বগুড়ায় সাম্প্রতিক খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের আগের দিন থেকে ৫ই জুন পর্যন্ত ৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এসব খুনের ঘটনার মধ্যে রাজনৈতিক খুনও আছে। বিশেষ করে সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয় দু’জন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আধিপত্য এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বের জেরে এসব রাজনৈতিক খুন হয়েছে। এদিকে করোনার ভয়াবহতার মধ্যেই এভাবে একের পর এক খুনের ঘটনায় মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছে। গতকাল একদিনে দুই খুনের ঘটনা সবাইকে মর্মাহত করেছে।
যদিও পুলিশ প্রশাসন বলছে এ রকম খুনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। খুনিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তৎপর আছে।
৫ই জুন: জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আবু হানিফ খুন: বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হানিফ মিস্টার সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছে। পুলিশের ধারণা, মিস্টার নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে খুন হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, জুম্মার নামাজ আদায়ের জন্য আবু হানিফ মিস্টার বাড়ি থেকে শহরতলী এলাকায় শাকপালা মসজিদের উদ্দেশে রওনা হন। মসজিদের নিকটে আসা মাত্রই মোটরসাইকেলযোগে একদল দুর্বৃত্ত এসে তাকে এলোপাতাড়ি কুুপিয়ে গুরুতর জখম করে। স্থানীরা উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মিস্টার চারটি হত্যাসহ মোট ৯টি মামলার আসামি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। মিস্টার শাজাহানপুরের শাকপালা এলাকার আরমান হোসেনের ছেলে।
৫ জুন: ধর্ষণের পর পোশাককর্মী মীমকে গলা কেটে হত্যা: মীম আক্তার (১৯) নামের একজন পোশাককর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শাজাহানপুর উপজেলার গণ্ডগ্রাম বুড়িতলা এলাকায় মীম আক্তারের নিথর দেহ পড়ে ছিল। পুলিশের ধারণা ধর্ষণের পর হত্যা বৃহস্পতিবার মাঝ রাতের কোনো এক সময় তাকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের সময় তার মৃতদেহ শক্ত হয়ে ছিল।
নিহত মীম আক্তারের মা খায়রুন্নাহার জানান, এক বছর আগে বড় মেয়ে মীম চলে যান ঢাকার আশুলিয়ায়। সেখানে একটি গার্মেন্টে কাজ নিয়ে সংসারের হাল ধরেন। তখন পরিচয় হয় রংপুরের রিপনের সঙ্গে। দু’জনের সম্পর্ক গড়ে উঠলে ৫ মাস আগে বিয়ে হয় তাদের। কিন্তু বিয়ের পর রিপন স্ত্রীকে চাকরি করতে দিবে না। আর স্ত্রী মীম চাকরি করতে চান বগুড়ায় থাকা মা ও দুই ভাইকে সহযোগিতা করার জন্য। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে তাদের সংসার ভেঙে যায়। বুধবার (৩রা জুন) রিপন মীমকে তালাক দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়।
পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রংপুরগামী বাসে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দেন মীম। নিজের ফোনটি স্বামী কেড়ে নেয়ায় বাসের সুপারভাইজারের ফোনে মা খায়রুন্নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে মীম। রাত ১২টা পেরিয়ে গেলেও মেয়ে বাসায় না ফিরলে মা খায়রুন্নাহার ফোন দেন বাসের সুপারভাইজারকে। তিনি জানান, রাত ১২টার দিকে মীমকে বনানী মোড়ে বাস থেকে নামিয়ে রিকশায় তুলে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সারা রাতেও ফেরেনি মীম আক্তার। সকালে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
২৬শে মে যুবলীগ নেতা ফিরোজ খুন: দলীয় কোন্দলের জেরে ওইদিন খুন হয় ফিরোজ (৩০) নামের এক যুবলীগ নেতা। প্রকাশ্যে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি বগুড়া শহর যুবলীগের ৪ নং ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চকসূত্রাপুর চকরপাড়ার ফজলার রহমানের ছেলে। ২৬শে মে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শহরের জহুরুল নগর এলাকায় মাহী ছাত্রাবাসে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তার আরো দুই সহযোগী গুরুতর আহত হয়েছেন।
২৫শে মে বিটল নামের যুবককে পিটিয়ে হত্যা: এক গ্রামের যুবক অন্য গ্রামে আড্ডা দেয়ার জের ধরে বিটল (১৯) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে গ্রামবাসী। ২৫শে মে রাত ৮টার দিকে বগুড়া শহরের ২য় বাইপাস মহাসড়কের বাঁশবাড়িয়া নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বিটল বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আব্দুুল লতিফের ছেলে।
২৪শে মে ভাতিজার ছুরিকাঘাতে চাচা খুন: বগুড়ার শিবগঞ্জে দাদনের টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাতিজার ছুরিকাঘাতে চাচা শামীম (৩০) খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ভাতিজা রনি ও তার বাবা শাহিনুরকে আটক করেছে। ২৪শে মে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে উপজেলার বিহারপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শামীম বিহারপুর গ্রামের আকতার হোসেন ধলুর ছেলে।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর আছে। ইতিমধ্যেই বেশকিছু আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক আছে।