× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঘরের ওপর পড়ে আছে সরকারি গাছ সন্তানদের নিয়ে স্কুলের বারান্দায় সাদেক

বাংলারজমিন

প্রতীক ওমর, বগুড়া/খালিদ হাসান শিবগঞ্জ থেকে
৪ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার

 আটদিন আগের কথা। ২৬শে মে রাতে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়। ঘুম ভেঙে যায় কৃষক সাদেক আলী এবং তার পরিবাদের সদস্যদের। ঘরের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে স্কুলের জায়গায় সরকারি বটগাছ। বাতাসের তীব্র গতি দেখে দ্রুত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান সাদেক আলী। কিছুক্ষণ পরে ওই বটগাছটি উপড়ে পড়ে সাদেক আলীর ঘরের ওপরে। ভেঙে তছনছ হয়ে যায় পুরো ঘর। সরকারি গাছ হওয়ার ফলে নিজ উদ্যোগে গাছটি সরাতে না পেরে দরিদ্র কৃষক সাদেক স্থানীয় প্রশাসনকে গাছটি সরানোর জন্য বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে অনুরোধ করেন।
এতে কাজ হয়নি। ফলে শিশু সন্তানদের নিয়ে পাশের স্কুলের বারান্দায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। সরজমিনে সাদেক আলী করুণ সুরে বলেন, ‘দয়া করে গাছটি সরানোর ব্যবস্থা করে দেন। শিশুদের নিয়ে ঘরে ফিরতে চাই। বাইরে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে’। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার আমজানী গ্রামে।
ঝড়ের পরদিন স্থানীয় কিছু সংবাদকর্মী ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বললে বন বিভাগ অতি দ্রুত গাছটি অপসারণ করবেন বলে আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু সে আসায় গুড়ে বালি। ঘটনার ৮ দিন পার হলেও সরজমিনে ওই গ্রামে গেলে বসতবাড়ির ওপর গাছটি পড়ে থাকতে দেখা যায় আগের মতোই। অসহায় পরিবারটি নিরুপায় হয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায়। শিশু সাহেদ, মনিরা ও জায়েদকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও সাদেক আলীর ছেলে মামুন মিয়া মানবজমিনকে জানান, গাছটি উপড়ে পড়ার সময় আমরা প্রাচীর টপকে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। পরনের কাপড় ছাড়া সঙ্গে কিছু নিতে পারিনি। এখন খোলা আকাশের নিচে স্ত্রী সন্তান ও গরু বাছুর নিয়ে খুব কষ্টে আছি। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর কাছে বলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং স্থানীয় দু’জন আওয়ামী লীগ নেতা আমাদের নিয়ে রাজনীতিতে মেতে উঠেছে। আমাদের কেউ সাহায্য যেন না করে সে জন্য তারা কাজ করছে। এ সময় তিনি বলেন, আমরা আমাদের ঘরে ফিরতে চাই। আপনারা দয়া করে গাছটি অপসারণ করে আমাদের বসবাসের ব্যবস্থা করে দিন। এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য পেয়েছেন কিনা প্রশ্ন করলে তিনি জানান, কিছুদিন আগে ১০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে কিছু ডাল পালা কেটে দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু গাছটি অপসারণের ন্যূনতম চেষ্টাও করা হয়নি। উপরন্তু গাছটি অপসারণ নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনীতি। এ ব্যাপারে ওই গ্রামের খোবাইব নামের একজন জানান, গাছটি অপসারণ নিয়ে দুটি পক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছে গাছ অপসারণে সাহায্যের জন্য স্কুলের সভাপতি ও মোকামতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান দুলা সরদারকে না বলে উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ রিজুকে বলায় গাছটি সরানো হচ্ছে না ।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ রিজু জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জেনেছি খুব শিগগিরই ইউএনওর মাধ্যমে গাছটি অপসারণ করা হবে। এ ব্যাপারে আমজানী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ফজলুর রহমান দুলা সরদার জানান, গাছটি অপসারণের জন্য ইউএনও বরাবর আবেদন করা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর কবির মানবজমিনকে জানান, সরকারি নিয়ম মেনে অতি দ্রুত গাছটি অপসারণ করা হবে। এ সময় দরিদ্র ওই পরিবারের বর্তমান মানবেতর অবস্থার কথা বললে ইউএনও বলেন, আমরা বিষয়টি জানি।

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর