করোনা ভাইরাসের কাছে হার মানলেন অধ্যাপক এসএএম গোলাম কিবরিয়া (৭২)। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন।
ডা. কিবরিয়ার ভাতিজা নাজমুল করিস ভূঞা সুমন জানান, ঈদুল ফিতরের দিন থেকে তার জ্বরসহ করোনার একাধিক উপসর্গ দেখা দেয়। পরবর্তীতে নমুনা পরীক্ষার পর কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বুধবার দুপুরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তিনি আরো জানান, চাচার ফুসফুসে সংক্রমণের হার ছিল প্রকট। তাঁকে শতভাগ অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৫০ শতাংশের বেশি বাড়েনি।
ফেনী পৌরসভার ১০ নং কাউন্সিলর মাহতাব মুন্না নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, শুক্রবার সকাল ১০টায় ফেনী পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের মনির উদ্দিন ভূঞা দারোগা বাড়ির সামনে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। ফেনী বিএমএ’র সভাপতি ডা. সাহেদুল ইসলাম কাওসার জানান, ‘কিবরিয়া স্যার শুধু ডাক্তারই না, তিনি ডাক্তারদের শিক্ষক। বাংলাদেশের সার্জারি বিভাগের অনেক চিকিৎসকই তার ছাত্র। তিনি বাংলাদেশের একজন ‘সম্পদ, একইসাথে ফেনীর কৃতি সন্তান। ডা. কিবরিয়া রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইউরোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ডা. কিবরিয়ার ভাতিজা নাজমুল করিস ভূঞা সুমন পরিবারের বরাত দিয়ে আরো জানান, ১৯৪৮ সালে ফেনী পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ঐতিহ্যবাহী মনির উদ্দিন ভূঞা দারোগা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন ডা. এসএএম গোলাম কিবরিয়া। ১৯৭৩ সালে তিনি সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও ১৯৭৯ সালে এফসিপিএস সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সিলেট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইউরোলজিক্যাল সার্জনস এর প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ছিলেন একাধারে বাংলাদেশ জার্নাল অব ইউরোলজির সম্পাদক, সার্ক ইউরোলজি এবং নেফ্রোলজির কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ মেডিকেল কাউন্সিলের সদস্য, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জন (বিসিপিএস) এর পরীক্ষক কমিটির চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য, বিএমডিসির বর্তমান কমিটির চেয়ারম্যান।
অধ্যাপক ডা. এস.এ.এম. গোলাম কিবরিয়া দেশের মেডিকেল শিক্ষার উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান থাকাকালীন ইউরোলজি ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠদান কর্মসূচিতেও জড়িত ছিলেন এবং পাকিস্তানে এক্সটারনাল পরীক্ষক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। বাংলাদেশে প্রথম রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করা দলের একজনও ছিলেন ডা. গোলাম কিবরিয়া।
দেশ-বিদেশের একাধিক সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভারত ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার অংশ নিয়েছিলেন। ইউরোলজিতে তাঁকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগী করা হয়েছিল। দেশে ও দেশের বাইরে জার্নালে তার ৪০টি প্রকাশনা রয়েছে।