× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জিপিএ-৫ কাঁদাচ্ছে মেধাবী তানিয়াকে

বাংলারজমিন

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা থেকে
৪ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার

এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও দারিদ্রতার কাছে হাড়মেনে হাসির পরিবর্তে কান্না সাথী হয়েছে এক মেধাবী ছাত্রীর। তার নাম তানিয়া খাতুন। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি অন্য রকম আগ্রহ। বাবা মায়ের নাম তৈয়ব আলী মন্টু ও আছিয়া খাতুন। বাবা পেশায় দিন মজুর। দারিদ্রতা বারবার তানিয়ার পড়া-লেখার প্রতিবন্ধিকতা তৈরী করলেও পিছু হাঁটেনি সে। অষ্টম শ্রেণীতে পেয়েছিলেন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি। লেখা-পড়ার পাশাপাশি বাড়ির পাশে পরচুলা তৈরীর কারখানায় কাজ করেন।
নিজের লেখা-পড়া, পোশাক আর হাত খরচের টাকা জুগিয়েছেন কাজ করে। দরিদ্র বাবার কাছ থেকে নেননি একটি টাকাও। উপরন্তু মাঝে মধ্যে পরিবারকে সহায়তা করেছেন তিনি। আর এভাবে নিজের মেধা, শ্রম আর অধ্যাবসায় দিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তানিয়া। কিন্তু অর্থাভাবে হয়তো এখানেই থামিয়ে দিতে হবে পড়া-লেখার পথচলা। সামাজিকতা রাখতে চাপে পরে সাজতে হবে হয়তো কিশোরী বধূ। অদম্য মেধাবী তানিয়ার লেখাপড়ার ইচ্ছে দারিদ্রতার হাত ধরে ছিকেয় তুলে রাখতে হবে। তাই জিপিএ-৫ পেয়েও কাঁদছেন তিনি।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চড়ইকোল গ্রামের দিনমজুর তৈয়ব আলী মন্টুর মেয়ে তানিয়া। চড়ইকোল উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট তানিয়া। বাবা তৈয়ব আলী কৃষিকাজ ও দিনমুজুরী করেন। মা গৃহিনী। বড় ভাই আতিকুর রহমান ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। ছোট ভাই সুজন হোসেন অটোভ্যান চালক। দুই ভাই বিয়ে করেছেন। সবাই একসাথে থাকলেও নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের। তাই প্রতিদিন সময় বের করে বাড়ির পাশে পরচুলার কারখানায় কাজ করে নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই চালিয়েছেন তানিয়া। কিন্তু এত কষ্ট করে ভাল ফলাফল করেও কান্না থামছে না তানিয়ার। লেখাপড়ার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে কুলহারা ভাসা পানার মতো নিজেকে অসহায়েত্বের সাঁড়িতে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। কারণ দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তার লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব নয়।

তানিয়ার সাথে কথা বলতেই চোখে ছলছল জল নিয়ে কষ্ট ভরা কন্ঠে তিনি জানান, রেজাল্ট নিয়ে কখনও টেনশন হয়নি তার। তিনি জানতেন জিপিএ-৫ পাবেন। ভবিষ্যতে বুয়েটে পড়াশোনা করে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। এজন্য এইচএসসিতে ভাল কলেজে পড়াশোনা করে ভাল রেজাল্ট করতে হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বড় বাঁধা দারিদ্রতা। টাকার অভাবে হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে লেখাপড়া। সেই ভেবে তাই জিপিএ-৫ পেয়েও দিনরাত কাঁদছেন তিনি। তানিয়া বলেন, রাজশাহীতে যেকোনো একটি ভাল কলেজে ভর্তি হওয়া ও প্রতিমাসের খরচ চালানোর সামর্থ আমার বাবা-মা ও ভাইদের নেই। তারা এত টাকা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। তাহলে কি আমার স্বপ্ন পূরণ হবে না? এখানেই আমার জীবন থেমে যাবে? বলেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন তানিয়া।

বাবা তৈয়ব আলী ও মা আছিয়া খাতুন বলেন, আমাদের সাধ আছে, কিন্তু সাধ্য নেই। সবার মতো স্বপ্ন আছে, কিন্তু স্বপ্ন পূরণের অর্থ নেই। আমরা চাই আমাদের মেয়ে অনেক বড় হোক, অনেকদূরে লেখাপাড়া করে মানুষের মত মানুষ হোক, কিন্ত তাকে পড়ানোর মতো টাকা নেই। বাড়িটুকু ছাড়া নেই কোনো জমি। এখন সরকার অথবা সমাজের বিত্তবান ও দয়ালু মানুষ যদি কেউ সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে।

চড়ইকোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস রঞ্জন তলাপাত্র বলেন, তানিয়া খুবই মেধাবী ছাত্রী। ভাল রেজাল্ট করা তার জেদ ছিল। তার ফল সে পেয়েছে। আমরা তাকে গর্ব করি। কিন্তু তার বাবা দরিদ্র হওয়ায় সে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করে এ পর্যন্ত এসেছে। এখন অর্থাভাবে তার লেখাপড়ার জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, এটা দু:খজনক। সরকার বা সমাজের বিত্তবান কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে তানিয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর