করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা ৮শ’ ছাড়িয়েছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যাও ৬০ হাজার অতিক্রম করেছে। গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮১১ জন। অন্যদিকে একই সময়ে ২ হাজার ৮২৮ জনের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজার ৩৯১ জন। নাসিমা সুলতানা জানান, ৫০টি ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৫টি।
এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ হাজার ৮৮টি। পরীক্ষা করা নমুনার মধ্যে ২ হাজার ৮২৮ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আরো ৩০ জনের মৃত্যু হয়। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮১১ জনে। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪৩ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজার ৮০৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, নতুন করে যারা মারা গেছেন তাদের ২৩ জন পুরুষ এবং সাতজন নারী। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভা?গে ১২ জন, সিলেট বিভাগে তিনজন, রাজশাহী বিভাগে দুজন এবং বরিশাল ও রংপুর বিভাগে একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ১৭ জন মারা গেছেন হাসপাতালে এবং বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। বয়সের দিক থেকে ত্রিশোর্ধ্ব তিনজন, চল্লিশোর্ধ্ব সাতজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১১ জন, ষাটোর্ধ্ব ছয়জন, সত্তরোর্ধ্ব দুজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের একজন মারা গেছেন।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার ভিত্তিতে শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৭ শতাংশ বলেও অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরো ৩৬৫ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ছয় হাজার ৯৪৬ জন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১৭৩ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন তিন হাজার ৮৪৭ জন। দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২।
নাসিমা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ২৪৫ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার ৪৩৩ জনকে। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৪৯৫ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৪০ হাজার ১১৪ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৫৭ হাজার ৩১৯ জন।
কোয়ারেন্টিনে প্রস্তুতির কথা জানিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ই মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। শুরুর দিকে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও এখন সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। ভাইরাসটি ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের পর ইরান, কোরিয়াসহ বেশকিছু দেশে সংক্রমণ ছড়ালেও সবচেয়ে বেশি করোনা আঘাত হানে ইতালি, স্পেনসহ ইউরোপের দেশগুলোতে। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রেও ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। করোনায় মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষেও রয়েছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (প্রতিবেদন লেখার সময়) ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪০৮ জন মানুষ। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ লাখ ১৪ হাজার ৩৩৫ জন । অন্যদিকে সুস্থ হয়েছেন ৩২ লাখ ৬১ হাজার ২৬৭ জন।