× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

“চাই একটু মানসিক প্রশান্তি”

মত-মতান্তর

সৈয়দ আশিক মোহাম্মদ
২১ জুন ২০২০, রবিবার

এক অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা প্রতিদিন। কেউ বলতে পারব না আগামীকাল কি হবে আমাদের জীবনে? আমরা স্বীকার করি আর নাইবা করি, আমাদের সকলের মধ্যে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা ও মানসিক অশান্তি কাজ করছে। প্রতিটি দিন আমাদেরকে পার করতে হচ্ছে এক ধরনের অবশাদ ও প্রতিবন্ধকতার ভিতর দিয়ে। হটাৎ করে মনে হচ্ছে জীবন এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলছে। সব সময় কি যেন এক অজানা ভয় মনের মধ্যে বাসা বেঁধে আছে। করোনা বা কোভিড-১৯ নিয়ে অনেক রকম পরামর্শ বা করনীয় আমরা সবাই ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছি। কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে হবে তা এরই মধ্যে আমাদের সকলেরই জানা হয়ে গিয়েছে। ডঐঙ বা আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ বা আইইডিসিআর প্রতিনিয়ত আমাদেরকে এ ব্যপারে যথাযথ পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছে।
কিন্তু এত কিছুর পরও আমরা মানসিক ভাবে কতটা স্বস্তিতে আছি সেটা এক বিরাট প্রশ্ন?
আমাদের মানসিক শান্তি যেন উড়ে গেছে এই করোনা কালে। বিশেষ করে ৮ই মার্চের পর থেকে যখন আমাদের দেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হল, তখন থেকে যেন সব সময় আমরা করোনা আতঙ্কে অস্থির হয়ে আছি। আমরা যেন একটি মুহূর্তের জন্য করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে আড়াল করতে পারছি না। আমাদের চারপাশে এই করোনাভাইরাস এক বলয় তৈরি করে রেখেছে আর আমরা সেই বলয়ে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেছি। তাই গত ডিসেম্বর ২০১৯ এর পর  থেকে সারা বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত শব্দ এই করোনা আজ আমাদের জন্য এক ভয়াবহ আতংকই নয়, এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন মৃত্যু সংবাদ আর আক্রান্তরোগীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত দূর্বল করে দিচ্ছে। আমরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এক চরমতম সময়ের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করছি।
এখন আমাদের দরকার এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি। আর এই মানসিক প্রশান্তি চাইলেই পাওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন শক্ত মনোবল এবং নিজেকে দৃঢ় প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলা। করোনার প্রথম দুই মাসে আমাদেরকে সাধারণ ছুটির মধ্যে দিয়ে কাটাতে হয়েছে যা ছিল অন্যরকম এক যুদ্ধ। এখন আমরা অতিক্রম করছি আরেক স্তরের যুদ্ধে যেখানে জীবন ও জীবিকা সচল রাখতে আমাদেরকে কাজ ও করে যেতে হচ্ছে। রয়েছে যেমন এক দিকে জীবন বিপন্ন হওয়ার ভয়, আবার অন্যদিকে এই জীবন ও জীবিকার সন্ধানের যুদ্ধে সামিল হওয়া। এই এক মিশ্র অবস্থার মধ্যে আমদেরকে এখন যেতে হচ্ছে সামনের দিকে। কারণ জীবন থেমে থাকার নয়। আমরা সকলে জানি যে এই কঠিন সময় একদিন শেষ হবে। সামনে আসবে সোনালী দিন, যেখানে আবার আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাব।
আমাদের কেবল মাত্র প্রয়োজন এই কঠিন সময়টা অতিক্রম করা। আমাদের যেমন প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিধি মেনে এই অজানা ভাইরাসের মোকাবেলা করতে হবে, ঠিক তেমনি মানসিক প্রশান্তি অর্জনের মাধ্যমে এই করোনাকাল অতিক্রম করতে হবে। মানসিক প্রশান্তি লাভের জন্য মানসিক দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থাকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। এজন্য নিয়মিত ধর্মীয় চর্চার পাশাপাশি ধ্যান বা মেডিটেশন করা যেতে পারে। ভালো বই পড়া, ভালো কোন সিনেমা দেখা আমাদের জন্য অনেক ভালো সহায়ক হতে পারে। প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি নিয়ম করে কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা বা ঘরের ভিতরে হাল্কা ব্যায়াম করা যেতে পারে, যা কিনা আমাদের মনকে চাঙ্গা রেখে মানসিক প্রশান্তি বাড়াতে পারে। সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন নিজের মনকে ব্যন্ত রাখা। নানা ধরনের সখের কাজ করেও নিজের মনকে প্রফুল্ল রাখা যায়। বাগান করা, গল্প-কবিতা পড়া বা লেখা, নিজের প্রিয় কোন খাবার রান্না করা, ঘর সাজানো এসব নানাবিধ কাজের মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়।
মনে রাখতে হবে ভয় বা আতঙ্ক মনকে অবশাদগ্রস্থ করে তোলে। কাজেই এই সময় ভয় বা আতঙ্ক মনে জায়গা দেওয়া চলবে না। মনের সাহস ও দৃঢ় মনোবল আমাদের অনেক সময় কঠিন কাজকেও সহজ করে দেয়। আর কোন ভাবেই এই সময় নেতিবাচক কোন চিন্তা করা চলবে না। নেতিবাচক চিন্তা আমাদের মনকে ক্রমশ দূর্বল করে তোলে। সর্বদা পজিটিভ চিন্তা চেতনার মাধ্যমে এই কঠিন সময়কে অতিক্রম করতে পারাই হবে এখনকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যা এখন আমাদের সকলকের অনুশীলন করা প্রয়োজন। তাই আসুন আগামী সুন্দর সকালের চিন্ত মাথায় নিয়ে আমরা এই করোনা কালের কোভিড-১৯ যুদ্ধে লিপ্ত থেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে এই প্রার্থনা করি যেন অচিরেই নতুন সূর্য উঠে আর আমরা সেই নতুন সূর্যের আলোয় গা ভিজিয়ে প্রশান্তির শ্বাস নিতে পারি।

ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন।
লেখকঃ সৈয়দ আশিক মোহাম্মদ।
গ্রিনরোড, ঢাকা
জুন ২০, ২০২০।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর