ঘাটতি মেটাতে ৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রাবাজেট ঘাটতি পূরণে ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা বিদেশী ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২৭ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা বেশি। চলতি বাজেটে (সংশোধিত) এ লক্ষ্য ছিল ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৬০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৮৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি পূরণে প্রতিবছরই দুইভাবে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। এর একটি হচ্ছে বৈদেশিক সহায়তা, অপরটি অভ্যন্তরীণ উৎস। অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়া হয়। নতুন অর্থবছরে (২০২০-২১) বিদেশি উৎস থেকে ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা এবং এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।
বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকাপ্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ব্যতীত ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই ঘাটতি ৫ শতাংশ। বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, ঘাটতি অর্থায়নে ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক অনুদান থেকে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে নেয়া হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগপ্রস্তাবিত বাজেটে ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরের ১লা জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। এ ছাড়া একই সময় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাগণ পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে, ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করলে, আয়করসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না।
মাথাপিছু বরাদ্দ বেড়েছে ২ হাজার ৭৭১ টাকাপ্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মাথা পিছু বরাদ্দ বেড়েছে ২ হাজার ৭৭১ টাকা। চলতি অর্থবছরে বেড়েছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মাথা পিছু ঘাটতি ১১ হাজার ৫০১ টাকা। চলতি বছর যা ছিল ৮ হাজার ৯৯০ টাকা। এ হিসাবে ঘাটতি বেড়েছে ২ হাজার ৫১১ টাকা। অন্যদিকে চলতি বছরে দেশের মানুষের মাথা পিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলার। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় এই পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার ২৬৫ টাকা। এ হিসাবে বাজেটে ব্যয় হচ্ছে আয়ের ২২ শতাংশেরও কম। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর তুলনায় যা একেবারেই সামান্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বরাদ্দ ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে মাথা পিছু বরাদ্দ ৩৫ হাজার ১২৬ টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে মাথাপিছু বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৩৫৫ টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে মাথা পিছু ঘাটতি ১১ হাজার ৫০১ টাকা। চলতি বছর মাথা পিছু ঘাটতি ছিল ৮ হাজার ৯৯০ টাকা। এ হিসাবে ঘাটতি বেড়েছে ২ হাজার ৫১১ টাকা। এছাড়া মাথা পিছু বার্ষিক উন্নয়ন বরাদ্দ কর্মসূচির বরাদ্দ ১২ হাজার ৬৮৬ টাকা। চলতি অর্থবছর যা ছিল ১২ হাজার ৩৩৬ টাকা।
ব্যাংকে টাকা রাখার খরচ বাড়ছেব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকার ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। ফলে যারা ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকার ওপরে রাখেন তাদের ব্যাংকে টাকার রাখার খরচ বাড়বে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে ও বিমান টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক আদায় করা হয়ে থাকে। এই আইনের প্রয়োগ সহজবোধ্য ও যুযোপযোগী করার লক্ষ্যে কতিপয় ধারা সংযোজন ও সংশোধনের প্রস্তাব করছি।
তবে, প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের স্থিতির ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক বর্তমানে যা আছে তাই রাখা হয়েছে। তবে ১০ লাখ টাকার বেশি থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতি থাকা ব্যাংক হিসাবের আবগারি শুল্ক দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ১ কোটি টাকার বেশি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ৫ কোটি টাকার বেশি স্থিতির ক্ষেত্রে আবগরি শুল্ক ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ব্যাংক থেকে সরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণনতুন অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে এবার ব্যাংক থেকে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার। যা গত বছরের প্রস্তাািবত বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী এই তথ্য জানান। গত বছরের বাজেটের (২০১৯-২০) ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনার কারণে রাজস্ব আদায়ে ধস নামায় ৩১ মে পর্যন্ত সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে ৬৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যা আগের অর্থবছরের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। তবে সংশোধিত বাজেটে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকারবিশাল অংকের বাজেট ঘাটতি মেটাতে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষমাত্র ছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেট পেশের সময় এই লক্ষ্যের কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
করপোরেট কর কমছেনতুন বাজেটে কর্পোরেট করহার কমছে। তৈরি পোশাক শিল্পে কর ছাড়ের মেয়াদও বাড়ছে। করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের অর্থনীতি থমকে পড়ার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কর্পোরেট কর কমানোর কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
পুঁজিবাজরে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার ২.৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি। মুস্তফা কামাল বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে করদাতাদের করভার লাঘব করার জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার ৩৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৩২.৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ৩৫ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতের কর ছাড়ের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ছে। মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমানে গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেশন আছে এরূপ তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের করহার ১০ শতাংশ এবং গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেশন আছে এরূপ তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের করহার ১২ শতাংশ। এই করহার সংক্রান্ত আরএসওর মেয়াদ ৩০শে জুন ২০২০ শেষ হবে। তা আরো দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করছি। তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানি পণ্যে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাবও করা হয়েছে বাজেটে। আশা করি তৈরি পোশাক খাত এত উপকৃত হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
