সরকারি গাছ বলে কথা। ঝড়ে উপড়ে পড়ে এক কৃষকের ঘরের ওপর। সপ্তাহ কেটে যায়, গাছ সরে না। ফলে অসহায় পরিবারটি পাশের একটি স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নেয়। ঘরে শিশুসন্তান নিয়ে অনেকটা মানবেতর ভাবে দিন কাটায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনকে একাধিকবার বলার পরও কারোই কোনো পদক্ষেপ ছিল না গাছ সরানোর। এ নিয়ে মানবজমিনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ৪ঠা জুন। তারপর টনক নড়ে প্রশাসনের।
এবার তড়িঘড়ি একদিনের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পছন্দের দরদাতার হাতে তুলে দেয়া হয় গাছটি। মূল্য লাখ টাকা হলেও বিক্রি হয়েছে মাত্র সাড়ে নয় হাজারে। বিষয়টি নিয়ে টানা অনুসন্ধানে উঠেছে নানা তথ্য।
বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা ইউনিয়নের আমজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ছিল গাছটি। স্থানীয়রা বলছেন, ওই গাছটি বয়স হবে প্রায় দেড় থেকে দুইশ’ বছর। গত ২৬শে মে ঘূর্ণিঝড়ে উপড়ে পড়ে সাদেক নামের এক কৃষকের ঘরের ওপর। টানা ১০ দিন পর হলেও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যায়নি প্রশাসন। পরে সংবাদ প্রকাশের পর তড়িঘড়ি করে একদিনেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রশাসন। দরপত্রের মাধ্যমে মোকামতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান দুলা সরদারের ছেলে আহসান হাবিব গাছটি কিনেছেন। তিনি শনিবার গাছটি কাটা শুরু করেছেন। এতে পুরাতন এই গাছটি মাত্র সাড়ে নয় হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এতো কম মূল্যে বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।
বিশাল আকারের এ গাছটির মূল্য কত হতে পারে তা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে মানবজমিন। অনুসন্ধানে গাছটির মূল্য ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা হবে এমন বক্তব্য পাওয়া গেছে সাধারণ মানুষের মুখ থেকে। ব্যবসায়ীরাও দিয়েছেন একই রকম বক্তব্য।
এ ব্যাপারে ওই এলাকার গাছ ব্যবসায়ী আবদুল হান্নান বলেন, গাছটির মূল্য আনুমানিক ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা হবে। পাকুরের এই গাছটি অনেক পুরাতন হওয়ায় এর কাঠও অনেক ভালো। প্রায় একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন, কাঠ ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান ও সাজু।
বিষয়টি নিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবির দৈনিক মানবজমিনকে জানান, গত বৃহস্পতিবার টেন্ডারের মাধমে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে গাছটি বিক্রয় করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে উপজেলা প্রশাসনের অফিস সহকারী (নাজির) মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, টেন্ডারে অংশ নেয়া ছয়জনের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম বলায় গাছটি ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির ছেলে আহসান হাবিবের কাছে সাড়ে নয় হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে এবং তিনদিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।