কুমিল্লা মহানগরীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় ময়নাল হোসেন সাগর (৫১) নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপারেশন ও চিকিৎসা অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ এনে গত বুধবার (৩ জুন) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও সিভিল সার্জন বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ব্যবসায়ী ময়নালের হোসেনের ভায়রা ভাই ও নগরীর রানীর দিঘীর পাড় এলাকার বাসিন্দা জালাল আহমেদ। অভিযোগে নগরীর ঝাউতলাস্থ শহীদ সামছুল হক সড়কের কিডনী ল্যাপারস্কপি স্পেশালাইজড হসপিটাল ও তাছলিমা মেটার্নিটি এন্ড ফার্টিলিটি কেয়ার সেন্টারের মালিক পরিচয়দানকারী ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: এম.এম হাসানের বিরুদ্ধে চিকিৎসা অবহেলা জনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়। বিকালে অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াতুজ্জামান বলেন, ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ এনে মৃত হোসেনের এক স্বজন যে অভিযোগ করেছেন তা হাতে পেয়েছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, গত ১৭ মে জেলার বুড়িচং উপজেলার কাঁচারিতলা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ময়নাল হোসেন তার স্ত্রী ছালমা আক্তারকে নিয়ে তার ভায়রা ভাই দেবিদ্বারের জালালের আহমেদের কুমিল্লা নগরীর রানীর দিঘীরপাড়ের বাসায় আসেন। কিন্তু সেখানে ময়নাল হোসেন সাগর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে গত ১৯মে তাকে কুমিল্লা মহানগরীর ঝাউতলাস্থ কিডনী ল্যাপারস্কপি স্পেশালাইজড হসপিটাল ও তাছলিমা মেটার্নিটি এন্ড ফার্টিলিটি কেয়ার সেন্টারের ভর্তি করেন। সেখানে ওই হাসপাতালের মালিক পরিচয়দানকারী ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা: এম.এম হাসান কে দেখানোর পর তিনি ময়নাল হোসেনকে কিছু পরীক্ষার জন্য নির্দেশ দেন। পরে তিনি রিপোর্ট দেখে ময়নাল হোসেনের কিডনী ও মুত্র থলিতে পাথর থাকাসহ প্রশ্রাবের রাস্তায় মাংস বৃদ্ধির কথা জানান।
তাই জরুরীভাবে অপারেশন না করলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে আমাদেরকে নানা ভাবে ভয়-ভীতি দেখায়।
অভিযোগকারী জালাল জানান, রোগী ময়নাল হোসেনের ডায়াবেটিক সর্বশেষ রিপোর্ট ১৩ পয়েন্টের বিষয়টি পূনরায় ডাক্তার হাসানকে অবহিত করে এই সময়ে অপারেশন করা রোগীর জন্য ঝুকি কিংবা ঔষধে সমস্যা শেষ হবে কি না ? এমন কথায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘ডাক্তার আমি, নাকি আপনারা ? দ্রুত অপারেশন না করলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে বলে ডাক্তার জানায়। এতে আমরা অনেকটা নিরুপায় হয়েই অবৈধভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হতে মরিয়া ওই ডাক্তারের প্রস্তাবের ফাঁদে পড়ে বাধ্য হয়ে অপারেশনের করতে বলি। পরে ২২মে সেই হাসপাতালেই ময়নাল হোসেনের কিডনী, মুত্রথলীসহ ৩টি অপারেশন করা হয়। কিন্তু রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনহীন অবস্থায় ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন না করে এমন ভুল অপারেশনে রোগীর অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। রোগী নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে, এমন অবস্থা টের পেয়ে ও অবস্থা বেগতিক দেখে গত ২৪ মে রোগী আমার ভায়রা ভাইকে আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে কোন হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়ার জন্য রেফার্ড করে দিয়ে ১ লাখ টাকা বিল রেখে দ্রুত হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন দেখে আমরা ২৫ মে ময়নাল হোসেনকে ঢাকার ‘ ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লায় করা অস্ত্রপচারের স্থানে ইনফেকশন দেখা দিয়ে দ্রুত রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটে। ফলে গত ২৭ মে সেই হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও বলেন, উচ্চ মাত্রায় ডায়াবেটিক জেনেও অপারেশন করা, ওই হাসপাতালে আইসিইউ ও ভেন্টিলেশন সুবিধা না পাওয়া এবং অপারেশনের পর অপারেশনকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কর্তৃক ফলোআপ না করায় রোগীর ইনফেকশনসহ লাঞ্চে পানি এসে ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। মৃত ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী সালমা হক লিপি জানান, আমার স্বামী চিকিৎসা অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে। আমরা তাকে ঔষধ দিয়ে ব্যথা কমিয়ে রেখে পরে অপারেশনের কথা বললেও আমার স্বামীর মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে শরীরের ৩টি অপারেশন করে আমার স্বামীর মৃত্যু ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে।
এ বিষয়ে ডাক্তার এম.এম হাসান বলেন, ওই রোগীর ডায়াবেটিসর মাত্রা উঠা-নামা করছিল। অপারেশনের পর সে খুব ভাল ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে রোগীর অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়া ও আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন মনে করায় আমরা তাকে অন্যত্র নেয়ার সুপারিশ করেছিলাম। তিনি আরও বলেন, আমার হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা নেই জেনেই রোগী ময়নাল হোসেনের লোকজন তাকে এখানে ভর্তি করেছিল।