বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মরণঘাতী করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করেছে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাণী দেহে সফলভাবে প্রয়োগ করার তথ্য দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী এই প্রতিষ্ঠানটি গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, এখন প্রাণীদেহে নিয়মিত পরীক্ষা শুরু করবে তারা। তারপর মানবদেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। সফল হলে আর সরকারি অনুমোদন পেলে ৫০ থেকে ৭০ লাখ ভ্যাকসিন উৎপাদন করার সক্ষমতা আছে প্রতিষ্ঠানটির। সব পর্যায় ঠিকঠাক পেরোতে পারলে আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিনটি বাজারে আনার চেষ্টায় আছে গ্লোব বায়োটেক। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৮ই মার্চ করনোরা টিকা আবিস্কারে কাজ শুরুর থেকে এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সাফল্য মেলে।
সংবাদ সম্মেলনে গ্লোব বায়োটেকে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন, ৮ই মার্চ থেকে এই পরীক্ষা শুরু হয়।
কাজ শুরু করার পর প্রাথমিকভাবে এটা নিয়ে সফল হয়েছি। এনিমেল মডেলে এটা সফল হয়েছে। এ পর্যায়ে ভ্যাকসিনটি দ্বিতীয় ধাপে এনিমেল মডেলে ট্রায়াল করা হবে। এজন্য ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগবে। এরপরই এটি মানব শরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাওয়া যাবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে এখন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কাছে যাব। এরপর তাদের দেয়া গাইডলাইন অনুযায়ী পরবর্তী ধাপগুলো সম্পন্ন করবো।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড এর চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশীদ বলেন, আজ আমাদের জন্য একটা বিশেষ দিন। বাংলাদেশ যে নিজস্ব টেকনোলজিতে ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করবে বা চিন্তা করবে এটা বিশ্বের অনেক দেশ আগে বিশ্বাস করতো না। এখন করতে হয় কারণ গ্লোব বায়োটেকের নাম এখন ছড়িয়ে পড়েছে। আমার স্বপ্নটা দীর্ঘ। এমন জিনিস আবিস্কার করে রেখে যাবো, যাতে আমি মরে যাওয়ার পড়েও মানুষের উপকারে আসবে। শুধু ব্যবসার কথা চিন্তা করে নয়, দেশের জন্য কিছু একটা করার জন্যই আমরা নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারা বিশ্বের মানুষ বিপর্যস্ত। তাই অন্য দেশের আশায় বসে না থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে আমরা আমাদের নিয়মিত গবেষণার পাশাপাশি কভিড-১৯ রোগ শনাক্তকরণ কিট, টিকা ও ওষুধ তৈরি সংক্রান্ত গবেষণাকর্ম শুরু করেছি। আমাদের এই ভ্যাকসিন সফল হলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় যেমন হবে, তেমনি দেশের মানুষ সাশ্রয়ে মানসম্মত সেবা পাবে। এখন দেশ এবং দেশের মানুষের উপকারে আসতে পারলেই আমাদের সার্থকতা। আমরা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আমাদের গবেষণা কেন্দ্রে প্রাণীর ওপর প্রাথমিক ট্রায়াল করেছি। বর্তমানে গ্লোব বায়োটেকের তেজগাঁওয়ের ল্যাবে বাকি কাজ চলছে। এর আগে ১লা জুলাই প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে, তারা পশুর শরীরে এই ভ্যাকসিনের সফলতা পেয়েছেন। মানবদেহেও এর সফলতা পাওয়া সম্ভব বলে আশা করছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেজ অনুযায়ী ৩০শে জুন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৫,৭৪৩টি সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স জমা হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জমা হয়েছে ৭৬টি। এসব সিকোয়েন্স বায়োইনফরম্যাটিক্স টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে আমরা আমাদের টিকার টার্গেট নিশ্চিত করেছি। যা যৌক্তিকভাবে এই ভৌগোলিক অঞ্চলে অধিকতর কার্যকরী হবে বলে আশা করছি। এই টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকোয়েন্স যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেজে জমা দিয়েছি। যা ইতোমধ্যেই এনসিবিআই স্বীকৃতি দিয়েছে এবং প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের গবেষণাগারে আবিষ্কৃত টীকাটির বিশদ বিশ্লেষণের পর ল্যাবরেটরি অ্যানিমেল মডেলে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে যথাযথ এন্টিবডি তৈরিতে সন্তোষজনক ফলাফল পেয়েছি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের এই ভ্যাকসিনের আবিষ্কারে সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন প্রতিষ্ঠানের সিইও ড. কাকন নাগ এবং সিওও ড. নাজনীন সুলতানা।