পিপিই-মাস্কের দাম কমবে২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দেশে উৎপাদিত পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুয়েপমেন্ট (পিপিই) এবং সার্জিক্যাল মাস্কের (ফেস মাস্কসহ) উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় এ প্রস্তাব করেন। ফলে দেশে উৎপাতি পিপিই-মাস্কের দাম কমবে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের লক্ষ্যে কভিড-১৯ টেস্ট কিটের আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করছি। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দেশে উৎপাদিত পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুয়েপমেন্ট (পিপিই) এবং সার্জিক্যাল মাস্কের (ফেস মাস্কসহ) উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের জন্যও মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ নিরোধক ওষুধের আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি। পাশাপাশি বৈশ্বিক এই দুর্যোগকালে জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোবল অটুট রাখার স্বার্থে মেডিটেশন সেবার ওপর মূসক অব্যাহতি রাখার প্রস্তাব করছি।
সামাজিক নিরাপত্তায় ৯৬ হাজার কোটি টাকাআগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ আকার বাজেটের ১৬.৮৩ শতাংশ। আর মোট দেশজ উঁৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ৭৪ হাজার কোটি টাকা থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা করা হয়।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বলেছেন, করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য প্রবণ ১০০টি উপজেলায় সব দরিদ্র প্রবীণ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে ৫ লাখ নতুন উপকারভোগী যোগ হবে। এই উপজেলাগুলোর সব বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে নতুন যোগ হবে সাড়ে ৩ লাখ উপকারভোগী। এছাড়া নতুন করে ২ লাখ ৫৫ হাজার নতুনসহ মোট ১৮ লাখ অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেয়া হবে।
কার-জিপের রেজিস্ট্রেশন খরচ বাড়বেআগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিগত গাড়ি কার ও জিপের রেজিস্ট্রেশনে অগ্রিম আয়কর বাড়ানো হচ্ছে। এতে গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের খরচ বাড়বে। উত্থাপিত এই বাজেটে কার ও জিপের রেজিস্ট্রেশনসহ এই দুটি বাহনের ক্ষেত্রে বিআরটিএ প্রদত্ত অন্যান্য সার্ভিস ফির ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাজেটে চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়ার ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ। ফলে চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়া আরো বাড়ছে।
অনলাইনে আয়কর রিটার্নে ২ হাজার টাকা রেয়াতযেসব করদাতা প্রথমবারের মতো অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন তাদের জন্য ২ হাজার টাকা কর রেয়াত প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। সংসদে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় এ প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, আয়কর বিভাগের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের ওপর আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছি। আমি আশ করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আয়কর বিভাগে এ ট্রান্সফরমেশন সম্পন্ন করতে আমরা সক্ষম হবো। এবং এর ফলে সম্মানিত করদাতাগণ অতি সহজে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর প্রদান করতে পারবেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল এবং কর প্রদানের বিষয়টিকে জনপ্রিয় করার জন্য যেসব করদাতা প্রথমবারের মতো অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন তাদের ২ হাজার টাকা কর রেয়াত প্রদানের প্রস্তাব করছি। আমি আশা করি, সম্মানিত করদাতাগণ কর রেয়াতের এ সুযোগ গ্রহণ করে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে উৎসাহিত হবেন, যা আয়কর বিভাগের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।
বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়ছে২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বিড়ি ও সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট প্রতিবেদনে তিনি বলেন, সিগারেটের নিম্ন স্তরের ১০ শলাকার দাম ৩৯ টাকা ও তদুর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার দাম ৬৩ টাকা ও তদুর্ধ্ব, উচ্চ স্থরের ১০ শলাকার দাম ৯৭ টাকা ও তদুর্ধ্ব, অতি-উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১২৮ টাকা ও তদুর্ধ্ব এবং এই তিনটি স্তরের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যন্ত্রের সাহায্য ব্যতীত হাতে তৈরি ফিল্টার বিহীন বিড়ির ২৫ শলাকার দাম ১৪ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৮ টাকা, ১২ শলাকার দাম ৬.৭২ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৯ টাকা ও ৮ শলাকার দাম ৪.৪৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৬ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া ফিল্টার সংযুক্ত বিড়ির দাম ৮.৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৪০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি।
এ ছাড়া বাজেটে জর্দার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব রেখে তিনি বলেন, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার দাম ৪০ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের দাম ২০ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৫৫ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি। গত বছরের বাজেটেও এক দফা সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়।
বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে ৩১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাববাজেটে বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জ্বালানি খাতে দেশীয় গ্যাস আহরণের গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাকিটা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কোম্পানি, সেখানকার গঠিত তহবিল ও ঋণ থেকে আসবে। প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ২৭ হাজার ৫৯৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং জ্বালানিতে ৩ হাজার ১৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই দুই খাতে মোট প্রকল্প নেয়া হয়েছে ১১৭টি।
বিদ্যুৎ খাতে ২৭ হাজার ৫৯৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ দেবে ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা ৯৩ লাখ টাকা। ইসিএ বা এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির অর্থায়নে বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ২৭ হাজার ৫৯৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ দেবে ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৯৩ লাখ, ইসিএ ১ হাজার ৮৩৭ কোটি ৯৬ লাখ এবং নিজস্ব তহবিল থেকে আরও ৯৫৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে বর্তমান বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি বছর সংশোধিত বাজেটে ৪ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সেখানে আগামী অর্থ বছর বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা।