অনলাইন
সিলেটে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২০২০-০৬-০৫
সিলেটে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। বৃহস্পতিবার রাতে করোনা হাসপাতালেই মারা গেছেন ৩ জন। সব মিলিয়ে সিলেট বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ জন। সিলেট জেলাতেই ২৩ জন। উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে অনেকেই। কোনো হিসাব নেই কারো কাছে। বিনা চিকিৎসায়ও মারা যাচ্ছে মানুষ। হাসপাতাল ফিরিয়ে দিচ্ছে রোগী। করোনা সন্দেহে ভর্তি করছে না। এখন অনেকেই আবার হাসপাতালমুখী হতে চাচ্ছেনও। খোদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ। ক’দিন আগে এই হাসপাতালে অবহেলায় মারা গেলেন মৌলভীবাজারের বাসিন্দা ও সাবেক এক সিভিল সার্জন। ডাক্তার মেয়ে রাবেয়া বেগম ফেসবুকে আহাজারী করেছেন। গতকাল বিনা চিকিৎসায় মাার গেলেন সিলেটের পরিচিত ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন খোকা। পরিবারের আহাজারী চলছে। টাকা থাকলেও মিলছে না চিকিৎসা। অথচ সরকারের নির্দেশনা রয়েছে রোগী ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানালেন- এখন আর কেউই রোগী ফিরিয়ে দিতে পারবে না। টাকার বিনিময়ে বেসরকারি হাসপাতালও কভিড রোগীর চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। বেসরকারি হাসপাতাল শ্বাসকষ্টের রোগী দেখলেই দরোজা থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। কেউ বলছেন- জায়গা নেই। এ কারনে নির্ভরতার জায়গা হারিয়ে ফেলছেন সিলেটে মানুষ। সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে রোগীর জায়গা হচ্ছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী। মারা যাচ্ছেও। করোনা চিকিৎসার জন্য নতুন বেসরকারী হাসপাতাল এখনো নির্ধারিত হয়নি। নিজ উদ্যোগে করোনা আইসোলেশন সেন্টার খুলেছে সিলেটে নর্থইস্ট হাসপাতালও। সেখানেও পরিস্থিতি ভালো নয়। এরই মধ্যে উপসর্গ নিয়ে ৮ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ফলে যতই দিন যাচ্ছে সিলেটের করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। এদিকে- বেড়েই চলেছে রোগীর সংখ্যা। গত বৃহস্পতিবার এক দিনেই আক্রান্ত হলেন আরো ৬০ জন। এর মধ্যে দু’সাংবাদিকও। রয়েছেন চিকিৎসকরাও। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে- সিলেট বিভাগে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৬০ ও সুনামগঞ্জে ২৮ জন। বৃহস্পতিবার সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে ১৮৮ ও শাবিপ্রবির ল্যাবে আরও ১৮৮ জনের শরীরের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ওসমানীতে ৬০ ও শাবিতে ৩১ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। সিলেটের আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট মহানগর এলাকা, সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩২২। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৭৩৭, সুনামগঞ্জে ২৪৭, হবিগঞ্জে ১৯৪ ও মৌলভীবাজার জেলায় ১৪৪ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৫৫ করোনা রোগী। তার মধ্যে সিলেটে ৫৩, সুনামগঞ্জে ৭৫, হবিগঞ্জে ২২ ও মৌলভীবাজারে ৫ জন। এদিকে, সিলেট বিভাগে করোনামুক্ত হয়ে গতকাল সকাল পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরেছেন ৩৫৪ জন। এর মধ্যে সিলেটে ১০৭, সুনামগঞ্জে ৭৪, হবিগঞ্জে ১১৭ ও মৌলভীবাজারে ৫৬ জন। বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয় সিলেট-এর প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা গেছে, ১০ই মার্চ থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে ১৩২৯০ জনকে এবং কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ১১৭১৩ জনকে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে অবস্থান করছেন ১৫৭৭ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৬৩১, সুনামগঞ্জে ৪২৬, হবিগঞ্জে ১৮৬ ও মৌলভীবাজারে ৩৩৪ জন। এ পর্যন্ত হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনরত আছেন বিভাগের ২৫০ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৭৭, সুনামগঞ্জে ৩২, হবিগঞ্জে ১২০ ও মৌলভীবাজারে ২১ জন। তারা সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসাধীন।