন। এই অবস্থায় আগামীতে কী হবে- সেটি অনুমান করা কষ্টকর।’ স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্য মতে- সিলেট বিভাগে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ১০৪০। এর মধ্যে মারা গেছেন ২০ জন। উপসর্গ নিয়ে কতজন মারা গেছেন সেটি তাদের কাছে নেই। এর সংখ্যা হতে পারে অর্ধশতাধিক। আক্রান্তদের মধ্যে সিলেট জেলায়ই সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫৫ জন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অর্ধশতাধিক সদস্য করোনা আক্রান্ত। সিলেটের বিশ্বনাথে আক্রান্ত ৩৬ জন পুলিশ সদস্য। অন্য বাহিনীতেও আছে আক্রান্তের সংখ্যা। ৫ জন সংবাদকর্মীও আক্রান্ত। স্বাস্থ্য বিভাগে এই সংখ্যা শতাধিক। ডাক্তার ও নার্সরা মারা যাচ্ছে সিলেটে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, ঈদের পূর্ব পর্যন্ত তিনি ত্রাণ কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন। হঠাৎ করে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস তাকে ‘অ্যাটাক’ করেছে। এখন তিনি নিজ বাসাতেই আইসোলেশনে রয়েছেন। সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের স্ত্রী আসমা কামরানও করোনা আক্রান্ত। নিজ বাসাতেই তিনি আইসোলেশনে। কামরান জানিয়েছেন- তার স্ত্রীর অবস্থা ভালো আছে। সব সময় তার খেয়াল রাখা হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া সিলেটের করোনা আক্রান্ত সিটি কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ হাসপাতালে ভর্তি। তার সঙ্গে ভর্তি রয়েছেন আরেক কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস। আইসোলেশন সেন্টার সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। ১০০ শয্যার হাসপাতাল ছিলো এটি। আইসিইউ ওয়ার্ডে বেড় ১১টি। এর বাইরে ৭০-৭৫ জন রোগী রাখা যাবে হাসপাতালে। এই হাসপাতালের ধারন ক্ষমতা ক্রমেই কমে আসছে। গতকাল পর্যন্ত এখানে রোগী ছিলেন ৬৩ জন। এর মধ্যে ৫২ জনই করোনা আক্রান্ত। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র জানিয়েছেন- জায়গা কমে আসছে। আর হয়তো ১০-১২ জন রোগী ভর্তি করা যাবে। এরপর আর রোগী রাখার জায়গায় নেই। তিনি জানান- গতকালও একজন করোনা আক্রান্ত রোগী এই হাসপাতালে মারা গেছেন। এর আগের রাতে মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি থাকা দুই রোগী। এদিকে- এই অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটে করোনা চিকিৎসা নিয়ে চিন্তিত। তবে- এরই মধ্যে সিলেটে করোনা চিকিৎসা সরকারকে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নর্থইস্ট। এ হাসপাতাল তিন মাসে চিকিৎসা বাবদ চায় ২৬ কোটি টাকা। এরপরও নর্থইস্টকে ছাড়তে রাজি নয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। ডা. আনিসুর রহমান জানান- ‘সিলেটে দ্রুত চিকিৎসা সেবা বাড়াতে আমরা গতকালও স্বাস্থ্য দপ্তরকে চিঠি দিয়েছি। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের তরফ থেকেও একটি পত্র যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে খুব দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে। দ্রুত চিকিৎসার বিকল্প ব্যবস্থা চালু না হলে সিলেটে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া কষ্টকর হবে। এদিকে- রোববার থেকে সিলেটে আবার দোকানপাট সব খুলে দেওয়া হয়েছে। এর পর রোগীও বেড়েছে। তবে- নমুনা পরীক্ষা নিয়ে সিলেটে ক্ষোভ বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেটে সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকেই করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে কয়েকটি টিম কাজ করছে। এর মধ্যে নমুনা সংগ্রহের উল্লেখযোগ্য বুথ হচ্ছে নগরীর আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। সেখানে সিভিল সার্জনের টিমের সদস্যরা নমুনা সংগ্রহ করেন। দিনে দিনে লম্বা হচ্ছে নমুনা প্রদানের সারি। এক সপ্তাহে যেখানে নমুনা দেওয়ার রোগীই পাওয়া যেতো না, এখন প্রতিদিন শ’শ মানুষ ভিড় করছেন নমুনা পরীক্ষার জন্য। নুমনা দিতে আসা লোকজন গতকাল দুপুরে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- শামসুদ্দিন হাসপাতালে যে বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হয় সেখানে সোমবার ছিলো প্রচণ্ড ভিড়। এই ভিড়ের কারণে কে কার আগে নমুনা দেবে তা নিয়েও মারামারি হয়েছে। সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দুটি ল্যাব দিনে তিনশ’টির মতো নমুনা পরীক্ষা করতে পারে। এ কারণে ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে শুধুমাত্র সিলেট জেলার রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আর শাবির ল্যাবে সুনামগঞ্জ জেলায় সংগৃহিত নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর বাইরে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের নমুনা সিলেটে পরীক্ষা করার সুযোগ হয় না। এ কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে এ দুই জেলার সংগ্রহ করা নমুনা ঢাকার একটি ল্যাবে পাঠানো হয়। আর পরীক্ষার পর ওই ল্যাব থেকে জানানো হয় পরীক্ষার ফলাফল। নমুনা প্রদানের মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে পরীক্ষায়ও সিলেটে সংকট দেখা দিয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর