করোনার ‘হটস্পট’ সিলেট। গত ১৫ দিন ধরে একই অবস্থা। এর মধ্যে রোগী বাড়ছেও। সিলেটে আগে চলছে করোনা। পেছনে ছুটছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ কারণে করোনার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। সর্বশেষ সিলেটের ১৯ ওয়ার্ডকে রেড জোনে তালিকাভুক্ত করেছিলো স্বাস্থ্য বিভাগ। বিষয়টি জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে।
এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। লকডাউনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না আসায় অস্বস্তিও বাড়ছে। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রস্তুত। তিনিও চান লকডাউন। এরপরও সিলেটকে বাদ দিয়ে লকডাউনের তালিকায় নেয়া হয়েছে বিভাগের অপর তিন জেলাকে। এ নিয়ে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন অনেকেই। সিলেটে করোনা কেড়ে নিলো সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। ডাক্তার মঈন উদ্দিন, সিনিয়র ব্রাদার রুহুল আমীন আরো অনেককেই। করোনায় গতকাল পর্যন্ত সিলেট জেলাতে মারা গেলেন ৪৬ জন। মৃত্যুর মিছিল চলছে সিলেটে। আক্রান্তের হারও বেশি। গোটা বিভাগে করোনায় আক্রান্ত ৩৪৪৪ জন। এর মধ্যে শুধু সিলেট জেলায় আক্রান্ত ১৮৭৭ জন। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে সিলেটের অবস্থা ভালো না। করোনা গ্রাস করেছে সিলেটে। অনেক আগেই ঘটেছে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। গত তিনদিনে গড়ে ১২০ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন সিলেটে। এই অবস্থায় সিলেটে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। স্বস্তি নেই কোথাও। চিকিৎসা নিয়েও চলছে টালবাহানা। টাকার অভাবের কারণে বেসরকারি হাসপাতালে অনেকেই চিকিৎসা নিতে পারছে না। এ জন্য মানুষ ছুটছে সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সিলেটের করোনার একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে রোগী ভর্তির জায়গা নেই। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ১০০ শয্যার হাসপাতাল প্রায় রোগীতে ভর্তি। এখন সুস্থ হওয়া রোগীদের ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতালের আসন খালি করে চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখছেন। এদিকে সিলেটে করোনা চিকিৎসার জন্য সরকারি ভাবে দুটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই দুটি হাসপাতাল হচ্ছে খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দুটি হাসপাতালে সব মিলিয়ে ৮০ জন রোগী ভর্তি করা যাবে। প্রায় ১০ দিন ধরে এ দুটি হাসপাতালের প্রস্তুতির কথা শুনলেও এখনো রোগী ভর্তি করার উপযোগী না। প্রবাসীদের সাহায্যে দুটি হাসপাতালে অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা নিয়ে স্বস্তিতে নেই সিলেটবাসী। দুটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এ দুটি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য অনেক রোগী বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেও পরে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ খুঁজছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন- সিলেটে হাসপাতাল সংকট দেখা দেবে না। এর কারণ, খুব দ্রুতই সিলেটে দুটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দুটি হাসপাতাল প্রস্তুত হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, সিলেটে শামসুদ্দিন হাসপাতালে ১০০ জন রোগীর জায়গা হবে। এর মধ্যে একজন রোগী বেড়ে গেলে তাকে প্রস্তুত করা দুটি হাসপাতালে নেয়া হবে। এটা সমন্বয় করা হচ্ছে। কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের ভর্তি করা হবে ওই সব হাসপাতালে। দুটি হাসপাতালে অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। সুতরাং রোগীরা যাতে চিকিৎসা পায় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে লকডাউন নিয়ে সিলেটে নানা নাটক হয়েছে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছিলেন- তিনি লকডাউনের জন্য প্রস্তুত। যে কোনো সময় লকডাউন ঘোষণা করা হলে তারা কার্যকর করতে পারবেন। স্বাস্থ্য বিভাগও রেড জোন ঘোষণা করে তালিকায় ঢাকায় পাঠিয়েছে। এরপরও অদৃশ্য কারণে সিলেটের রেড জোনে লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে না। সমস্যা হয়েছে অন্য জায়গায়। সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের মতে নগরীর প্রায় ৮০ ভাগ এলাকাই হচ্ছে রেড জোন। সুতরাং এই এলাকাগুলোতে লকডাউন করলে ২০ ভাগ এলাকা এমনিতেই লকডাউন হয়ে যাবে। এ কারণে তারা নগরীর উত্তর অংশের পুরোটা এবং দক্ষিণ অংশের ২৭ নং ওয়ার্ডকে লকডাউন করতে চাইছে। প্রশাসন চাইছে পাড়া বা মহল্লা ভিত্তিক ভেঙে ভেঙে লকডাউন করতে। এতে করে জীবনযাত্রা কিছুটা হলেও স্বাভাবিক থাকবে। এ কারণে লকডাউনের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের উপরেই সিদ্ধান্ত সমঝে দেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন সেটিই পালন করবে। এদিকে শনিবার সিলেটের সংস্কৃতি কর্মীরা সুধীজনকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে সভা করেছিলেন। ওই সভা থেকে সিলেটে লকডাউন কার্যকরের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু জানিয়েছেন, সিলেটের মানুষের দাবি হচ্ছে বিনা চিকিৎসায় যাতে কেউ মারা না যায়, পরীক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও করোনার লাগাম টেনে ধরতে লকডাউন ঘোষণা করা। এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে মনে করেন তিনি।