করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) গুরুতরভাবে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন টাক মাথার পুরুষরা। সম্প্রতি এমন দাবির পক্ষে জোরালো প্রমাণ মিলছে গবেষণায়। প্রমাণের ভিত্তিতে টাক হওয়াকে করোনা ভাইরাসের জন্য একটি ঝুঁকির বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কিছু গবেষক। এই বৈশিষ্ট্যকে ডাকা হচ্ছে ‘গ্যাবরিন সাইন’ হিসেবে। সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়া প্রথম চিকিৎসক ডা. ফ্র্যাংক গ্যাবরিনের নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়েছে। গ্যাবরিন টাক ছিলেন। এ খবর দিয়েছে বৃটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।
টাক মাথার সঙ্গে করোনার ঝুঁকি বৃদ্ধি বিষয়ক গবেষণার প্রধান গবেষক কার্লস ওয়াম্বিয়ার বলেন, আমরা সত্যিই মনে করি টাক হওয়ার সঙ্গে করোনা জটিল আকার ধারণের সম্পর্ক রয়েছে। ওয়াম্বিয়ার ব্রাউন ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক।
ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর গত জানুয়ারি থেকে সংগৃহীত তথ্য বিবেচনায় দেখা গেছে, সাধারণ আক্রান্তদের তুলনায় টাক মাথার পুরুষরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বেশি। চলতি সপ্তাহে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মক্ষম পুরুষরা নারীদের তুলনায় বেশি মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন। এর আগেও বেশকিছু প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে। এতদিন বেশিরভাগ গবেষকদের ধারণা ছিল, নারী ও পুরুষের জীবনযাপনের ধরন, ধূমপান ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় তারতম্যের কারণে এমনটা হতে পারে। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের মধ্যে আরো একটি ধারণা প্রবল হয়ে উঠছে। সেটি হচ্ছে, পুরুষদের নানা ধরনের হরমোন, যেমন টেস্টোস্টেরন (সেক্স হরমোন)- কেবল মাথার চুল পড়ে যাওয়ার জন্যই দায়ী নয়, একইসঙ্গে এসব হরমোন করোনাকেও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। এমনটা হলে, চুল পড়ে যাওয়া বা প্রস্টেট ক্যানসারের যেসব চিকিৎসায় এসব হরমোনকে দমিয়ে রাখা হয়, সেসব চিকিৎসা করোনার ক্ষেত্রেও কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওয়াম্বিয়ার বলেন, আমরা মনে করি পুরুষদের হরমোন বা অ্যান্ড্রোজেনগুলোর মাধ্যমে ভাইরাসটি পুরুষদের কোষে প্রবেশ করে। ওয়াম্বিয়ার স্পেনে সম্প্রতি দুটি গবেষণা চালিয়ে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে ১২২ জন করোনা আক্রান্ত পুরুষের ওপর একটি গবেষণা চালানো হয়। তাদের মধ্যে ৭৯ শতাংশই ছিলেন টাক মাথার পুরুষ। এর আগে অপর একটি গবেষণায় ৪১ জন করোনা আক্রান্তের বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, তাদের মধ্যে ৭১ শতাংশই টাক মাথার। এদিকে, ইতালির ভেনিতোতে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রস্টেট ক্যানসারের যেসব রোগীরা, অ্যান্ড্রোজেনবিরোধী ওষুধ গ্রহণের মধ্যে ছিলেন, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাসকারী ওষুধ নিচ্ছিলেন তাদের মাত্র এক-চতুর্থাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।