অনলাইন

জীববৈচিত্রের ক্ষতিসাধনের মূল্য দিচ্ছে পৃথিবী : প্রিন্স চার্লস

তানজির আহমেদ রাসেল

২০২০-০৬-০৫

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বৃটিশ রাজপরিবারের পরবর্তী উত্তরসূরী প্রিন্স চার্লস বলেছেন, জীববৈচিত্রের ক্ষতিসাধনের মূল্য দিচ্ছে পৃথিবী। কোভিড-১৯ মহামারির এই দুঃসময়ে মানুষের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্য সহানুভূতি প্রকাশের পাশাপাশি তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হয়ে আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্রের ঝুঁকি মোকাবেলা আর প্রকৃতিকে অবহেলা বন্ধ না করতে পারি তাহলে আমাদেরকে বিশ্বব্যাপী হয়তো আরও মহামারি দেখতে হবে। লকডাউনের শুরু থেকেই স্কটল্যান্ডের বার্কহিলে নিজের ব্যক্তিগত বাড়িতে স্ত্রীসহ অবস্থান করা প্রিন্স চার্লস ভিডিও কলে স্কাই নিউজের সাথে এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন।

জীববৈচিত্র রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রিন্স অব ওয়েলস বলেন, আমরা প্রকৃতির যত বেশী ক্ষতি করব, যতই জীববৈচিত্র ধ্বংস করব ততই আমরা করোনার মতো ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হবো। তিনি বলেন, অতীতে সার্স ও ইবোলার মতো ভয়াবহ ভাইরাসের প্রার্দুভাবও এই জীববৈচিত্রের ক্ষতির সাথে সম্পর্কিত।

রাজপরিবারের সদস্যদের সাথে তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে কথা বলার সীমাবদ্ধতা থাকলেও প্রিন্স চার্লস তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন স্কাই নিউজের সঙ্গে। খুব সহজেই করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ায় তিনি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করেন এবং স্বীকার করেন যে আর এটিই তাকে করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি থেকে মুক্তির বিষয় তথা পরিবেশগত এজেন্ডা এগিয়ে নিতে অনুপ্রাণিত করেছে । তিনি বলেন, যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অবস্থা আমি বুঝি কারণ আমিও এসবের মধ্যে দিয়ে গেছি।  আমি বিশেষভাবে তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন এবং এই কঠিন সময়ে তাদের কাছাকাছি থাকতে পারেননি, যা আমার জন্য ছিল খুবই ভয়ংকর। তিনি বলেন, মানুষ যাতে আর এই ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয় তার উপায় বের করতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই পৃথিবীকে এবং পৃথিবীর সবাইকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের তাগিদ দেন প্রিন্স চার্লস।  তিনি বিশ্বাস করেন কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে অর্থনীতি পুনরুদ্বারে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্ঠায় ‘গ্রীন রিকভারি’ (জলবায়ু নিরপেক্ষ, শক্তিশালী, টেকসই ও অংশগ্রহনমূলক একটি নতুন আর্থসামাজিক মডেল বা পলিসি ) নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই।  

প্রিন্স চার্লস জানান, জানুয়ারিতে তিনি দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে টেকসই বাজার কাউন্সিল বিষয়ে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন যার উদ্দেশ্য ছিলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশ রক্ষায় হাতে হাত রেখে কাজ করা। চলতি সপ্তাহে তিনি এই উদ্যোগটির নতুন একটি ধাপ শুরু করেছেন। লকডাউনে মোটেও সময় নষ্ট করছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সময় তিনি বিশ্বজুড়ে অনেক লোকের সাথে যোগাযোগ করে অনেক কিছু করতে সক্ষম হয়েছেন । লকডাউন চলাকালীন বিশ্বনেতারা কি কি চ্যালেঞ্জেরে মুখোমুখি হচ্ছেন এবং অর্থনীতি পুনরুদ্বার আর এর স্থায়িত্ব ধরে রাখা নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই ইস্যু নিয়ে বিশ্বনেতাদের সাথে যোগাযোগের অংশ হিসেবে তিনি ক্যারিবীয় অঞ্চলের নেতাদের সাথে কথা বলেছেন যারা অপরিসীম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তিনি সম্প্রতি সেন্ট লুসিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন যাদের পর্যটন খাতটি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে, তারা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এছাড়া  প্রতিবছর তাদের হারিকেনের ঝুঁকিও রয়েছে।
 
সাক্ষাতকারে প্রিন্স চার্লস স্বীকার করেন,  কোভিড-১৯ মানব ট্র্যাজেডির পাশাপাশি একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও।  আর এই সময় মানুষ একে অপরকে যে উল্লেখযোগ্য উপায়ে সাহায্য সহযোগিতা ও সমর্থন করেছে সেজন্য  তিনি তাঁর মায়ের মতোই সবার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জিং এই সময়ে মানুষের প্রচন্ড কষ্টের জন্য আমি তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করছি ।
 
জাতীয় স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি অন্যান্য সেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত  কর্মীদের প্রশংসা করে প্রিন্স চার্লস বলেন, আমি জানি প্রিয়জনদের হারিয়ে অনেক মানুষ উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। এটিই মহামারির সবচেয়ে ভয়ংকর দিক। এই সময় জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য জরুরী সেবার  ফ্রন্টলাইনের কর্মীরা জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবা দিয়ে সব কিছু সচল রেখেছেন, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। সবসময় সর্বোচ্চটুকু করার মাধ্যমে আগামীতে একটি সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশা করেন প্রিন্স চার্লস।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status