একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর রংপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে নেগেটিভ রিপোর্ট এলেও একই দিন মৃত্যুর আগে নেয়া নমুনা পরীক্ষায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ল্যাব থেকে করোনা পজিটিভ এসেছে। দু’টি ল্যাব থেকে দু’ধরনের রিপোর্ট নিয়ে তার পরিবারে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় পরিবারের সদস্যরা কোন রিপোর্ট সঠিক তা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে কাটাচ্ছে দিনরাত। গত রোববার ওই মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমে নেগেটিভ রিপোর্ট আসার জন্য অন্যান্য সদস্যদের নমুনা নেয়া হয়নি। জানা গেছে, পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আব্দুস সামাদ (৭৫) দীর্ঘ দিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। গত শনিবার রাতে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রংপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। অ্যাজমা রোগী আব্দুস সামাদের মাঝে মধ্যেই শ্বাসকষ্ট হতো।
গত বৃহস্পতিবার তার জ্বর ও কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট কিছুটা বেড়ে গেলে তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন। সেখানে দুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার সকালে তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া চিকিৎসকরা তার বুকের এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। পরে তার এক্স-রে প্রতিবেদনে ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিলে চিকিৎসকরা বিকালে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে পৌঁছানোর পর তাকে আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে চিকিৎসকরা তাকে রংপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) প্রেরণ করেন। পরে রাত আটটার দিকে সিএমএইচের আইসিইউ কক্ষে নেয়া মাত্রই তার মৃত্যু হয়। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানান, সংস্পর্শে আসার জন্য ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের বর্তমানে লকডাউন করে রাখা হয়েছে। এদিকে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা পঞ্চগড় জেলায় বেড়ে চলেছে। নমুনার রিপোর্ট আসা পর্যন্ত লোকজন মুক্তভাবে সর্বত্র চলাচলের পাশাপাশি পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে অনেক দেরি হওয়ার কারণে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে সচেতন মহল মনে করছে। রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার জন্য পিসিআর ল্যাবের সংখ্যা মাত্র দু’টি। এর একটি রংপুর মেডিকেল কলেজ ও অপরটি হলো দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ। ল্যাব দুটিতে নমুনা পাঠানোর পর ফলাফল আসতে সময় লাগছে ৮ থেকে ১০ দিন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফলাফল আসতে আরো দেরি হচ্ছে।
যাদের নমুনা নেয়া হয়েছে তাদেরকে চলাচলের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা হচ্ছে না বা থাকছে না।
এরা অবাদে সর্বত্র চলাচল করাসহ লোকজনদের সঙ্গে মেলামেশা করছে। এতে সুস্থ লোকজন সংক্রমিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, শিক্ষক, ছাত্র, স্বাস্থ্য কর্মী, সমাজ সেবার লোকজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্তদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১?? জনে। সাধারণ ছুটির সময় ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজনদের মধ্যে কেউ কেউ করোনায় সংক্রমিত হয়ে পঞ্চগড় জেলার নিজ বাড়িতে আসে। এরপর করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। করোনায় আক্রান্ত পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সমাজ সেবা বিভাগের অফিস সহকারী হাফিজুর রহমান বলেন, আমাকে কেউ বলেনি যে, নমুনা দিয়ে কোথাও যাওয়া যাবেনা। অফিসের কাজে আমাকে সরকারি, রাজনৈতিক নেতা সহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে কথা বলতে হয়েছে। এদিকে, পঞ্চগড় জেলার বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেনা। অনেককে মুখের নিচে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। এ অবস্থায় সংক্রামণের হার দ্রুত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. ফজলুর রহমান বলেন, কেউ নিষেধ মানছেনা। করোনায় আক্রান্ত লোকজন অবাদে চলাচল করলে সুস্থ মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। ল্যাবের সংখ্যা মাত্র দুটি হওয়ায় নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে দেরি হচ্ছে। আক্রান্ত লোকজনদের স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর আগে আমরা যে তার নমুনা সংগ্রহ করেছি তাতে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তবে মৃত্যুর পরে রংপুরে তার যে নমুনা নেয়া হয়েছিল সে পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। তবে আমাদের পরীক্ষায় পজিটিভ এসেছে। এটাকেই আমরা সঠিক হিসেবে ধরছি। মৃত্যুর পর অনেক সময় পরীক্ষায় নেগেটিভ আসতেও পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে যাকে আমরা ফলস নেগেটিভ হিসেবে ধরে থাকি।